দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি এবার কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে নিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । এদিন দিল্লিতে যেই হোটেলে হাসিনা উঠেছেন, সেখানে গিয়েছিলেন রাহুল। সেখানেই দু’জনের বেশ খানিকক্ষণ দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়।
এমনিতে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের ভারত সফরে এসে বিরোধীদলের প্রধানদের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করা রীতি ছিল। কিন্তু এইমুহূর্তে দেশের বাইরে রয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধী। মা’র প্রয়াণের পর থেকেই ইতালিতে আছেন তিনি। ফলত সনিয়ার অবর্তমানে এদিন হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের গুরুদায়িত্ব চাপে রাহুলের কাঁধেই। মঙ্গলবার দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে রাজীব তনয়ের সঙ্গে মুজিব কন্যার বৈঠকের ছবি কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
Shri @RahulGandhi met with Prime Minister of Bangladesh Sheikh Hasina earlier today and had a fruitful discussion
— Congress (@INCIndia) September 6, 2022
on a score of topics. pic.twitter.com/UvbjZ7oAgy
মঙ্গলবার ছিল শেখ হাসিনার সফরের দ্বিতীয় দিন৷ মঙ্গলবার সেই সফরের অংশ হিসাবে তিনি দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে৷ তার পরেই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন শেখ হাসিনা৷ এর আগে ভারতের বিদেশ নীতি নিয়ে বিস্তারিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷
তার আগে ভারত সফরের মাঝেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের নামও শোনা যায়৷ হাসিনা বলেন, ‘‘ ও (মমতা) আমার বোনের মতো, আমি ওঁর সঙ্গে যখন খুশি দেখা করতে পারি৷ আমাদের সবসময়ই একটি ভাল সম্পর্ক আছে৷’’ সোমবার বিকেলে সরাসরি দিল্লিতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ সোমবারই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন আদানি কর্তা গৌতম আদানি৷ তার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা৷
উল্লেখ্য, চারদিনের ভারত সফরে এসে মঙ্গলবার ই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর মোদীর সঙ্গে এটা তাঁর ত্রয়োদশ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। যে বৈঠকে শুধু নিরাপত্তা, জল বন্টন বা অর্থনৈতিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়নি, বরং ইতিহাসের ভিতও গড়ে গেলেন মুজিব কন্যা। ভারতের সঙ্গে ভারত জুড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার লেখা রইল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে।
ভারতের এক কূটনীতিকের কথায়, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন লর্ড কার্জন। সেই বিভাজন আর মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে দুই দেশকে জুড়তে সাহায্য করছেন। রেললাইন, জলপথ, বন্দরের মাধ্যমে শুধু বাংলা নয়, গোটা উত্তর-পূর্বকে এক সূত্রে গেঁথে ফেলা যাবে ঢাকার সাহায্যে।
অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুনাচল প্রদেশ, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, সিকিম, মিজোরাম- এই আটটি রাজ্য ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে মাত্র ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটা অংশের মাধ্যমে জুড়ে রয়েছে। যাকে বলা হয় চিকেন নেক। যে কারণে উত্তর-পূর্বে পণ্য সরবরাহ যথেষ্টই খরচ সাপেক্ষ। চলতি সফরে হাসিনা অঙ্গীকার করেছেন, উত্তর-পূর্বে পণ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ তাঁদের ভূখণ্ড ব্যবহারের সমস্ত দরজা খুলে দেবে। রেল, জলপথে সংযুক্তিকরণে সবরকমভাবে ভারতকে সাহায্য করবে ঢাকা। সেই কারণেই বলা হচ্ছে, ভারতকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন মুজিব কন্যা।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের আয়োজনে যে হোটেলে তিনি রয়েছেন, সেখানেই রিসেপশনের কাছে জড়ো হয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিকরা৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি একাধিক বিষয়ে মত প্রকাশ করেন৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি বা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন এলে হাসিনা বলেন, ‘‘ভারত অনেক বড় দেশ৷ ভারত এই সমস্ত বিষয়ে অনেক কিছু করতে পারে৷’’ তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এটাও বলেন যে আন্তর্জাতিক যে সমস্ত নদী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেগুলিকে উভয় দেশের তৎপরতায় কী করে প্রবাহিনী রাখা যায়, কী করে এর নাব্যতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে দুই দেশকেই কাজ করতে হবে৷