‘ভাইপো উইন্ডো,”দিদির পাঠশালার সিলেবাস সিন্ডিকেট’, কটাক্ষ মোদীর

0
768

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সততা বজায় রাখাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব থেকে বড় পুঁজি। শনিবার খড়্গপুরে প্রচারে এসে সেই ধারণাতেই মোক্ষম আঘাত করতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্ট ভাবে বোঝাতে চাইলেন, বাংলায় গত দশ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। তা কীরকম?

সহজ করে বোঝানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক—‘দিদির পার্টি হল দুর্নীতির পাঠশালা। সেই পাঠশালার সিলেবাস হল কাটমানি, তোলাবাজি আর সিন্ডিকেট চক্র’। অর্থাৎ করে কম্মে খাওয়ার দল। যেখানে কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। মানুষের উপর অত্যাচার করে টাকা তোলাই উদ্দেশ্য। এবং দুই—“অন্যান্য রাজ্যে উন্নয়নের জন্য সিঙ্গল উইন্ডো রয়েছে। যাতে যে কোনও প্রকল্পের কাজে সুবিধা হয়। কিন্তু বাংলায় ভাইপোর উইন্ডোই হল সিঙ্গল উইন্ডো। সেই জানালা দিয়ে না গললে কোনও কাজ হয় না”। এক কথায় সুপ্রিমোকে নিশানা করে শনিবার মোদী বলেন, ‘দিদির পার্টি আসলে নির্মমতার পাঠশালা। দিদির পাঠশালার সিলেবাস সিন্ডিকেট। উন্নয়নের সমস্ত প্রকল্পে বাধা দিয়েছেন মমতা। মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ১০ বছরে বাংলায় শুধুই লুঠ-দুর্নীতি হয়েছে। তৃণমূল আমলে বাংলায় শুধুই কুশাসন হয়েছে।’ পাশাপাশি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে মোদী এদিন বলেন, ‘বাংলায় সিঙ্গল উইনডো বলতে ভাইপো উইনডো।’

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, বাংলায় গত দশ বছরে একটাই উদ্যোগ হয়েছে। তা হল মাফিয়া উদ্যোগ। বাংলায় বাচ্চারাও জানে কারা সুবর্ণরেখা ও অন্যান্য নদীর বালি চুরি করছে। কারা মানুষের উপর অত্যাচার করছে। কারা আমফানের ত্রাণের টাকা লুঠ করেছে, রেশনের চাল চুরি করেছে, কারা শিক্ষক নিয়োগের কমিশনে দলের ক্যাডার বসিয়ে রেখেছে।

খড়গপুরের সভায় মোদী আরও বলেন, ‘দিদি বলছেন খেলা হবে। কিন্তু, এবার খেলা শেষ হবে। বিকাশ শুরু হবে। তিনি ১০ অঙ্গীকারের কথা বলছেন। কেন্দুপাতা বিক্রিতেও কাটমানি হচ্ছে। এই কাটমানি সংস্কৃতির দলকে বদল করতে হবে।’ বঙ্গবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কংগ্রেসের কারসাজি দেখেছেন, বাম আমলের সন্ত্রাস দেখেছেন, তৃণমূলের কুশাসন দেখেছেন। বাংলার মানুষকে বলছি, আপনারা ৭০ বছর ধরে অনেক দেখেছেন। আমাদের পাঁচ বছর কাজ করার সুযোগ দিন। বাংলায় আসল পরিবর্তন আনব।’

মোদী এদিন আরও বলেন, ‘বাংলার তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাজের সুযোগ নিয়ে দিদির কোনও চিন্তা নেই। বাংলার গরিব মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাইছিস ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিদিকে খেলতে দেব না।’ তৃণমূলকে টার্গেট করে নমো বলেন, ‘আগের ভোটে তৃণমূল যা করত, এবার তা আর করতে দেব না। নির্ভয়ে ভোট দিন।’

