দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এগরার সভা থেকে অমিত শাহ রবিবাসরীয় দুপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ‘ভাইপোর টাকা আপনার কাছে আসে।’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ওই বক্তৃতার কিছুটা পরেই পূর্ব মেদিনীপুরের দক্ষিণ কাঁথির সভা থেকে গদ্দারদের সম্পত্তি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানালেন মমতা।
রবিবাসরীয় ভোটপ্রচারে উত্তপ্ত বঙ্গ। প্রথম দফা ভোটের সপ্তাহখানেক আগে বক্সিং গ্রাউন্ড মেদিনীপুর। একুশের ভোটযুদ্ধে মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে আরও কড়া হচ্ছে প্রতিপক্ষের প্রতি আক্রমণ। দিন নাম না করে একদা বিশ্বস্ত সহকর্মী থেকে এখন ভোটকেন্দ্রের প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হওয়া শুভেন্দু অধিকারী সহ গোটা অধিকারী পরিবারকে তীব্র আক্রমণ মমতার। বললেন, ‘ গদ্দার-বিশ্বাসঘাতক-মীরজাফরের দল, হাত ধরে বিজেপিকে এনেছে। ২০১৪ থেকে যোগাযোগ রেখেছে। মানে ঘরে ঢুকে সিঁদ কেটেছে। এদের জমিদারি থেকে মেদিনীপুরকে মুক্ত করতে হবে। ‘ দলবদলের দিন অমিত শাহের সভায় শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, ২০১৪ থেকে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করলেও এ দিনের সভায় সেই প্রসঙ্গ টেনেই মমতার মন্তব্য।
কাঁথিতে তিনি বলেন, “ভোট এলেই কাউকে ৫০০ টাকা কাউকে হাজার টাকা দেয়। গদ্দারদের অনেক টাকা তো! করে খেয়েছে আমি বুঝতেই পারিনি। আমি একটা বড় গাধা জানেন তো! আমি নিজেই নিজেকে গাধা বলছি তার কারণ আমি বুঝতে পারিনি এদের এত গুণ, লুঠ দাঙ্গা মানুষ খুন।”
এখানেই থামেনি মমতা। তাঁর কথায়, “এত টাকা করেছে যে সেই টাকা বাঁচানোর জন্য পালিয়েছে।” কত টাকা? মমতার কথায় হিসেব নেই কত টাকা। তিনি বলেন, “আমাকে জ্যোতির্ময়দা বলল, পাঁচ হাজার কোটি টাকা করেছে। কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক আর কী সব আছে…। হাজার হাজার কোটি টাকা করেছে।”
মমতা কাকে নিশানা করতে চেয়েছেন তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। দীর্ঘদিন সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বাংলার অন্যতম বড় কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক এই কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক লিমিটেড। রাজ্যের অনেক কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে যখন লালবাতি জ্বলে গিয়েছে তখন কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকেছে স্বমহিমায়। এদিন সেসব নিয়েই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে চাইলেন তৃণমূলনেত্রী।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, এদিন মমতার এই মন্তব্যের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমার একটা ছোট প্রশ্ন রয়েছে। হাতে গোণা কয়েক জন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেছেন। তাঁদের কাছে যদি ৫ হাজার কোটি টাকা থাকে, তা হলে বাকি যারা রয়ে গেলেন তাঁদের কাছে কত টাকা রয়েছে? কত হাজার কোটি টাকা? তা দিয়ে বাংলার সব দেনা শোধ করা যাবে?”
এত দিন বেইমান, গদ্দার, মিরজাফর ইত্যাদি প্রভৃতি বলে শুভেন্দু তথা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন মমতা, অভিষেকরা।
এদিন সরাসরি সম্পত্তির হিসাব নিয়ে তোপ দেগেছেন দিদি। এ নিয়ে শুভেন্দু এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে শুভেন্দুর বাবা তথা প্রবীণ সাংসদ শিশির অধিকারী বলেন, “ওঁর হাতে তো সিআইডি রয়েছে। পুলিশ রয়েছে। শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ার আগে থেকে সে সব লাগিয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা কম করেনি। কিন্তু কিছুই তো পাননি। এখন মিথ্যা প্রচারে নেমেছেন”। তাঁর কথায়, “উনি তো ফ্যাক্টরির মালকিন। একবার সেই ফ্যাক্টরির ব্যালেন্স শিটটা প্রকাশ করুন দেখি।”
অধিকারী গড় বলে পরিগণিত দক্ষিণ কাঁথির ছত্রধরার মঞ্চ থেকে আরও একবার মেদিনীপুরে সভা করতে না দেওয়ার অনুযোগ করে তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, এখানে জমিদার রাজা ছিল, একটা পরিবারের জমিদারি ছিল। সব জায়গায় নিজেদের নাম লিখেছে। কিন্তু কাজটা আমি করিয়ে দিয়েছি।আমাকে আগে কাঁথিতে মিটিং করতে দেওয়া হত না, এগরায় মিটিং করতে দেওয়া হত না। আগে ওগুলো একজনের জমিদারি ছিল। যাঁরা ওদের কথা শুনবে তাঁরাই থাকবে, যাঁরা শুনবে না, থাকবে না, এটাই ছিল নিয়ম। পছন্দ না হলে হারিয়ে দিত কিন্তু সেই নিয়ম এখন আর নেই।’
এদিনের সভা থেকে মোদী-শাহকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি নেত্রী। বলেন, ‘বিজেপি’একটা জঘন্য দল। নরেন্দ্র মোদী, গদ্দারদের চোরের সর্দার। ওরা গেল না এল, তাতে কিছু এসে যায় না। ‘
এ দিনও নিজেকে ২৯৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে সকলকে মনে করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে চান, তাহলে প্রার্থী কে তা না দেখে, জোড়া ফুলে ভোট দেবেন।’মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘কোনও এনপিআর এ রাজ্যে হতে দেব না। কাউকে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে হবে না।’