দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আজ ও কাল বান আসতে পারে, ৫ মিটার জল উঠবে, সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস সত্যি করে বুধবার সকালেই ওডিশা ও বাংলার উপকূল এলাকায় আছড়ে পড়েছে ইয়াস। সমুদ্রের বিপুল জলোচ্ছ্বাস লন্ডভন্ড করে দিয়েছে দিঘা, মন্দারমণির মতো অঞ্চল। কলকাতায় ইয়াসের প্রভাব তেমন পড়েনি ঠিকই। কিন্তু ঝড় নিয়ে এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ নেই, এদিন আরও একবার সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে সঙ্ঘাতকে গুরুত্ব দেব না।’’ রাজ্যে ১৩৪টি নদী বাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝড়-বৃষ্টিতে। ‘সন্ধে ৮টা ৩৫ মিনিট নাগাদ আবার বান আসতে পারে। তাই ত্রাণ শিবিরে যাঁরা আছেন তাঁরা এখনই বাড়ি ফিরবন না। ’’
বৃহস্পতিবার আরও বড় বান আসতে পারে সমুদ্রে। কালও বৃষ্টি হতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী পর্যায়ের প্রভাবকে অবহেলা করা যাবে না।
ইয়াস-এ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ কোটি মানুষ। ১৫ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বাঁচানো গিয়েছে। জানালেন মমতা।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা এড়াতে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর। বললেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমি সাধারণ মানুষকেও অনুরোধ করব বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার।’’
বাঁধ মেরামতিতে কেন্দ্র সাহায্য করে না, জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বললেন, ‘‘বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করছে রাজ্য সরকার।’’ সেচ দফতরকেও জলাধারে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি ভেবেছিলেন বৃহস্পতিবারই এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। কিন্তু তাঁর কাছে খবর রয়েছে বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি হবে। তাই হেলিকপ্টারে যেতে পারবেন না। শুক্রবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি পরিদর্শনে যাবেন তিনি।
অন্যদিকে, ল্যান্ডফল শেষে হলেও এখনও দাপট কমেনি ইয়াসের । ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে আছড়ে পড়লেও এ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নিজের অস্তিত্ব সমানে জানান দিচ্ছে এই সাইক্লোন। এখনও সেটি রয়েছে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই। আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ রিপোর্ট জানাচ্ছে, আরও ৯ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাবে ইয়াস। জেলায় জেলায় চলবে ঝোড়ো হাওয়া।
বুধবার দুপুরে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ঝড়টা এখন উত্তর ও উত্তর-পূর্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অর্থাৎ ল্যান্ডফলের পর থেকে ঝাড়খণ্ডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ইয়াস।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনও ঝড়টি রয়েছে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই। আগামী তিন ঘণ্টায় সেটি পরিণত হবে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে। আগামী ছয় ঘণ্টায় সেটি দুর্বল হয়ে পরিণত হবে সাইক্লোনে। ‘ অর্থাৎ আগামী নয় ঘণ্টা পর্যন্ত দাপট দেখাবে এই ঝড়।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এদিন বালাসোর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আছড়ে পড়ে ইয়াস। সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে ঝড়ের তাণ্ডব। ল্যান্ডফলের সময় গতিবেগ ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। ঝোড়ো হাওয়ার দাপট ছিল ১৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।