মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা সারদার পুণর্জন্ম হিসেবে তুলে ধরেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি । যুক্তি স্বরূপ হাজির করেছিলেন, মৃত্যুর আগে মা সারদার উক্তি ও সংখ্যাতত্ত্ব। নির্মলের সেই বক্তৃতার ক্লিপিং ইতিমধ্যেই ভাইরাল। এবার তা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিল বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ ।
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অসম্মান করা হয়েছে সারদা মায়ের।
জোরালো প্রতিবাদ জানাল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। মা সারদাদেবীকে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজি যে মন্তব্য করেছেন তার বিরুদ্ধে সরব হলেন বেলুড় মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবিরানন্দ মহারাজ। তাঁর কথায়, ‘আমাদের সকলের মা’য়ের এই অসম্মান আমাদের দুঃসহ বলে মনে হচ্ছে।’
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ডাঃ নির্মল মাজিকে বলতে শোনা গেছে ‘সারদা মা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে বিবেকানন্দের কিছু সতীর্থ মহারাজদের কাছে বলেছিলেন আমি তো কালীঘাট মন্দিরে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের খাল পেরিয়ে যাই। আমার মৃত্যুর এতদিন পরে আমি কালীঘাটে কালীক্ষেত্রে জন্ম নেব এবং মনুষ্য জন্ম নেব এবং আমি ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাব।’ এরপরেই নির্মল দাবি করেন পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে সারদা মায়ের মৃত্যুর পরে মমতা ব্যানার্জির জন্মের সময়টা সেই অঙ্কটা দিয়ে মিলে যাচ্ছে। মমতাই মা সারদা বলে এরপর দাবি করেন নির্মল। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় ৷
বৃহস্পতিবার নির্মলের সেই দাবি নিয়ে প্রতিবাদ জানায় রামকৃষ্ণ মিশন। নির্মলের নাম না করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বামী সুবিরানন্দ মহারাজ বলেন, ‘যথেষ্ট উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি সম্প্র্রতি কোনও এক রাজনৈতিক নেতা প্রকাশ্য বক্তৃতায় বলেছেন শ্রীশ্রী মা সারদাদেবী না কি দেহত্যাগের আগে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজদের কাছে বলে গেছেন তিনি এরপর মানবী রূপে দক্ষিণ কলকাতায় আবির্ভূত হবেন এবং তখন তিনি ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে যাবেন।
শ্রীশ্রী মা সারদাদেবী সম্পর্কে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন এবং অন্যান্য প্রকাশন সংস্থা থেকেও কয়েকটি প্রামাণিক গ্রন্থ এ যাবত প্রকাশিত হয়েছে তার কোনওটিতেই এই তথ্য নেই।’
মহারাজ জানিয়েছেন, ‘রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের সকল সন্ন্যাসী ও ব্রক্ষ্মচারী অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে মনে করছে উপরোক্ত নেতা তাঁর ওই বক্তব্যের দ্বারা আমাদের পরম আরাধ্যা শ্রীশ্রী মা সারদাদেবীর মর্যাদাহানি করেছেন।’
ক্ষোভের সঙ্গে মহারাজ বলেন, ‘আমাদের সকলের মা’য়ের এই অসম্মান আমাদের দুঃসহ বলে মনে হচ্ছে।’
মহারাজ আরও বলেছেন, অগণিত ভক্ত ইমেল করে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠকে জানিয়েছেন মা সারদাকে নিয়ে ওই নেতার বক্তব্য তাঁদের নিদারুণ আঘাত করেছে। শুধু তাই নয়। মহারাজ এও বলেছেন, ওই নেতার উক্তি মা সারদার মর্যাদাকেই ভুলুণ্ঠিত করেছে।”
প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জিকে নির্মল মাজি শ্রদ্ধা করেন এটা খুবই ভাল কথা। এবং সত্যি সত্যি মমতা ব্যানার্জির মধ্যে মানবিকতার বহু গুণ রয়েছে। তিনি বহু মানুষ এবং পরিবারকে নতুন আলো দেখিয়েছেন। কিন্তু নির্মল মাজি যে ধরনের একটা উক্তি করে বসেছেন সেটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এড়ানো গেলেই ভাল হত।
মমতা ব্যানার্জি মমতা ব্যানার্জি হিসেবেই সম্মানিত। কিন্তু নির্মল মাজি বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে বিষয়টিকে অকারণে বিতর্কে ঠেলে দিয়েছেন।’
সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার বলেন, ‘মনীষীদের সম্পর্কে এই ধরনের অসম্মান তৃণমূলের তরফ থেকে দিনের পর দিন হয়ে চলেছে। মানসিক অসুস্থতা না থাকলে এই ধরনের কথা বলা যায় না।’
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘রামকৃষ্ণ মিশনের দুঃখ ও অপমান এখনই শেষ হয়ে যায়নি। আরও বাকি আছে। অদূর ভবিষ্যতে ওই অঞ্চলেই বিবেকানন্দের সন্ধান পাওয়া যাবে। এখন দক্ষিণেশ্বরের রাস্তায় গভীর রাতে কান পাতলেই শোনা যায় রামকৃষ্ণদেব ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন।’
ওই বক্তব্য নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে নির্মল। তৃণমূলের অনেক নেতাও ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনওই এই জিনিস পছন্দ করেন না। তিনি রামকৃষ্ণ মিশনকে অন্য চোখে দেখেন। আসলে কেউ কেউ খেই হারিয়ে ফেলেন। বুঝতেই পারেন না স্তুতি গাইতে গিয়ে কখন লাগামছাড়া মন্তব্য করে ফেলছেন।
কেউ কেউ এও বলছেন, নির্মলের সময়টা একদম ভাল যাচ্ছে না। গতকাল তাঁর মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈধতা বাতিল করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন আবার তাঁর বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ ৷