দেশের সময়: একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলা উন্নয়ন, অন্যদিকে বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়া। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়া। এই আবহেই আজ, রবিবার বনগাঁর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচন হতে চলেছে। কয়েক মাস আগেই এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ দাস। কিন্তু ভোটের ফলপ্রকাশের পরই অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। ফলে ওয়ার্ডটি খালি হয়ে যায়। সেই শূন্যস্থান পূরণেই ভোট হতে চলেছে আজ।
তবে একটি ওয়ার্ডের ভোট হলেও এই নির্বাচন ঘিরে টানটান উত্তেজনা রয়েছে বনগাঁ শহরে। আর তার অন্যতম কারণ, রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ফলে এই ভোটের প্রচারে বিরোধী দলগুলি যতটা না স্থানীয় ইস্যু নিয়ে কথা বলেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি বলেছে রাজ্যে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের মতো ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে এই ওয়ার্ডের ভোটের সমীকরণ বদলে দেওয়ার চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেনি বাম, কংগ্রেস কিংবা বিজেপি। কারণ, পার্থ-অনুব্রত কাণ্ডের পর এই প্রথম কোনও ভোট হতে চলেছে। ফলে দুর্নীতিতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়ার মতো ইস্যু আদৌও মানুষের মনে কতটা প্রভাব ফেলেছে, কিংবা প্রভাব পড়লেও তা ভোট বাক্সে প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে নিতে চাইছে বিরোধীরা। তৃণমূলের হাত থেকে বনগাঁর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডটি বিরোধীরা ছিনিয়ে নিতে পারলে পুরবোর্ডে কোনও পালাবদল হবে না ঠিকই, কিন্তু বৃহত্তর ক্ষেত্রে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাবে, যা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে সাহায্য করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে বাম, বিজেপি কিংবা কংগ্রেস।
একইভাবে শাসকদল তৃণমূলের কাছেও বনগাঁর এই একটি ওয়ার্ডের উপনির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক পরিবেশ পরিস্থিতির নিরিখে একেবারে অ্যাসিড টেস্ট বলা যেতে পারে। কারণ, এমনিতেই বনগাঁয় তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে একটি বিরোধ রয়েছে। একাধিকবার সেই দ্বন্দ্ব একেবারে প্রকাশ্যে এসেছে। পুরসভার রাশ নিজের দখলে রাখা নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করতে দেখা গিয়েছে দলের নেতাদের। এই ওয়ার্ডের ভোটেও তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার আগেই কাকে প্রার্থী করতে হবে, তা নিয়ে ফেসবুকে করা পোস্ট ঘিরে তুমুল আলোড়ন ছড়ায়। ফলে এই ভোটে দলীয় অন্তর্ঘাত সামাল দেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে।
আবার কোনওভাবে এই ওয়ার্ডে হেরে গেলে তৃণমূলের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে রীতিমতো জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, বনগাঁর এই উপনির্বাচনের ফল যদি তৃণমূলের পক্ষে থেকে যায়, তা হলে জোড়াফুল শিবিরের নেতারা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন, মানুষ তাঁদের সঙ্গেই আছেন। কিন্তু তা যদি না হয়, সেক্ষেত্রে হাওয়া অন্য খাতে বইতে পারে। তাছাড়া বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হওয়ার পর এই প্রথম কোনও ভোট হতে চলেছে। ফলে দলকে জেতানো তাঁর কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বাভাবিকভাবেই যেন তেন প্রকারে বনগাঁর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জিততে মরিয়া তৃণমূল। আর এখানেই ভোটের দিন সন্ত্রাস ও রিগিংয়ের আশঙ্কা করছে বিরোধীরা। