দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নন্দীগ্রামে ভোটের আগে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার ভোটের আগে শেষবেলার প্রচারে রোড শো করলেন মমতা। রোড শো’র পাশাপাশি সভাও করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রোড শো শেষে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মমতা বললেন, ‘৪৮ ঘণ্টা মাথা ঠান্ডা। কুল কুল তৃণমূল, ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল, আর ভোট পাবে জোড়াফুল।’
এরপরই মমতা বলেন, ‘ভালো করে ভোট করে নিন, তারপর পান্ডাদের অধিকার সব কীভাবে কাড়তে হয়, তা বাংলা জানে।’ বিজেপি-কে তুলোধনা করে তৃণমূলনেত্রী আরও বলেন, ‘নন্দীগ্রাম ও বাংলা থেকে বিজেপি-কে বোল্ড আউট করে দিন।’ নন্দীগ্রামে কেন ভোটে দাঁড়ালেন, এ নিয়ে এদিন ফের মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামের মা-বোনেদের শ্রদ্ধা জানাতে ভোটে দাঁড়িয়েছি এখানে। একবার যখন নন্দীগ্রামে ঢুকেছি, আমি বেরোব না। আমি মডেল নন্দীগ্রাম তৈরি করে দেব। হলদিয়া-নন্দীগ্রামের মধ্যে সেতু তৈরি করে দেব। খেলা হবে। যারা গুন্ডামি করবে, তাদের ভোট দিয়ে রাজনৈতিকভাবে কবর দিন।’
শুভেন্দুকে নিশানা করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘হাজার হাজার টাকা চুরি করেছে গদ্দার-মীরজাফর। টাকা দিলে নিয়ে নেবেন। কিন্তু, ভোট দেবেন না। পুলিশের গাড়ি থেকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি থেকে টাকা বিলি করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এবার বাংলায় আট দফায় ভোট। একুশের লড়াইয়ে বাংলার কুর্সি কার হাতে থাকবে? এর উত্তর মিলবে আগামী ২ মে। ওই দিনই ভোটের ফল ঘোষণা। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে এবার হিংসা রুখতে তৎপর হয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের মুখে পুলিশ-প্রশাসনে একঝাঁক বদল করা হয়েছে। ভোটের দিন ঘোষণার আগেই এবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এসে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। হিংসা রুখে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করা এবার কমিশনের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সুরক্ষাবিধির দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, এবারের ভোটে অন্যতম ব্যাটলফিল্ড নন্দীগ্রাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারী দ্বৈরথের দিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। ভোটের আবহে শাসক-বিরোধী চাপান-উতোরে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। সবমিলিয়ে ভোটের টান টান উত্তেজনাপূর্ণ মেজাজে ফুটছে গোটা বাংলা।
শেষবেলার জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছেন তিনি। প্রথম রোড শো এবং পরে তিনটি জনসভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু, পথে নামতেই কিছুটা ছন্দ কাটল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুইলচেয়ার বেরতেই নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তিনি। তাঁকে ঘিরে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে দেখা গেল একদল বিক্ষোভকারীকে। যা নিয়ে রীতিমতো সরগরম হয়ে ওঠে এলাকা।
এদিন ভাঙাবেড়া থেকে সোনাচূড়া পর্যন্ত রোড শো করেন মমতা। এরপর সোনাচূড়াতে পৌঁছে প্রথম জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। কার্যত জমি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন নেত্রী। তাঁর বক্তব্যের মধ্যে বারবার বিজেপি-র বিরোধীতা উঠে আসে এদিনও। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি থেকে টাকা বিলি হচ্ছে। ভিন রাজ্যের পুলিশ এনে অত্যাচার করার খবর রয়েছে আমার কাছে।’ কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মমতা পরামর্শ, ‘৪৮ ঘণ্টা মাথা ঠাণ্ডা রাখুন আপনারা। ইভিএম খারাপ হলেও অপেক্ষা করবেন। ভোট না দিয়ে কেউ ফিরে যাবেন না।’ সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, ‘ওরা তো আর দুটো দিন মাত্র।’
নন্দীগ্রামকে নিয়ে আগামীদিনে তাঁর একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘নন্দীগ্রামকে আমি মডেল নন্দীগ্রাম করে দেব। হলদিয়া ও নন্দীগ্রামের মধ্যে ব্রিজ হবে।’