দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ বিজেপি সরকারের অধীনে, ভারতের দিকে চোখ তুলে তাকানোর ক্ষমতাও কারও নেই। সোমবার (১০ এপ্রিল), চিন সীমান্তের একেবারে পাশে দাঁড়িয়ে এমনই হুঙ্কার দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
‘ভাইব্রেন্ট ভিলেজ’ প্রকল্পের সূচনা করতে দুই দিনের অরুণাচল প্রদেশ সফরে এসেছেন অমিত শাহ। তীব্র আপত্তির জানিয়েছে চিন। বেজিং-এর মতে অমিত শাহ-এর সফর তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত। তার মধ্যেই এদিন অরুণাচলের চিন সীমান্তবর্তী গ্রাম কিবিথুতে এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আজ, আমরা গর্ব করে বলতে পারি যে, আমাদের দিকে খারাপ দৃষ্টি দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা কারও নেই। কেউ আমাদের এক ইঞ্চি জমিও নিতে পারবে না।”
চিনের আপত্তি উড়িয়ে বর্তমানে অরুণাচল প্রদেশ সফরে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ সোমবার বেজিংয়ের উদ্দেশে হুঙ্কার দেন তিনি। বলেন, “ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। কেউ আমাদের সূচ্যগ্র ভূমিও দখল করতে পারবে না।”
অরুণাচল প্রদেশের ১১ টি জায়গায় নাম নিজের মতো করে বদলে দিয়েছিল চিন। যে ঘটনা দিল্লি একেবারেই মেনে নেয়নি। এরপরই অরুণাচল প্রদেশে গিয়ে চিনকে কার্যত নাম না করে হুঁশিয়ারি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘আগে যে কেউ ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ এবং জবরদখল করতে পারত। এখন ভারতীয় সূচ্যগ্র ভূখণ্ডও কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’’
সোমবারই দুদিনের সফরে অরুণাচলপ্রদেশে গিয়েছেন শাহ। ভারত সরকারের ভাইব্রান্ট বর্ডার প্রকল্পের কাজ পর্যালোচনা করাই তাঁর সফরের উদ্দেশ্য। সীমান্তে যাবতীয় উন্নয়নের কাজ তদারক করে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অরুণাচল সফর নিয়ে আপত্তি তুলেছে চিন । সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অরুণাচল সফর তাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করেছে।
তারই জবাবে শাহ বলেছেন, “২০১৪ সালের আগে সমগ্র উত্তর-পূর্ব একটি অশান্ত অঞ্চল হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু গত ৯ বছরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘লুক ইস্ট’ নীতির কারণে উত্তর-পূর্ব এখন এমন এক অঞ্চল, যা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে।” নিজের বক্তব্যে ইন্দো-তিব্বত পুলিশ এবং সেনার ভূয়সী প্রশংসা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, “পুরো দেশ আজ শান্তিতে ঘুমাতে পারে, কারণ আমাদের আইটিবিপি জওয়ান এবং সেনাবাহিনী সীমান্তে দিনরাত কাজ করছে। আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের দিকে খারাপ নজর দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারও।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামগুলির উন্নতিকল্পে “ভাইব্রেন্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম”-এ ৪,৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। এই সূত্রেই অরুণাচল, সিকিম, উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশের ১৯টি জেলার ৪৬টি ব্লকের ২৯৬৭টি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত চিন সীমান্ত সংলগ্ন প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই কেন্দ্রের লক্ষ্য।
সেই সূত্রেই অমিত শাহের অরুণাচল সফর। কেন্দ্র এখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলের উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চায়।
#WATCH | The entire country can sleep peacefully in their homes today because our ITBP jawans & Army is working day & night on our borders. Today, we can proudly say that no one has the power to cast an evil eye on us: Union Home Minister Amit Shah in Kibithoo, Arunachal Pradesh pic.twitter.com/WNJra9iFuq
— ANI (@ANI) April 10, 2023
বস্তুত অরুণাচলের ওই সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতেই নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে চিন। সীমান্ত বরাবর চার জায়গায় সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করতে দেখা গিয়েছে চিনের বাহিনীকে। ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে আসাফিলা, টুটিং অ্যাক্সিস, চ্যাং জ়ি ও ফিসটেল-২ সেক্টরে সেনা মোতায়েন করতে দেখা গেছে চিনকে। পাশাপাশি নিজেদের মানচিত্রে অরুণাচলের ১১টি জায়গার নামও বদলে দিয়েছে চিন। চিনা মানচিত্রে অরুণাচলের ওই জায়গাগুলির নাম মান্দারিনের হরফে লেখা হয়েছে। দুটি সমতল এলাকা, দুটি আবাসিক এলাকা, পাঁচটি পর্বতশৃঙ্গ এবং দুটি নদীর নামকরণ করেছে চিন।
নাম পরিবর্তন করে অরুণাচল প্রদেশ তাদের এলাকা বলে দাবি জানানোর চিনা প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের বলেছেন, “এটি ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর চিনা দাবি জানানোর আরেকটি প্রচেষ্টা। দীর্ঘদিন ধরেই ওই অঞ্চলটিকে ভারতের বলে স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমরা স্থানীয় নাম পরিবর্তন করে অঞ্চলটির উপর চিনা দাবি জানানোর একতরফা প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছি।”