দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরের একটি বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গর্ভবতী মহিলাদের রেফার করার বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। যদি রেফারের জন্য কোনও গর্ভবতী মহিলার মৃত্যু হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসক যিনি রেফার করেছিলেন তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে, স্পষ্ট বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠকে জুনিয়র চিকিৎসকদের বলার সময়েই এল প্রস্তাব৷ আর সেই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন মমতা৷ প্রস্তাব দেওয়া হয়, সাধারণ মানুষের জন্য অনেক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শুরু করেছে বর্তমান সরকার৷ সে খানে বিপুল অঙ্কের চিকিৎসার খরচ রাজ্য সরকার বহন করছে৷ কত খরচ দিচ্ছে রাজ্য সরকার, তা শেষ পর্যন্ত রোগীর পরিবার বুঝতে পারছেন না৷ সেই কারণে খরচের একটি হিসাব রোগীর পরিবারের কাছেও দেওয়া উচিত, দেখার জন্য৷
সেই প্রস্তাব পাওয়ার পরেই মমতা বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম, এরকম একটা ব্যবস্থা চালু করতে৷ এই প্রস্তাব এসে ভাল হল, আমরা প্রস্তাব গ্রহণ করলাম৷ তার পর মমতা নির্দেশ দেন, ‘‘যখন কোনও রোগী ভর্তি হল তখন, তাঁর চিকিৎসার জন্য কত টাকা খরচ হল, কত টাকা সরকার দিল, এই তথ্য রোগীকে দিতে হবে। প্রতিটা হসপিটাল এই নিয়ম চালু করুক’’৷
পাশাপাশি, তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসাথীর সুযোগ অনৈতিক ভাবে যাঁরা নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এদিন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনের কড়া অবস্থান স্পষ্ট করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় থাকার পরেও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল কেন স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিচ্ছেন না সাধারণ মানুষকে, এমন অভিযোগ নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর৷ তিনি সেই কারণে স্বাস্থ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘কত হাসপাতাল আছে, যেটা স্বাস্থ্যসাথী পরিকাঠামো সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিচ্ছে না সাধারণ মানুষকে৷ এমন হলে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে৷ না হলে তুমি লাইসেন্স বাতিলও করে দিতে পার৷’’
এ দিনের বৈঠকে ঠিক কী বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জেলাগুলিকে বলছি দয়া করে রেফারেল কেস কমান। গর্ভবতী মাকেও আপনারা ক্রিটিক্যাল কেস বলে রেফার করে দিচ্ছেন। তিনি যখন দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা যাত্রা করে কলকাতায় এসে পৌঁছছেন অপারেশনের আগেই মারা যাচ্ছেন। এই ধরনের জন্য যে রেফার করছেন তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে। কেন গর্ভবতী মহিলাদের এভাবে রেফার করা হবে? আগে বাড়িতেই সন্তান জন্ম নিত। এখন যদি ৯৯ শতাংশ ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি হয় সেক্ষেত্রে কেন রেফারের বিষয়টি থাকবে!”
এদিন স্বাস্থ্য সচিবকে পরিসেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলি সামনে থেকে খতিয়ে দেখার জন্য সারপ্রাইজ ভিজিটের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোথাও যাতে কোনও গাফিলতি থাকে না থাকে সেই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। গর্ভবতী মহিলার ডেলিভারির সময় যদি সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন। ভিডিয়ো কলে সাহায্যও নিতে পারেন চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, যে সমস্ত হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ করার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে জেলা শাসকদের নজরদারি চালানোর কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও ব্যক্তির কাছে যদি স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকে এবং তিনি তা এমার্জেন্সির জন্য নিয়ে যেতে না পারেন সেক্ষেত্রে তাকে ভর্তি নিতে হবে এবং পরে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড সংক্রান্ত নিয়মবিধি পূরণ করতে পারবেন তিনি।