দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এখন কেন্দ্রীয় সরকারের বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। সেই মন্ত্রকের অধীনে থাকা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসেই দলের বিক্ষুব্ধদের নিয়ে শনিবার বৈঠকে বসেন শান্তনু।
বঙ্গ বিজেপির ভিতরে যে আরও একটা বিজেপি তৈরি হয়ে গিয়েছে তা অনেক দিন ধরেই মালুম হচ্ছিল। শনিবার তা প্রকাশ্যে চলে এল। একদিকে পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতারা।
সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু থেকে সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতারা। এরা সকলেই বিজেপি-র সদ্য ঘোষিত রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। এ ছাড়াও রীতেশ তিওয়ারি, তুষার মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস মিত্র এবং রাজ্যের দুই বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং অশোক কীর্তনীয়াও যোগদেন বিক্ষুব্ধদের ওই বৈঠকে।
অন্যদিকে সেই বৈঠকের সময়েই বিজেপি দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বললেন, ওটা অফিশিয়াল পার্টি মিটিং নয়। পোর্টের গেস্ট হাউসের বাইরে পোস্টার ঝুলতেও দেখা গেল। তাতে লেখা, তৃণমূলের এজেন্ট পচা বিজেপি নেতারা সাবধান। বিজেপিকে শেষ করে নিজেদের গোছানোর উদ্যোগ চলবে না।
প্রসঙ্গত রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলে কোন্দল শুরু হয়ে যায়। বিজেপি-র মতো ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ দলে এটা বেনজির বলেই মনে করেন গেরুয়া শিবিরের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, দলে রদবদল অতীতেও হয়েছে। কিন্তু এই ভাবে রাজ্য স্তরের নেতারা প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখাননি। প্রথমেই দলের একাধিক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান সায়ন্তন। এর পর তা যেন সংক্রমণের চেহারা নেয়।
এদিন পোর্টের গেস্ট হাউসের বৈঠক শেষে বনগাঁর সাংসদ যা বললেন তা রীতিমতো বিস্ফোরক। যা বললেন শান্তনু !
তাঁর কথায়, বঙ্গ বিজেপিকে একজন ব্যক্তি কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, এ ভাবে কমিটি গঠনে ৯০ শতাংশ বদল মানা যায় না। নতুন যাঁরা এসেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে এটা করানো হয়েছে। একজন সংগঠনের দখল নেবেন বলে।
এখন প্রশ্ন, এই একজন কে? কার বিরুদ্ধে এই ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিলেন ঠাকুর বাড়ির ছেলে? যদিও
শান্তনু নাম নেননি। তাঁর কথায়, এই লড়াইতে দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী সবাই তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। শান্তনু বলেন, আমরা চাই না বিজেপি বাংলায় শেষ হয়ে যাক। আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত শক্ত করতে চাই।
তাহলে ওই একজন কে?
অনেকের মতে, নতুন সংগঠন সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেই শান্তনুদের ক্ষোভ। যদিও নাম নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি বনগাঁর সাংসদ। নাম না করে তাঁর অপসারণও দাবি করেছেন শান্তনু।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়া, নতুন কমিটি নিয়ে বিজেপির মধ্যে অসন্তোষ এসব কিছুই আর চাপা নেই। মতুয়া বিধায়কদের বিদ্রোহ, বাঁকুড়ার বিধায়কদের ক্ষোভ, শান্তনুর অসন্তোষ—এসবই এখন বহুল চর্চিত। কিন্তু এমন আলাদা করে বৈঠক করে সাংবাদিক সম্মেলন নজিরবিহীন।
ভোটের আগে মতুয়াদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিজেপি রাখছে না, এই অভিযোগে অনেক আগে থেকেই ক্ষুব্ধ শান্তনু। তিনি বিজেপি ছেড়ে দেবেন কি না তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক গ্রুপ ছাড়ার পর শান্তনু ঠাকুর বলেন, “রাজ্য বিজেপি-র বর্তমান নেতৃত্বের শান্তনু ঠাকুর বা মতুয়া সমাজের ভোট নিষ্প্রয়োজন। তাই আমারও ওই সব গ্রুপে থাকার দরকার নেই। সময়মতো সব জবাব দেব।” এর পরে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকও করেন শান্তনু। তাতে অস্বস্তি বাড়ে রাজ্য বিজেপি-র। সে অস্বস্তি নতুন করে বাড়ল শনিবার।