দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ৪১ জন তৃণমূল নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিল পুলিশ। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের ৪১ জন নেতাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। যা এবার তুলে নিল ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বেশ কয়েকটি পুরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর, ভাইস চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যানের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি তালিকাভুক্ত জনপ্রতিনিধিদের একটা বড় অংশই।
এই ৪১ জন কেউই খুব বড় মাপের নেতা বা নেত্রী নন। তাঁরা পুরসভার চেয়ারম্যান, কেউ বা কাউন্সিলর। কেউ বা প্রাক্তন বিধায়ক বা তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। এতদিন ধরে একজন করে পুলিশ কর্মীকে এই সব নেতানেত্রীর নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। রবিবার রাতে পুলিশের উপরতলা থেকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই সব পুলিশ কর্মীকে ব্যারাকপুর পুলিশ লাইনে রিপোর্ট করতে হবে।
সরকারি ওই নির্দেশ ভাল করে দেখলে বোঝা যাবে এই ৪১ জন নেতার অধিকাংশই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের নেতা বা নেত্রী। আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক ও জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর মতো হাতেগোণা কয়েকজন বাইরের নেতার নাম তালিকায় থাকলেও দেখা যাবে, তাঁদের বসতবাড়ির ঠিকানা উত্তর ২৪ পরগনা।
তালিকায় নাম রয়েছে নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্য়ায়, নৈহাটির কাউন্সিলর সনৎ দে, বীজপুরের আলোরানি সরকার, নোয়াপাড়ার তৃণমূল নেতা সুনীল সিং, অর্জুন সিংয়ের ভাইপো সৌরভ সিং, উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস, জগদ্দলের প্রাক্তন বিধায়ক পরশ দত্ত।
পুলিশের নিরাপত্তা তুলে নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন অনেক কাউন্সিলরই। তালিকায় থাকা ভাটপাড়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যেন রায় জানান, “পুলিশ নিরাপত্তা তুললে সবারটাই তোলা হোক। কেন শুধু আমাদেরটা তোলা হবে? নিরাপত্তা নেই বলে তো বাড়ির লোকজন বাইরে বেরোতে না করছেন। দল করতে গিয়ে হাত ভেঙেছে আমাদের, পা ভেঙেছে। আর যারা বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসেছে, তাদের সাতটা করে সিকিউরিটি।” হালিশহর পুরসভার কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাসেরও নাম রয়েছে এই তালিকায়। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি তাঁরও।
এই নিরাপত্তা তুলে নেওয়া নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, অর্জুন সিংয়ের ‘ঘরওয়াপসি’র পরই কি এমন সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন? যদিও এ তত্ত্ব মানতে নারাজ সুবোধ। তাঁর দাবি, এখানে দলের কোনও বিষয়ই নেই। পুরোটাই প্রশাসনিক বিষয়। দল একদিকে, প্রশাসন একদিকে। কারও নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে নয় বলেই নিরাপত্তা রক্ষী তুলে নেওয়া হল, মত তৃণমূল বিধায়কের।
এর জবাব স্পষ্ট করে সরকারি তরফে বলা হয়নি। তবে সূত্রের মতে, অর্জুন সিং বিজেপি থেকে তৃণমূলের ফেরার পর এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কারণ, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বিজেপির সাংসদ অর্জুন সিং ও তাঁর বাহিনীর সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত ছিল। প্রায় দিন বোমাবাজি, গুলি চলার ঘটনা ঘটছিল। দুই পক্ষের সংঘাতে অনেকে আহতও হয়েছে। এই কারণেই সম্ভবত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অন্তত প্রায় ৪০ জন নেতা নেত্রীকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল।
অর্জুন খাতায়কলমে বিজেপিতে থাকলে প্রায় এক বছর হতে চলল তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে ব্যারাকপুরে আর সংঘাতের পরিস্থিতি নেই। বোমাবাজি, অশান্তির কথাও বিশেষ শোনা যাচ্ছে না। এই কারণেই সম্ভবত ৪১ জন নেতা নেত্রীর পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নিল সরকার।