দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেশের উপর চরম প্রত্যাঘাত করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। প্রাথমিক ভাবে তেমন হেলদোল না দেখালেও বেলা গড়াতেই বদলে যায় চিত্র। ন্যাশনাল কম্যান্ড অথরিটির সঙ্গে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ করে এই ন্যাশনাল কম্যান্ড অথরিটি। আর এই বৈঠক শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারতকে এ বার ‘সারপ্রাইজ’ দিয়ে চমকে দেবে পাকিস্তান।
মঙ্গলবার ভোররাতে বালাকোটের জইশ ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। প্রাথমিক ভাবে পাকিস্তান অবশ্য দাবি করেছিল বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান আদপেও তাদের কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। উল্টে পাকিস্তানি সেনার আক্রমনে কোনওরকমে বোমা ফেলে নাকি পালিয়ে এসেছিল বায়ুসেনা। এমনটাই দাবি ছিল ইসলামাবাদের। কিন্তু বেলা গড়াতেই একেবারে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো দিকে ঘুরে অন্য সুরে গাইতে শুরু করে পাক প্রশাসন। তড়িঘড়ি বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ নিরাপত্তা সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এই বৈঠক শেষে ইমরান বার্তা বলেন, “পাকিস্তানের নাগরিকদের বলছি সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।”
ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিও ভারতের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, “আমাদের অবহেলা করবেন না। আমরা জানি কী ভাবে সঠিক সময়ে যোগ্য জবাব দিতে হয়। পাকিস্তানের যা করা উচিত তাই করা হবে। আমরা আমাদের নাগরিকদের হতাশ করবো না।” তবে এক সাংবাদিক কুরেশিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এতই যখন শক্তি তখন কেন ভারতীয় বায়ুসেনার একটা বিমানকেও রুখতে পারেনি পাকিস্তান? এ হেন প্রশ্নে বেজায় চটে যান মাহমুদ কুরেশি। কড়া গলায় সাংবাদিককে ধমকে বলেন, “আপনি একজন পাকিস্তানি। তাই পাকিস্তানের ক্ষমতাকে সম্মান করুন।”
প্রসঙ্গত পরমাণু অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংগঠন ন্যাশনাল কম্যান্ডার অথরিটির সঙ্গে ইমরানের বৈঠকের খবরে, কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে অনেকেরই। তবে ইমরানের ডাকা এই বৈঠককে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেনার তরফে বলা হয়েছে, সবরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছেন জওয়ানরা। এমনকী নিউক্লিয়ার বা পরমাণু অস্ত্র সম্পর্কে খোদ পারভেজ মোশারফ বলেছেন, এ ব্যাপারে পাকিস্তানের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে ভারত। ডন সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী মোশারফ বলেছেন, এই মুহূর্তে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আঘাত হানলে, একটা অস্ত্রের পরিবর্তে ২০টা নিউক্লিয়ার বোমা মেরে পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দেবে ভারতীয় সেনা।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামাতে সিআরপিএফের কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গিরা। শহিদ হন ৪০জন সিআরপিএফ জওয়ান। এই হামলার পরেই ভিডিও বার্তায় দায় স্বীকার করে নেয় পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। কিন্তু এরপরেও পাকিস্তান সাফ জানিয়েছিল এ ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নয় পাকিস্তান। এমনকী পাকিস্তানের মাটিতে কোনও জঙ্গি সংগঠনের বাস নেই বলেও দাবি করেছিল পাক প্রশাসন। গোটা আহ্মলার দায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্তা ‘র’-এর বিরুদ্ধে তুলে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিল পাকিস্তান।
তবে পুলওয়ামায় হামলার পর থেকেই ক্ষোভে ফুটছিল গোটা ভারত। সে দিনের হামলার বদলা নিতেই মঙ্গলবার চরম প্রত্যাঘাত হানে ভারতীয় বায়ুসেনা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জইশের সবচেয়ে বড়, শক্তিশালী এবং সক্রিয় ঘাঁটি। খতম হয় প্রায় ৩৫০ জঙ্গি। যাদের মধ্যে রয়েছে জইশ চিফ মাসুদ আজহারের বড় ভাই ইব্রাহিম আজহার, ছোট ভাই মৌলানা তলহা সইফ এবং শ্যালক ইউসুফ আজহার। ১৯৯৯ সালে কন্দহর বিমান হাইজ্যাকের ঘটনার অন্যতম চক্রী ছিল ইউসুফ ও ইব্রাহিম। তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের মাথা মৌলানা মাসুদ আজহার।