দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে। তারপর টেলি অ্যাকাডেমি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তা নিয়ে একটা বাক্যও বলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলনে উত্তরপ্রদেশের ভোট নিয়ে বড় দাবি তুললেন মমতা। ফের একবার সন্দেহ প্রকাশ করলেন ইভিএম মেশিনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ইভিএম নিয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে। আমি মনে করি অখিলেশ যাদব হারেননি। তাঁকে হারানো হয়েছে। ওখানে লুঠ চলেছে।” এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ইভিএমের ফরেনসিক টেস্ট হোক। ওগুলো কোন মেশিন ছিল, যাতে মানুষ ভোট দিয়েছেন সেগুলোই নাকি অন্য মেশিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”
এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আপ পাঞ্জাবে পেরেছে তার কারণ ওরা ওখানে ইভিএম পাহারা দিয়েছিল। যেমন আমরা এখানে পাহারা দিয়েছিলাম। উত্তরপ্রদেশে সেসবের বন্দোবস্ত ছিল না।”
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা এও বলেন, অখিলেশদের ভোট ২১ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে। আসন বেড়েছে ৭৮টি। অন্যদিকে বিজেপির আসন কমেছে ৫৪টি। তাঁর কথায়, “অখিলেশকে ওখানে একা লড়তে হয়েছে। বিজেপি, কংগ্রেস, বিএসপি সবার বিরুদ্ধে লড়েছেন। যেমন এখানে আমরা একা সবার বিরুদ্ধে লড়েছিলাম।”
বিরোধীদের ভোট ভাগাভাগি যে বিজেপিকে সুবিধা করে দিয়েছে তাও বলেছেন মমতা। সেইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, মিডিয়া হাইপ দিয়ে বিজেপিকে আগে থেকেই জিতিয়ে দিয়েছিল। তাই ওদের আর বাড়তি কষ্ট করতে হয়নি।
২০১৯ সালে লোকসভার পরেও ইভিএম নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সেইসময়ে এও বলেছিলেন, রাজ্যে পুর নির্বাচন ব্যালট পেপারে করানো হবে। যদিও তার পরের বছর ২০২০ সালে কোভিডের কারণে পুরভোট হয়নি। তার মধ্যেই ২০২১ সালে চলে আসে বিধানসভা ভোট। সেই প্রচারে গিয়ে মমতাকে প্রতিটা জনসভায় বলতে শোনা যেত স্ট্রং রুম পাহারা দেওয়ার কথা। কর্মীদের পইপই করে বুঝিয়ে বলতেন, স্ট্রং রুম পাহারা দিতে যাওয়ার সময়ে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাবেন। কেউ কিছু দিলে খাবেন না। ওরা ঘুঘনিতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিতে পারে।
এমনকি মমতা সেই সময়ে বলতেন, নির্বাচন কমিশনের আওতায় থাকা পুলিশকেও বিশ্বাস না করতে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান, সেই পাহারাদারির কাজটা হয়েছিল বলেই বাংলায় বিজেপি কিছু এদিক-ওদিক করতে পারেনি।
বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যে আজগুবি কথা বলছেন সেটা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। একবার বলেছেন ইভিএমের ফরেনসিক টেস্ট হোক, তার পরক্ষণেই বলেছেন অখিলেশের ভোট বেড়েছে, আসন বেড়েছে। দুটো একসঙ্গে হয় কী ভাবে?
তবে পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের অবস্থা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মমতা। শুধু বলেছেন, কংগ্রেস কংগ্রেসের কথা বলবে। আমি কিছু বলব না।
পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলপ্রকাশের পর তা নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য বাজেট নিয়ে বলতে গিয়ে সংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রাধনমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন,‘‘কয়েকটা রাজ্যে জিতে ২০২৪-এর জন্য লাফাচ্ছে। বাংলায় গোহারা হেরেও লজ্জা নেই।’’ বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পরই প্রধানমন্ত্রী দলীয় সদর দফতর থেকে বলেন, উত্তরপ্রদেশের ফলে স্পষ্ট ২০২৪-এ ফের ক্ষমতায় আসছে বিজেপি।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এই মন্তব্যকেই কটাক্ষ করেছেন। উত্তরপ্রদেশের ফল নিয়ে মমতার মত, ইভিএম-এর কারচুপিতে জিতেছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, পাঁচ রাজ্যে ফল প্রকাশের পর বিজেপি-র উদ্দেশ্যে প্রায় একই টুইট বার্তায় প্রশান্ত কিশোর লেখেন , ‘ভারতের লড়াই হবে ২০২৪ সালে, কোনও রাজ্যের ভোটে নয়। সাহেব তা জানেন। তাই সুচতুর ভাবে বিরোধীদের উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তারের জন্য রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফল ঘিরে উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই মিথ্যা ব্যাখ্যার শরিক হবেন না।’
শুক্রবার এই নিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘এ যেন মত্যুর আগে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেওয়া। জন্মের আগে অন্নপ্রাশনের দিন ঘোষণা করা। এখনও তো দু’বছর বাকি। কত কী হতে পারে এই দু’বছরে।’’