দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ইউক্রেনের ভূখণ্ডে শুরু হয়ে গেল রাশিয়ার সেনা অভিযান। যা এতদিন অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করছিল পশ্চিমী দুনিয়া, ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই তা পুরোদস্তুর শুরু হয়ে গেল। ইউক্রেনের সেনাকে অস্ত্র ছাড়ার কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সংবাদ সংস্থা এএফপি-র দাবি, রুশ সেনা ইতিমধ্যেই ডনবাস এলাকায় (ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এলাকাকে একত্রে এই নামে ডাকা হয়) সামরিক অভিযান শুরু করে দিয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
ইউক্রেন সেনাকে অস্ত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিন জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে ইউক্রেন সীমান্তে ২ লাখ রুশ সেনা মোতায়েন হয়েছে। ডনবাস এলাকায় সামরিক অভিযানও শুরু হয়ে গেছে। শোনা গেছে, রুশ সেনাবাহিনীকে অস্ত্র চালানোর অনুমতিও দিয়েছেন পুতিন।
বুধবার রাতেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধের আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। ইউরোপে সাঙ্ঘাতিক ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি। সেনা আগ্রাসনের বিরোধিতা করে শান্তি বজায় রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বোধহয় আর রোখা গেল না। পশ্চিমী দুনিয়া এতদিন যে আশঙ্কা করছিল তাই সত্যিই হতে চলেছে।
মধ্যরাত পার হতেই সেনা অভিযানের ঘোষণা করে দিয়েছে রাশিয়া। আক্রমণ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আমেরিকাও জানাচ্ছে, ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ দিক দিয়ে পুরোদস্তর হামলা চালানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে রুশ সেনা। বেলারুশের ফরোয়ার্ড পজিশনে মোতায়েন রয়েছে রুশ সেনা হেলিকপ্টার। সেগুলি আকাশ থেকে মাটিতে আক্রমণ চালাতে পারে। ওই অঞ্চলে তৈরি করা হয়েছে একটি বৃহৎ ফিল্ড হাসপাতাল। বেলারুশের এক বিমান ঘাঁটিতেও ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ রুশ সেনাকে জড়ো হতে দেখা গিয়েছে। ইউক্রেনের উত্তরে ও উত্তর-পূর্বে সীমান্ত বরাবর সেনা সমাবেশ করেছে রাশিয়া। ক্রাইমিয়ায় এক বিমান ঘাঁটিতেও রুশ সেনাদের দেখা গিয়েছে।
সোমবারই পুতিন সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের দু’টি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলে তারা যেন ঢুকে পড়ে। যে দু’টি অঞ্চলকে ক্রেমলিন স্বীকৃতি দিয়েছে, রুশ সেনা সেখানে শান্তিরক্ষার কাজ করবে। পরে দেখা গেছে, রাশিয়ার ট্যাঙ্কগুলি দোনেৎস্ক শহরে ঢুকছে। দোনেৎস এবং লুগানস্ক বাস্তবে ইউক্রেনেরই অংশ। ওই দু’টি অঞ্চলে রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সক্রিয়। পুতিন জানান, ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সবরকম সাহায্য করবে রাশিয়া। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ক্রেমলিনে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তিতে সই করছেন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান ইতিমধ্যেই পুতিনকে অনুরোধ করেছেন সেনা আগ্রাসন বন্ধ করতে। যদিও সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, ডনবাস এলাকায় বিশেষ অভিযানে এখনও অনড় পুতিন।
যদিও নিজের ভাষণে জেলেন্স্কি বার বার দাবি করেছেন, তাঁর দেশ রাশিয়ার কাছে মোটেও আতঙ্কের কারণ নয়। তিনি বলেন, ‘‘ইউক্রেনের জনতা এবং সরকার শান্তি চায়। কিন্তু যদি আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়াই জারি থাকবে।’’ এই প্রেক্ষিতেই জেলেন্স্কি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন রুশদের কাছে পুতিনের আগ্রাসন মোকাবিলায় উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।