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে তারা প্রশাসনকে একাধিক চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু তার পরও মানুষ কতটা অবাধে ভোট দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে তাদের মধ্যে। তৃণমূল অবশ্য বলছে, বিরোধীরা জানে তাদের ফল কী হতে চলেছে। সেকারণে তারা সন্ত্রাসের অজুহাতকে সামনে আনার চেষ্টা করছে। আসলে মানুষ ওদেরকে গোটা রাজ্যেই প্রত্যাখান করেছে। ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। পায়ের তলার মাটি হারিয়েছে ওরা। মানুষ নিজের ভোট নিজেই দেবে। উৎসবের মেজাজে ভোট হবে। বনগাঁর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ দু’হাত ভরে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছে।
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলছেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে উপ নির্বাচনে আমাদের জয় কেউ আটকাতে পারবে না। ভোটের অঙ্কই বলছে, আমরা জিতে রয়েছি। পুরভোটে নির্দল প্রার্থী ৯২৭ ভোট পেয়েছিলেন। এবার সেই ভোট তৃণমূলের পক্ষে আসবে। তাছাড়া আমাদের প্রার্থী প্রায় চারশো ভোটে জিতেছিলেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ভোটের ফল কী হতে চলেছে। কিন্তু দলের অন্তর্কলহ? বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আমি সভাপতি হওয়ার পর সবাইকে বসেছি। মঞ্চে তুলেছি। ভোটের প্রচারে নামিয়েছি। প্রত্যেককে বলে দেওয়া হয়েছে, দলের নির্দেশ মানতে হবে।
বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলছেন, এক হাজার থেকে বারোশো ভোটে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতবে। কিন্তু অনুব্রত-পার্থর ইস্যু প্রভাব ফেলবে না? গোপালবাবুর কথায়, মানুষ ওসব ভাবছেন না। তারা দেখছেন, স্থানীয়ভাবে পরিষেবা মিলছে কি না। চেয়ারম্যান হওয়ার পর কাউন্সিলারদের নিয়ে বনগাঁর সবক’টি ওয়ার্ডে আমি বাড়ি বাড়ি ঘুরেছি। কে, কোন দল করে দেখিনি। প্রতিটি পরিবারের কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছি, তারা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে কি না, তারা রাজ্য সরকারের সব ভাতার সুবিধা পাচ্ছে কি না। কেউ কোথাও কিছু না পেলে সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তা হয়েছে। ড্রেন হয়েছে। এলাকায় গুরুচাঁদ ঠাকুরের মূর্তি বসেছে। এটা নিয়ে এলাকার মানুষের একটা আবেগ আছে। আমরা জিতছিই।
বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মোট বুথ ছ’টি৷ সেখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪,৭৭৬ জন৷ এর মধ্যে মহিলা ভোটার রয়েছেন ২,৩৭৩ এবং পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২,৪০৩৷ চতুর্মুখী লড়াই হচ্ছে। গত পুরভোটে এই ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের দিলীপ দাস ৩৮৬ ভোটে জিতেছিলেন। তাঁর অবশ্য গলার কাঁটা ছিল নির্দল। ভোটের ফলাফলে নির্দল প্রার্থীই ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। এবার নির্দল না থাকলেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি। গতবারও কংগ্রেসের প্রার্থী ছিল। কিন্তু সেভাবে সক্রিয় নয়। মাত্র ৩৫টি ভোট পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী।
কিন্তু এবার রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেস শিবির কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি প্রচার করেছেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রভাষ পাল।
সিপিএম প্রার্থী ধৃতিমান পাল পরিচিত মুখ।
গতবার এই ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন জ্ঞান ঘোষ। তিনি ৩৫০ ভোট পেয়েছিলেন। এবার উপনির্বাচনেও তাঁকেই প্রার্থী করে দল। কিন্তু পরে তাঁকে বদলে বিজেপির প্রার্থী করা হয় অরূপ পালকে।
