অপির্তা বনিক, গোবরডাঙা: বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা । গোটা বছর যে যেখানেই থাকুন না কেন, এই সময়টায় ঘরে ফিরতে মুখিয়ে থাকেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা। চারদিনের আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, প্যান্ডেল হপিং, পুজোর আগে শপিংয়ের উত্তেজনা আর সবশেষে বিসর্জনের মন খারাপ-বাঙালি মজে আছে এই কার্নিভালেই।
তবে ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার চোখ রাঙানির জন্য সেভাবে মানুষ পুজোর দিন উপভোগ করতে পারেনি। বহু পুজো হয়েছে শুধুই রীতি মেনে, কোনও জাঁকজমক ছাড়া। ফলে এ বছর করোনা গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও মানুষের মধ্যে পুজো নিয়ে মানুষের আবেগ, উন্মাদনা অনেকটাই বেশি। দু’বছর পুজো হয়েছে নামমাত্র। ফলে এ বারে কমর বেঁধে নেমে পড়েছে যেমন বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলি অন্যদিকে বনেদি বাড়ির পুজো ঘিরেও আনন্দের শেষনেই ৷ দেখুন ভিডিও
প্রায় ৩১১ বছরের পুরনো গোবরডাঙা জমিদারবাড়ির পুজো। কলকাতার অদূরেই এই পুজোয় থাকে নিষ্ঠা ও ঐতিহ্যের মিশেল। পুজোয় আতিশয্য নেই, রয়েছে উমাকে বরণ করে নেওয়ার এক ঘরোয়া ছবি। নিয়ম মেনে এই জমিদার বাড়িতে আকাশের তারা দেখে প্রতিমা বিসর্জন হয়। রোনাভাইরাসের ধাক্কার গত ২ বছর মূর্তিপুজো বন্ধ ছিল। পরিবর্তে প্রসন্নময়ী কালী মন্দিরে ঘটপুজোর মাধ্যমে দুর্গাপুজো হয়েছিল।এবার ফের মূর্তি পুজো হচ্ছে ৷
থিম পুজোর ভিড়েও এলাকার মানুষের কাছে মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো নিয়ে উৎসাহ এতটুকু কমেনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেল, জন্মাষ্টমীর দিন বাবলা কাঠ দিয়ে কাঠামো পুজো শুরু হয়। প্রতিপদে কালীমন্দিরে ঘট স্থাপন করা হয়। সপ্তমীর দিন ওই ঘট ও কলা বৌ মণ্ডপে আনা হয়। তালপাতার পুঁথিতে লেখা মন্ত্র পাঠ করা হয় পুজোয়। অতীতে মহিষ বলি দেওয়া হত। পরে ১৪টি পাঁঠা, ২টি ভেড়া, আখ-চালকুমড়ো বলি দেওয়া শুরু হয়।
১৯৯৭ সাল থেকে বলি প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে। অতীতে ষষ্ঠীতে জমিদার বাড়িতে কামানদাগা হত। শোনা যায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাতি থাকত। যমুনা নদীতে নৌকোয় করে প্রতিমা ঘুরিয়ে বিসর্জন দেওয়া হত। এখনও পুজোর ক’টা দিন জমিদার বাড়িতে বহু মানুষের সমাগম ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক এখানে পুজো দেখতে আসেন।
পরিবারের এক সদস্য জানান, এ বছর তাঁদের পুজো ৩১১ বছরে পড়ল। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারত-চিন যুদ্ধ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ২০০০ সালের বন্যাতেও পুজো বন্ধ হয়নি। তবে করোনা পরিস্থিতিতে পর পর দু’বছর মূর্তিপুজো হয়নি। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকশো বছর আগে মুখোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষেরা উত্তরপ্রদেশ থেকে অধুনা বাংলাদেশের সারষা এলাকার সাগরদাঁড়িতে এসে বসবাস শুরু করেন। ওইখানেই পুজো শুরু করেন তাঁরা।
পরিবারের এক সদস্য শ্যামরাম মুখোপাধ্যায় গাইঘাটার ইছাপুরে এসে চৌধুরী জমিদার পরিবারের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে তিনি জমিদারির একাংশ পান। তাঁর ছেলে খেলারাম কালেক্টর ছিলেন। তিনিই গোবরডাঙার বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় প্রসন্নময়ী দক্ষিণাকালী মন্দির ও দ্বাদশ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কথিত আছে, রানি রাসমণি ওই কালী মন্দিরে এসেছিলেন।