World Mental Health Day: মনের যত্ন নিন! বন্ধুবান্ধবদের মাঝে থেকেও একা লাগে! একাকিত্ব দূর করবেন কীভাবে?

0
711

দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ বন্ধুবান্ধবদের মাঝে থেকেও একা বোধ করেন! তাহলে আপনি একাকিত্বে ভুগছেন।

সার্বিক ভাবে ভাল থাকার ভিত্তি হল মানসিক সুস্বাস্থ্য। মন শরীরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অথচ মনের শুশ্রুষা আড়ালেই থেকে যায়। দীর্ঘ দু’বছর কোভিড সংক্রমণের প্রভাবে বিঘ্নিত হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন। করোনার জেরে বিশ্বব্যাপী বেকারত্ব, সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, গৃহবন্দি জীবন, বেতনে কোপ সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে মন। নানা সংস্থার তরফে সে সব নিয়ে সমীক্ষাও চলছে। করোনার প্রভাব তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনে অনিয়মও মানসিক স্বাস্থ্যকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।ব্যস্ততম জীবনে মনের তো দূর, শরীরের যত্ন নেওয়ার পর্যন্ত সময় পাওয়া যায় না।

কর্মক্ষেত্রের প্রত্যাশা পূরণের চাপ, ভবিষ্যৎ চিন্তা, ব্যক্তিগত জীবন, অপছন্দের কাজ করা, সময়ের অভাবে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত ক্লান্তি— মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হওয়ার প্রধান কিছু কারণ। মানসিক ক্লান্তির এই যে গূঢ় সমস্যা, তার শিকড় কিন্তু একটি বা দু’টি নয়। বরং অনেকগুলি। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে তাই মেনে চলুন কয়েকটি বিষয়।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একাকিত্ব একটা বোধ। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে যেকোনও বয়সেই তা গ্রাস করতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের উপর তো বটেই, শরীরেও প্রভাব ফেলে এই বোধ। তাই দ্রুত এর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। 

দীর্ঘদিন ধরে একাকিত্ব বোধ করলে শরীর ও মনের উপর কী কী প্রভাব পড়ে? 

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একাকিত্বে ভুগলে শরীর, মন দুইয়ের উপরেই সমান প্রভাব পড়বে। এমনকী শরীরে এমন কিছু প্রভাব পড়ে যা কিন্তু সহজে ঠিক হয় না। যেমন স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর বলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। হৃদরোগের সমস্যাও বাড়ে। রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। ফলে যেমন মনের উপর চাপ পড়ে, তেমনই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দেয় এই বোধ। 

একাকিত্ব কাটাতে কী কী করবেন?

১. একাকিত্বে যাঁরা ভোগেন, তাঁরা সহজে সব অনুভূতি অন্যের কাছে শেয়ার করতে পারেন না। একাকিত্ব কাটাতে অনুভূতি শেয়ার করে ভীষণ জরুরি। প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা হলে এই বোধ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। এতেও হালকা থাকা যায়। 

২. একাকিত্ব কাটাতে গেলে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও জরুরি। এর ফলে মন ভাল থাকে। 

৩. ব্রেন এক্সারসাইজ ভীষণ জরুরি। যেকোনও কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে, কথা বললে, ব্রেন এক্সারসাইজ হয়। এর ফলে একাকিত্ব বোধ দূর হয় সহজেই। 

৪. সমাজসেবামূলক কাজ করুন। মাঝে মাঝেই চেষ্টা করবেন নিজে থেকেই কাউকে সাহায্য করতে। এতে খানিকটা মনও ভাল থাকে। 

৫. আধুনিক যুগে সববয়সিরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় না কাটিয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন, ঘুরতে যান। কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটালে, কথা বললে একাকিত্ব বোধ কাটবে। 

৬. নাচ, গান, আঁকা, ছবি তোলা, লেখালেখি করা, এই ধরনের শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও একাকিত্ব কাটতে পারে। 

