দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ‘ মা’ শব্দের আয়তন যতই ছোট হোক, তার ব্যাপ্তি বিশাল। আগামিকাল অর্থাৎ ৮ মে রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস। তার আগে মায়ের সেই মহিমাই ফুটে উঠল ধূপগুড়ি বটতলী স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ আয়োজিত হল অভিনব মাতৃপূজা।স্কুলের কচিকাঁচারা মায়ের পা ধুয়ে দিয়ে দেবীরূপে পুজো করল তাঁদের। অভিনব সেই ফ্রেম ধরে রাখলেন আশপাশের লোকজন।
নেপথ্যে ধূপগুড়ি বটতলী স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ‘শিক্ষারত্ন’ জয় বসাক। লকডাউনের সময় ম্যাগাজিন ঘাঁটতে গিয়ে একটি প্রতিবেদন তাঁর নজর কাড়ে। প্রতিবেদনটি ছিল বৃদ্ধাশ্রম সংক্রান্ত। তাতে লেখা ছিল ইন্দোনেশিয়াতে একটিও বৃদ্ধাশ্রম নেই। কেন নেই?
তার মূল কারণ হিসেবে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়াতে নিয়ম করে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে সমস্ত স্কুলের পড়ুয়ারা তাদের মাকে পুজো করে। যার ফলে ছেলেবেলা থেকেই বাবা-মার প্রতি সন্তানদের কর্তব্যবোধ জন্মায়। এই বিষয়টি আকৃষ্ট করে শিক্ষারত্ন জয় বসাককে। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে বটতলী স্বর্ণময়ী স্কুলেও এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান করবেন। আলোচনার পর সকলে মত দেন। আয়োজিত হয় মাতৃআরাধনা।
প্রধান শিক্ষক বলেন, শুধু পড়াশোনা শিখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটাই স্কুলের একমাত্র প্রাধান্য নয়। বাচ্চাদের মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে, তাঁদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ করে তুলতে এমন অনুষ্ঠান।
কিন্তু মাতৃদিবস তো আগামীকাল। কেন আজ মাকে পুজো করল বাচ্চারা? সেই উত্তরও দিয়েছেন জয় বসাক। বলেন, আমাদের স্কুলের বাচ্চাদের অভিভাবকরা অধিকাংশই দিনমজুর। রবিবার তাঁদের আয়ের দিন। সেদিন বাড়তি কাজ পাওয়া যায়। তাই তাঁদের অনুরোধেই রবিবারের বদলে একদিন আগে গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
স্কুলে মাকে পুজো করতে পেরে ছাত্রছাত্রীরাও উচ্ছ্বসিত। তারা জানায় ভবিষ্যতে মা বাবাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষা তারা পেয়েছে এই অনুষ্ঠান থেকে। অভিভাবকরাও খুশি। তাঁরা বলছেন, আজকাল তো চারদিকেই দেখা যায় বড় হয়ে গিয়ে বাচ্চারা আর বাবা-মাকে দেখছে না, বাড়ি থেকে তারিয়ে দিচ্ছে। আজ এই স্কুলে যে অনুষ্ঠান হল, তা সমাজকে ভাল বার্তা দিচ্ছে।
সূত্রের খবর, স্কুলে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে শুনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় কিছু মানুষ। অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত এবং সঞ্জয় ভাওয়াল ২৫ কিলো দুধের পায়েস বানিয়ে স্কুলে হাজির হন। এমন সাধু উদ্যোগের জন্য বিনামূল্যে মাইকের ব্যবস্থা করে দেন স্থানীয় বাসিন্দা লিন্টু চৌধুরী। এছাড়া পায়েসের বাটি, চামচ,রুমাল সহ অন্যান্য জিনিস বিনামূল্যে সরবরাহ করেন অজয় ঘোষ।
ধূপগুড়ির এই স্কুলে মোট ২২২ জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে ১৯৮ জনের মা এসেছিলেন। জলপাইগুড়ি জেলার ডি আই প্রাইমারি শ্যামল চন্দ্র রায় এ বিষয়ে বলেন এই ধরনের অভিনব শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। রাজ্য সরকারের শিশুমিত্র পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছে এই স্কুল। অন্যান্য স্কুলও এই স্কুল থেকে অনুপ্রেরণা পাবে। এমন অভিনব কর্মসূচি আরও স্কুলে দরকার।
অভিনব এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলার প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক শ্যামলচন্দ্র রায়।