দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাজ্যের ২০ জেলার ১০৮ পুরসভায় ভোটগ্রহণ চলেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও সকাল থেকে বুথ দখল, ছাপ্পা, বোমাবাজির অভিযোগ উঠল। ইভিএম ভাঙচুর করা হয়েছে একাধিক জায়গায়। ভোটে আক্রান্ত বিরোধী
রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাজ্যের ২০ জেলার ১০৮ পুরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ছিল প্রত্যেক ভোটকেন্দ্র। প্রতি বুথে ছিল রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী।
নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে পুর এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলি। মোতায়েন করা হয়েছে ৪৪ হাজার পুলিশ। মোট ২ হাজার ১৭১টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ। ২০ জেলায় ছিল১৩৫ জন পর্যবেক্ষক।
এত নিরাপত্তার ঘেরাটোপের মধ্যেও পুরভোটে অশান্তি অব্যাহত ছিল৷ নানা দিক থেকে এসেছে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর। এবনগাঁ পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ এনে কেঁদে ভাসালেন বিজেপি প্রার্থী সীমা বিশ্বাস। ঘটনাটি ঘটেছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরপল্লি বনবিহারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বুথে। অভিযোগ, এদিন ভোট শুরু হতেই অশান্তি ছড়ায় ওই ওয়ার্ডে। ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই বুথের নির্দল প্রার্থী ও তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট (মেয়ে)–কে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল প্রার্থীর স্বামীর বিরুদ্ধে।
একইসঙ্গে তাঁদের বুথের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন নির্দল প্রার্থী। আরও অভিযোগ, নির্দল প্রার্থীর ২ মেয়ের ফোনও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে ইতিমধ্যেই থানায় দ্বারস্থ হয়েছেন ওই নির্দল প্রার্থী। আবার একই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সীমা বিশ্বাস তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ এনে কেঁদে ভাসালেন। বুথের বাইরে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে।তিনি অভিযোগ করেন, ‘মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। কাউকে ভোট দিতে দিচ্ছে না। ওরা সবাই ২–৩ বার করে ভোট দিয়ে যাচ্ছে।’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল প্রার্থী বন্দনা দাস। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, বিরোধীরা তাঁদের উপরে হামলা চালিয়েছে।
ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোট চলছে বলে অভিযোগ করলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি পুলিশের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ মেরুদণ্ডহীন হয়ে গিয়েছে।’’
এই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সীমা বিশ্বাস ঠাকুর পল্লী বনবিহারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট লুট করছে তৃণমূল বলে অভিযোগ করে কেঁদে ভাসালেন ।
বনগাঁ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরপল্লি বুথে নির্দল প্রর্থী এবং তার নির্বাচনী এজেন্টকে মারধোর অভিযোগ তৃণমূল প্রার্থীর স্বামীর বিরুদ্ধে। নির্দল প্রর্থীকে বুথে ঢুকতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ। নির্দল প্রার্থীর দুই মেয়ের ফোন ভাঙে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। পুলিশের দ্বারস্থ প্রার্থী।
অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল প্রার্থী বন্দনা দাসের তিনি বলছেন বিরোধীরা তাদের উপরে হামলা চালিয়েছে এবং নাটক করছে ।
বনগাঁর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআইএম, বিজেপি এবং নির্দল প্রার্থীরা তাদের বুথে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতিরা এই অভিযোগে বনগাঁ থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা৷
বনগাঁ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী দেবজানি চাটার্জীকে শারীরিক হেনস্তা করার অভিযোগ , এই ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর স্বামীর বিরুদ্ধে । উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় ।
ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগ, বারাসতের সাত নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী গ্রেফতার৷
রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৮৯ নম্বর বুথে নির্দল প্রার্থী মহুয়া দাসের শাড়ি খুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ। বহিরাগতরা ঢুকে ভোট লুঠ করে, বাধা দিতে গেলে তার উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার খবর পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিদনিধিরা ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলতে গেলে তাদের মারধর করা হয়, ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়। সমস্ত ঘটনা পুলিশের সামনেই ঘটলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলেই অভিযোগ।
বারাসতের সাত নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এক বহিরাগতকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
বারাসতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক বুথে উত্তেজনা।বারাসতেবুথে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বারাসত পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্কুলের বুথে BJP প্রার্থীর এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। এরপরই BJP প্রার্থী আছাড় মেরে EVM ভেঙে দেন বলে খবর। প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।
অশোকনগরে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুই কংগ্রেস কর্মীকে মারধরের অভিযোগ।
উত্তর ব্যারাকপুরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মতিঝিল স্কুলে CPIM প্রার্থী অস্মিতা করের এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। বুথের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করলেন CPIM প্রার্থী।
বহরমপুরে অধীর চৌধুরীকে ঘিরে বিক্ষোভ।
আরামবাগ পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বসন্তপুরে বুথের বাইরে CPIM প্রার্থী সুশীল বাউড়িকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন বাম প্রার্থী। অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের।
১০৮ পুরসভায় মোট ২,২৭৬টি বুধ রয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট ৪৪ হাজার রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সব বুথেই থাকবে সিসি ক্যামেরা। কমিশন সব বুধকেই স্পর্শকাতর ঘোষণা করেছে। বুথে বুথে মোতায়েন থাকবে ইএফআর, এসটিএফ এবং কম্যান্ডো। বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে বীরভূম, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানে। কমিশনের কড়া নির্দেশ, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোট সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য ১৭ জন বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ, সাধারণ এবং বিশেষ পর্যবেক্ষকদের উপরও নজরদারি চালানো হবে। এই কাজের ভার দেওয়া হয়েছে বিশেষ ১০ জন আইএএস আধিকারিকের উপরে। তাঁরা প্রত্যেকেই ভোট পরিচালনার বিষয়ে অভিজ্ঞ। নির্বিঘ্নে ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের ইতিবাচক ভূমিকাও রয়েছে। বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুরসভাগুলিতে ভোট পরিচালনার জন্য জেলা পিছু এক জন করে আধিকারিক দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়া এক জন আধিকারিকই দুই বা ততোধিক জেলার ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।
মালদার দুটি পুরসভা- ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পুরসভা। ইংরেজবাজার পুরসভার ৪০টি এবং পুরাতন মালদা পুরসভার ২০টি বুথকে বিশেষ স্পর্শকাতর হিসেবে বাড়তি নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। আবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় দুটি পুরসভা- বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুর। বালুরঘাটে মোট ২৫টি ওয়ার্ডের ৮৫টি বুথ এবং গঙ্গারামপুরে মোট ১৮টি ওয়ার্ডে ৫৯টি বুথ। দুটি পুর এলাকাতেই কোনও স্পর্শকাতর বুথ নেই।
উত্তর দিনাজপুর জেলায় আবার ৩টি পুরসভা- ইসলামপুর, ডালখোলা এবং কালিয়াগঞ্জ। ইসলামপুর পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের ৫৩টি বুথে, ডালখোলা পুরসভার ১৬ টি ওয়ার্ডের ৩৭টি বুথে, আর কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের ৫৬টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। প্রতিটি বুথে রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
তুলনামূলক কম স্পর্শকাতর জেলাগুলির মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলায় তিনটি পুরসভা- জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি এবং মালবাজারে মোট ৫৭টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হবে।
কোচবিহার জেলার ৬ টি পুরসভার মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই দিনহাটা পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল। তাই রবিবার কোচবিহার, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি- ৫টি পুরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিশেষ নজর রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। এই জেলার মোট তিনটি পুরসভা- কাঁথি, এগরা ও তমলুক। যার মধ্যে তমলুক পুরসভায় মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ২০টি এবং মোট বুথ সংখ্যা ৭০টি। কাঁথি পুরসভায় মোট ২১টি ওয়ার্ডের ৬৮টি বুথে ভোট হবে। আর এগরা পুরসভার মোট ১৪টি ওয়ার্ডের ৩০টি বুথে ভোট হবে।
রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। কংগ্রেসের প্রার্থীকে মারধর। CPIM এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ। বিদ্যানিধি স্কুলের ২০০ নম্বর বুথের ঘটনা।
কৃষ্ণনগর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী সুকদেব কুণ্ডুর বাড়িতে দলীয় ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ। অভিযুক্ত শাসকদল।
কাঁথির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাতীয় বিদ্যালয়ের ১১২ নম্বর বুথে ভোট দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরি।
মেদিনীপুর পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডে BJP প্রার্থী কুহেলি দত্তের টেন্ট অফিস পোড়ানোর অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে। BJP-র তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।