দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পঞ্চম দফার ভোটের আগে নাটকীয় মোড়। রাজনৈতিক প্রচারে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগি, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার প্ররোচনা, হিংসায় উস্কানি এবং সর্বোপরি ভোটারদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিল নির্বাচন কমিশন। মমতার প্রচারের উপর ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল নির্বাচন সদন। কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ, আজ সোমবার রাত ৮ থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ৮ টা পর্যন্ত কোনও প্রচার করতে পারবেন না দিদি।
এমন নিষেধাজ্ঞাই জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামিকাল মঙ্গলবার বেলা ১২ থেকে ধর্নায় বসতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক- কমিশনের নিষেধাজ্ঞাকে এভাবেই সম্বোধন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে নেত্রী লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বেলা ১২ থেকে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসব।’
পঞ্চম দফার আগে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্যকর মোড়। ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রচার করতে পারবেন না তৃণমূল সুপ্রিমো বলে ঘোষণা কমিশনের। প্ররোচনামূলক মন্তব্যের জেরেই এই নিষেধাজ্ঞা বলে জানাচ্ছে কমিশন। আজ রাত ৮টা থেকে আগামিকাল রাত ৮টা পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না মমতা।
কমিশনের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পরই তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে জোড়াফুল শিবির। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘ আজ গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন।’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বিজেপি-র শাখা সংগঠন নির্বাচন কমিশন কুৎসিতভাবে এই কন্ঠরোধের চেষ্টা করল। কুৎসিত করে ব্যবহার করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তার প্রতিবাদ করায় এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই অপচেষ্টা সফল হবে না।’ কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটারে লিখেছেন, ‘১২ এপ্রিল, গণতন্ত্রের কালো দিন।’
To protest against the undemocratic and unconstitutional decision of the Election Commission of India, I will sit on dharna tomorrow at Gandhi Murti, Kolkata from 12 noon.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) April 12, 2021
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু ভোট ভাগ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মন্তব্যের জেরে কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তার জেরে তৃণমূল সুপ্রিমোকে নোটিশ পাঠায় কমিশন। এই প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব সন্তোষজনক নয় বলে জানাল কমিশন। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগে গত শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দ্বিতীয়বার নোটিশ পাঠায় কমিশন। কেন গত ২৮ মার্চ এবং ৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছিলেন তিনি তা জানতে চাওয়া হয় ওই নোটিশে। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেছিলেন, ‘একটা কেন ১০টা নোটিশ পাঠাতে পারেন আমাকে।’
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল নির্বাচনী সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সংখ্যালঘু ভাইবোনদের কাছে হাত জোড় করে বলছি, বিজেপি-র কাছ থেকে যে শয়তানরা টাকা নিয়েছে, তাদের কথা শুনে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করবেন না। মমতার মন্তব্যের জেরে নির্বাচন কমিশনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির নেতৃত্বে অভিযোগ জানায় প্রতিনিধি দল। তারপরই কমিশন পদক্ষেপ করবেন।
কমিশনের সচিব রাকেশ কুমারের দেওয়া ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি যে ধরনের প্ররোচনা দিচ্ছেন ও উত্তেজক কথা বলছেন তা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক। তাই এই ধরনের মন্তব্য করা থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাঁর প্রচারের উপর ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।