অর্পিতা বনিক, বনগাঁ: চন্দননগর- কৃষ্ণনগর ছাড়াও বাংলার বুকে ছড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক জগদ্ধাত্রী পুজো! যেমন বনগাঁর ‘ট’ বাজার এলাকার স্কুল-রোডের তরুণ গোষ্ঠীর এই জগদ্ধাত্রী পুজো পুরনো প্রথা মেনে হয় শুধুমাত্র নবমী তিথিতে।
হৈমন্তীকার আরাধনায় মেতে উঠেছেন বনগাঁবাসী। নবমীর দিনই এখানে আলোয় ভাসছে শহরের স্কুলরোডের গলি। এদিন সকাল থেকেই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। সাবেকিয়ানা ধরে রেখেছে প্রতিমায়। গত দু’বছর করোনার ফলে জগদ্ধাত্রী পুজোয় নানা বিধি নিষেধ ছিল। ফলে পুজোয় সেভাবে মেতে উঠতে পারেননি কেউই। আর এবার করোনা থেকে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে। তাই এবার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বনগাঁবাসীরাও। দেখুন ভিডিও:
জানা যায়,জগদ্ধাত্রী পূজা প্রথমে কট্টর ভাবেই প্রচলিত ছিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে। দেবী সত্ত্বগুণের প্রতীক যা ব্রাহ্মণদের একটি বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য করা হয়। দেবীর গলায় থাকে নাগযজ্ঞোপবীত যা স্পষ্টভাবেই ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের পরিচায়ক। আবার, মন্ত্রে এই দেবীকে সাক্ষাৎ ব্রাহ্মণ বলেও অভিহিত করা হয়েছে।
জগদ্ধাত্রী বা জগদ্ধাত্রী দুর্গা হচ্ছেন দেবী দুর্গারই রূপভেদ। এক জন দুর্গা,আর অন্য জন হলেন জগদ্ধাত্রী ৷ উপনিষদে এঁর নাম উমা হৈমবতী। বাংলার হুগলি জেলার চন্দননগর, গুপ্তিপাড়া ও নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো খুবই জনপ্রিয়।
কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সিংহবাহিনী, তবে দুর্গার মতো জগদ্ধাত্রী দশভূজা নন চতুর্ভুজা। তাঁর বাম দিকের দুহাতে থাকে শঙ্খ ও ধনু এবং ডান দিকের দুহাতে থাকে চক্র ও পঞ্চবাণ। দুর্গার সঙ্গে তাঁর সংযোগ স্থাপন করে বর্তমানে তাঁর মূর্তিটি নির্মাণ করা হয় তা হল কাঁচা সোনার রঙে। কমলা রঙের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বর্তমানে রাজ্যে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান। ক্রমেই এই পুজো ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাংলায় ৷
জগদ্ধাত্রী পুজোর নিয়মটি একটু আলাদা। দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপুজোর ঠিক একমাস পর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে। কাত্যায়নীতন্ত্রে কার্তিকী শুক্লা নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আবির্ভূত হওয়ার কথা আছে। জগদ্ধাত্রী পুজো দুটি প্রথায় হয়ে থাকে।
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিন দিন জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। কোথাও কোথাও প্রথম বা দ্বিতীয় পুজোর পর কুমারী পুজোরও আয়োজন করা হয়। দুর্গাপুজোর ন্যায় জগদ্ধাত্রী পুজোতেও বিসর্জনকৃত্য বিজয়াকৃত্য নামে পরিচিত। এমনকী, পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণাম মন্ত্রসহ পুজোর অনেক মন্ত্রও দুর্গাপুজোর মতোই হয়ে থাকে।