দেশের সময় :মহালয়াতেই যেন পুজোর সুর বাঁধা হয়ে গেল। চেতলা অগ্রণীতে হল পুজোর উদ্বোধন এবং মায়ের চক্ষুদান করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক কালে এখানে বরাবরই চোখ আঁকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতোই এবারও কাজটি করলেন তিনি। চেতলা অগ্রণী ক্লাবের মণ্ডপে ঢুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই দুর্গাপ্রতিমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর হাতে দেওয়া হল একটি প্যালেট ও তুলি।
প্রতিমার সামনে সেই প্যালেট ও তুলি নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন তিনি। তারপর প্যালেট থেকে তুলি দিয়ে রং তুলে নিলেন এবং ধীরে ধীরে চোখ আঁকলেন। চেতলা অগ্রণীর তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে এ জন্য বারবার ধন্যবাদ দেওয়া হল। তিনি তাঁর ব্যস্ত শিডিউল থেকে সময় বার করে চেতলা মণ্ডপে এসেছেন এবং প্রতিমার চক্ষুদান করেছেন, এজন্য বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হল।
এদিন সন্ধ্যায় জেলায় জেলায় পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চেতলা অগ্রণী থেকেই হয় উদ্বোধন৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর চোখেমুখেও ছিল খুশির আমেজ৷ পুজো যে এসে গিয়েছে তা বোঝা যাচ্ছিল তাঁকে দেখেই৷
ওই মণ্ডপ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বেশ কিছু পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। মোট ২৫৩টি পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। যার মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি পুজো ছিল। তাই দুই জে.লার তরফ থেকেও মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয় এদিন ৷
তিনি বলেন, “আমার ভাল লাগছে সব জেলা, কালিম্পং থেকে ঝাড়গ্রাম এক হয়ে গিয়ে বাংলা মাকে নিয়ে এসেছন। আমি গ্রাম বাংলাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এত সুন্দর আয়োজন করেছে জেলাগুলো। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করে ভাল লাগল। এর আগে কোভিডের সময় অনেক পুজো উদ্বোধন করেছিলাম এই ভাবে নবান্ন থেকে। সবাই মিলিত হয়েছেন। সবাইকে দেখতে ভাল লাগছে। আমরা সবাইকে অভিনন্দন জানাই।”
জেলাগুলিকে শুক্রবারের মধ্যেই তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জেলার আধিকারিকেরা সেই তালিকা নবান্নে জমা দিয়েছিলেন। তবে রবিবার প্রথম নয়৷ বৃহস্পতিবার কলকাতায় তিনটি পুজো মন্ডপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ভিড় সামলানো পুজোগুলোর দায়িত্ব। ববি (ফিরহাদ হাকিম) মাঝে মাঝে ভিআইপি টানার জন্য রাস্তা করে দেয়, আমি সুজিতকেও (সুজিত বসু) বলেছি, রাস্তা সচল রাখতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বলেন, চেতলা অঞ্চলে নির্মলা মিশ্র ও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে কিছু একটা করতে।
চেতলার প্রতিমার প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিশেষ করে শিল্পী সুব্রতকে অভিনন্দন জানান৷ মেয়রের পুজোর থিম এবার ১৬ কলা পূর্ণ। কারণ কলাগাছ দিয়েই তৈরি করা হয়েছে একটা গোটা মণ্ডপ। বাংলার বারোমাসে তেরো পার্বণে কলাগাছ না থাকলেই নয়। এবার সেই কলাগাছের বাকল থেকে তন্তু বার করে তরল প্যারাফিনে চুবিয়ে রেখে বানানো হয়েছে গোটা মণ্ডপ।
গত তিন বছর ধরে নিজের স্টুডিওতে এই মণ্ডপের সামগ্রী তৈরি করেছেন শিল্পী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁরই থিম এবার চেতলা অগ্রণীতে ‘১৬ কলা পূর্ণ’। সেই দেড় লক্ষ কলাগাছের বাকল থেকেই গোটা মণ্ডপ তৈরি করে ফেলেছে ফিরহাদ হাকিমের চেতলা অগ্রণী। তবে কিছুটা মনভারও ছিল মুখ্যমন্ত্রীর৷ মনে পড়ছিল, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্রের কথা৷
শুধু উদ্বোধন বা দেবীর চক্ষুদানই নয়, মুখ্যমন্ত্রী এবার পুজোয় আটটি গানও লিখেছেন এবং সুর করেছেন! এর একটি গান গেয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়ও। যদিও জানা গিয়েছে, সেই গান নাকি পছন্দ হয়নি মমতার। তিনি বলেছেন, বাবুল নাকি অন্তর দিয়ে গান গাননি!
প্রসঙ্গত, এই প্রথম আড়াইশোটির বেশি পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট ২৫৩টি পুজো ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এগুলি হল: উত্তর ২৪ পরগনায় ২৩টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২৪টি, হাওড়ায় ১৭টি, নদিয়ায় ৩টি, মুর্শিদাবাদে ১০টি, পূর্ব বর্ধমানে ৯টি, পশ্চিম বর্ধমানে ৪টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৩টি, পশ্চিম বর্ধমানে ৪টি, বীরভূমে ১৫টি, হুগলিতে ১৭টি, ঝাড়গ্রামে ৬টি, বাঁকুড়ায় ১০টি, পুরুলিয়ায় ১১টি, মালদায় ১১টি, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০টি, উত্তর দিনাজপুরে ১০টি, দার্জিলিংয়ে ১৫টি, কালিম্পংয়ে ৩টি, জলপাইগুড়িতে ১৭টি, আলিপুরদুয়ারে ১০টি, কোচবিহারে ৫টি।
সারা রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাবের পাশাপাশি উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁর ১২-র পল্লী স্পোর্টিং ক্লাব ও অভিযান সংঘেরদুর্গা পুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকেও,দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের নাট্য সংসদ ক্লাবের দুর্গা পুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার মহালয়ার দিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে নাট্য সংসদ ক্লাবের দুর্গা পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহকুমা শাসক পি প্রমথ, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা। ঢাকের বাদ্যির তালে ভার্চুয়ালি পুজোর উদ্বোধন করা হয়। জানা গেছে নাট্য সংসদ ক্লাবের দুর্গা পুজোর থিম “প্রাপ্তি”।
মালদা জেলা থেকে আগত শিল্পী শ্যাম চৌধুরীর হাতে তৈরি বিশেষ ঝার দর্শকদের মন কাড়বে পুজো প্যান্ডেলে। জানা গেছে প্রত্যেক বছরই গঙ্গারামপুর নাট্য সংসদ ক্লাব বিশেষ থিমের মাধ্যমে জেলার মধ্যে আলাদা জায়গা করে নেয়। ক্লাবের ৫০ বছর ও পুজোর ৩২ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে পুজো উদ্বোধন এক বিরাট সৌভাগ্য, এমনটাই মনে করছেন ক্লাব সদস্যরা।