তৃণমূলের প্রার্থী যুব সমাজের প্রতিনিধি, পাপাই রাহা। ফলে লড়াই জমজমাট। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। তবে ভোটের দু’দিন আগে বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারের নাম ও ছবি দিয়ে পোস্টার পড়ায় কিছুটা ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির। বিজেপি বিধায়কের কুকীর্তি নামে ওই পোস্টার ঘিরে এলাকায় আলোড়ন ছড়ায়। বিধায়কের দাবি, নিজেদের অবস্থা ভাল নয় বুঝে তৃণমূলই এসব করছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনও ব্যক্তি কুৎসায় বিশ্বাস করে না। এসবের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। টগবগ করে ফুটতে থাকা এই উত্তেজনার আবহে নির্বিঘ্নে ভোট করানোই এখন চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছেও।
আজ সকাল থেকেই ছ’টি বুথের ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে আবহাওয়া কেমন থাকে, তার উপরও নির্ভর করছে ভোটদানের হার।
কেমন হবে ভোটের ফল? নির্বাচনের আগের দিন তৃণমূল প্রার্থী পাপাই রাহাকে যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী মনে হল। বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখেই মানুষ ভোট দেবে। উৎসবের মেজাজে ভোট হবে। জয় এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ভোটের ফল বের হলেই বিরোধীরা বুঝতে পারবে, তাদের জমানত জব্দ হয়েছে। বিরোধীরা কতটা ছাপ ফেলতে পারবে এই নির্বাচনে? প্রশ্ন শুনে পাপাইয়ের মন্তব্য, ওদের কোনও অস্তিত্বই নেই। ভোট এলে ওদের দেখা যায়। সারা বছর খুঁজেও পাওয়া যায় না। মানুষ জানে, কারা সারাবছর তাদের সঙ্গে থাকে। তাছাড়া জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে এ রাজ্যের প্রতিটি পরিবার। তারা আর কাকে ভোট দেবে। স্থানীয় ইস্যু নিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর বক্তব্য, অনেক কাজ হয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে। ওয়ার্ডের সবার সঙ্গে বসে সেগুলোও হবে। তাঁর দাবি, বাম আমলে রাস্তায় জল জমে থাকত। রাস্তার হাল এতটাই খারাপ ছিল যে, হাঁটা যেত না। এখন গলিতেও ঢালাই রাস্তা। দুর্নীতিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা এই উপনির্বাচনে কি কোনও প্রভাব ফেলবে? পাপাইয়ের দাবি, মোটেই ফেলবে না। কারণ, মানুষ এটুকু জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সততার প্রতীক। তিনি কোনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব ও দলের পদ থেকে সরাতে তিনি বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেননি।
যদিও তৃণমূল প্রার্থী যতটা সহজ ভাবছেন লড়াইটা, আদৌও ততটা সহজ নয় বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী অরূপ পাল। তাঁর দাবি, চোরাস্রোত বইছে। দেখতে থাকুন। নন্দীগ্রামের মতো ভোটের ফল হবে। মানুষ হাত নেড়ে, মাথা নেড়ে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমি মাটির সঙ্গে আছি। মানুষের সঙ্গে আছি। পার্থ-অনুব্রত ইস্যু কাজ করবে ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে? কেন করবে না। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। তাঁরা খবরের কাগজ, টিভির পর্দায় সব দেখছেন। যদি তাঁরা নিজেদের ভোট নিজে দিতে পারেন, তা হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ উগরে দেবেন ভোট বাক্সে।
সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সদস্য পীযূষ সাহার বক্তব্য, এই সময়ের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে প্রশাসন যদি সঠিক ভূমিকা পালন করে, বামেরা নিসন্দেহে বনগাঁর উপনির্বাচনে জিতবে। তাঁর তোপ, বাম বিরোধী ওই ওয়ার্ডে নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। বৃষ্টি হলেই জল দাঁড়িয়ে যায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে জঞ্জাল ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে। পুরসভা বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তা এখনও হয়নি। কেন তৃণমূলকে ভোট দেবে মানুষ। গত পুর নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে বাম প্রার্থী ৪৭৬ ভোট পেয়েছিলেন। এবার কি ভোট বাড়বে? প্রশ্নের উত্তরে পীযূষবাবুর বক্তব্য, মানুষকে শুধু নিজের ভোট নিজে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে প্রশাসনকে। তা হলে ভোট তো বাড়বেই। আমরা জয়ের জায়গাতেও পৌঁছে যেতে পারি। পার্থ-অনুব্রতর ইস্যুকে কীভাবে প্রচারে তুলে ধরল বামেরা? পীযূষবাবুর কথায়, আমরা বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে শুধু একটি কথা বলেছি, আপনারা ঠিক করুন, কাকে ভোট দেবেন। এমন কাউকে কি ভোট দেবেন, যাতে জনগণের রায় নিয়ে আরও বেশি চুরি করার ছাড়পত্র পেয়ে যায় কোনও দলের নেতারা। আমাদের বিশ্বাস, মানুষ আমাদের কথা বুঝেছেন। এবং তারা ভেবেচিন্তেই ভোট দেবেন।
উপনির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী প্রভাস পালের মুখেও ভোট লুটের আশঙ্কার কথা। বললেন, মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের ফল ভালর দিকে যাবে। কিন্তু তা কতটা হবে, সে ব্যাপারে আমাদের মনে যথেষ্টই সংশয় আছে। কারণ, তৃণমূল চারদিকে বলে বেড়াচ্ছে, যে করেই হোক এই ওয়ার্ডে জিততেই হবে, যাতে তারা মানুষকে বোঝাতে পারে, অনুব্রত-পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের মতো ইস্যুতেও তাদের ভোট ব্যাঙ্ক অটূট, মানুষ তাদের সঙ্গেই আছে। আমরা বারবার প্রশাসনকে বলেছি। কিন্তু প্রশাসনও আদৌও কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, তা বুঝতে পারছি না আমরা। কংগ্রেস প্রার্থী দাবি, আমরা যখন বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়েছি। মানুষজন আমাদের একটা কথাই বলেছেন, আপনারা তো ভোট চাইতে আসছেন, কিন্তু আমরা নিজেদের ভোট নিজে দিতে পারব তো? তাদেরকে বলেছি, আমার একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে রুখে দাঁড়ালে তবেই ভোট লুট বন্ধ করা যাবে। তবে মানুষের মধ্যে ভোট লুট ঠেকানোর মানসিকতা তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতিরোধ করার মনোভাব টের পেয়েছি।
কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণ চন্দ বলেছেন, মানুষ সুযোগ দিলে আমরা তাদের সুশাসন দিতে পারি। একদিকে রাজ্যে দুর্নীতির বাসা, অন্যদিকে কেন্দ্রে এমন একটি সরকার চলছে, যারা দেশকে লুট করছে, শোষণ করছে, সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দিচ্ছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, কংগ্রেস পরাধীন ভারতবর্ষে ৬২ বছর ধরে লড়াই করার পর দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। দুর্নীতিমুক্ত পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েই ভোট চেয়েছি। বনগাঁর স্থানীয় ইস্যু হিসেবে অবশ্যই ইছামতী নদী সংস্কারের বিষয়টি রাখা হয়েছে। আমাদের দাবি, নদীর উৎসমুখ মাজদিয়ায় কাটাতে হবে। আগে মতিগঞ্জ হাটে শ’য়ে শ’য়ে নৌকা ভিড়ত। আবারও জলপথে স্টিমার পরিষেবা চালু করা হোক। নোনা জল ঢুকলে নদীতে কচুরিপানা থাকবে না। বাম আমলেও ইছামতী সংস্কারের নামে ছেলেখেলা হয়েছে। উৎসমুখে না কাটিয়ে তেঁতুলিয়ায় ইছামতীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য পলি তোলা হয়েছে। সেই পলি আবার নদীর পাড়েই রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে তা ফের নদীতে চলে গিয়েছে। এটা সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া আর কী।