৭. দীর্ঘদিন একাকিত্বে ভুগলে সেটা অবসাদের কারণেও হতে পারে। তেমন অনুভব করলে থেরাপিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়াটা প্রয়োজন। তাঁরাই বলে দেবেন এর থেকে বেরোনোর সঠিক উপায়।

৮, একঘেয়ে জীবনে মাঝেমাঝে বিরতির দরকার হয়। রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ছুটে চলা জীবনে মাঝেমাঝে লাগাম পরান। কাজ তো সারা জীবন থাকবে, কিন্তু নিজের সেরাটুকু দেওয়ার জন্যেও খানিক প্রস্তুতির দরকার হয়। মনখারাপ হোক বা না হোক, সময় পেলেই বেড়িয়ে আসুন। দরকার হলে সময় বার করে ঘুরে আসুন। আপনার মনের দেখাশোনার দায়িত্ব আপনারই। চাঙ্গা থাকার চেষ্টা করুন। ইচ্ছে অনুযায়ী চলুন। এগুলিই মনেরর ক্ষতে একটু একটু করে প্রলেপ লাগাবে।

৯, মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলা করার বিষয় নয়। মনের কোণে যদি এতটুকুও উদ্বেগের মেঘ জমাট বাঁধে, তা চেপে রাখবেন না। যাঁকে বললে বা যাঁদের কাছে বললে আপনি হালকা হতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে, দেরি না করে বলে ফেলুন। সমস্যা চেপে রাখলে আয়তনে আরও বাড়তে থাকে। লাভ কিছু হয় না। দরকার হলে মনোবিদের সাহায্য নিন। কিন্তু মনের মধ্যে যন্ত্রণা আটকে রেখে নিজেকে তিলে তিলে কষ্ট দেওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

১০, অন্যকে সময় দিতে গিয়ে বা কাজের ব্যস্ততায় নিজের খেয়াল রাখার ফুরসত পান না অনেকেই। এখানেই ভুলের শুরু। সব কিছু ঠিক থাকবে, যদি আপনি ভাল থাকেন। তাই সব থেকে আগে নিজের প্রতি সচেতন হন। নিজের ভাললাগা, পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিন। উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা দূর করার অন্যতম উপায় হল নিজেকে ভালবাসা। তা হলে দেখবেন, কোনও সমস্যাই আর খুব গুরুতর বলে মনে হচ্ছে না।

১১, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার— ক্রমাগত নেটমাধ্যমের ব্যবহারের ফলে বিষণ্ণতা, একাকীত্ব, ঈর্ষা, উদ্বেগ জন্ম নিতে পারে। ফলে জীবনের প্রতি অসন্তোষ তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। সারা ক্ষণ ফোনের সংস্পর্শে থাকার ফলে মনের উপর তার প্রভাব পড়ছে। এতে চিন্তাভাবনার পরিসরও ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসে। কাজের প্রয়োজনে প্রযুক্তির কাছে মাথা নত করা ছাড়া উপায় থাকে না। মনোবিদরা বলছেন, প্রয়োজন ছাড়া নেটমাধ্যম থেকে দূরে থাকাই ভাল। প্রযুক্তির ব্যবহার ঘুমেরও ঘাটতি তৈরি করে। তাই প্রয়োজন ছাড়া সমাজমাধ্যম ব্যবহার না করাই ভাল।

১২, সততা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। নিজের কাজের প্রতি সব সময় সৎ থাকার চেষ্টা করুন। নিজের অনুভূতির খেয়াল রাখুন। নিজের দর্শন, আদর্শের প্রতি অনড় থাকুন। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। কোনও পরিস্থিতিতেই আত্মবিশ্বাস হারাবেন না।

Previous articleMulayam Singh Yadav:প্রয়াত মুলায়ম সিং যাদব,‘‌জরুরি অবস্থায় গণতন্ত্রের লড়াইয়ে অন্যতম সৈনিক ছিলেন’‌,শোকবার্তা মোদীর
Next articleNarendra Modi: মঙ্গলবার মহাকালশ্বরের করিডরের উদ্বোধন, উপস্থিত থাকছেন প্রধানমন্ত্রী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here