প্রধানমন্ত্রীর এই সমালোচনার জবাব পরক্ষণেই দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হলদিয়ায় সভা ছিল তাঁর। সেখানে দিদি বলেছেন, “আমাকে তোলাবাজ বলছে। ওদের মতো বড় তোলাবাজ আর কেউ নেই।”

বাংলায় এ বারের নির্বাচনে বিজেপিকে বারবারই বাইরের পার্টি বলছেন মমতা। শনিবারও বলেছেন। অনেকের মতে, এ সবের মাধ্যমে তাঁর দশ বছরের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ঢাকা দিতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী। সে দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর কৌশলও পরিষ্কার। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বিষয়গুলিকে টেনে বের করা এবং শিল্প ও কাজের সুযোগের অভাবে ক্লিষ্ট রাজ্যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখানো।

এর আগেও বাংলায় প্রচারে এসে ডবল ইঞ্জিনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সেই বিষয়টিও উপমা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন মোদী। তিনি বলেন, গাড়ি কাদায় পড়লে যাত্রী কী করেন? গাড়ি থেকে নেমে সেটি ঠেলেন। কিন্তু অর্ধেক লোক একদিকে বাকি অর্ধেক লোক অন্য দিক ঠেললে গাড়ি কাদা থেকে উঠবে না। কেন্দ্রের সরকার বাংলাকে ঠেলে কাদা থেকে তোলার চেষ্টা করছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁকে সরিয়ে দিন। দেখবেন গাড়ি কাদা থেকে উঠে যাবে।
চোদ্দ সালের ভোটে দিল্লির তখতে পরিবর্তন আনতে বিজেপি স্লোগান তুলেছিল আব কি বার মোদী সরকার। শনিবার সেই স্লোগান বাংলায় এনে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। খড়্গপুরের সভা থেকে স্লোগান তুলেছেন, ‘বাংলায় এ বার বিজেপির সরকার। এই ভোটে তাই ভয় নয়। মানুষের জয় হবে’।

উল্লেখ্য, দু’দিন আগেই পুরুলিয়ায় সভা করেন মোদী। পুরুলিয়ার সভা থেকে তৃণমূলকে টার্গেট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘লোকসভায় তৃণমূল হাফ, এবার পুরো সাফ।’ তৃণমূল মানে ‘ট্রান্সফর্ম মাই কমিশন’ বলে কটাক্ষ করেন মোদী। মমতাকে টার্গেট করে মোদী বলেছেন, ‘২ মে দিদি যাচ্ছে। আসল পরিবর্তন আসছে।’

‘খেলা হবে’ স্লোগানকে কটাক্ষ করে মমতাকে একহাত নেন মোদী। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিদি বলে খেলা হবে, বিজেপি বলে চাকরি হবে, শিক্ষা হবে, উন্নয়ন হবে, হাসপাতাল হবে, স্কুল হবে। ১০ বছর ধরে খেলেছেন। এবার খেলা শেষ হবে। উন্নয়ন শুরু হবে। ‘ মমতাকে নিশানা করে এদিন নমো আরও বলেছেন, ‘গরিবের টাকা লুঠ করেছে তৃণমূল। তৃণমূল নিজের খেলায় মত্ত। এখানে শুধু ভেদাভেদের রাজনীতি। দিদি, অত্যাচার অনেক করেছো। ভয় দেখানোই তোমার অস্ত্র। রুখে দাঁড়াবে এবার বাংলার মানুষ। বাংলার মানুষ তোমায় পরাজিত করবে। বাংলায় এবার সিন্ডিকেটবাজদের পরাজয় হবে। কাটমানিওয়ালাদের পরাজয় হবে। তোলাবাজদের পরাজয় হবে। বাংলায় তৃণমূলের দিন শেষ। ‘

Previous articleবিয়ে, অনুষ্ঠানবাড়িগুলির মতো জমায়েত থেকেই করোনার এত বাড়বাড়ন্ত, দাবি ডক্টর ভি কে পলের
Next article‘বিজেপি ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে, কিছু দিলে খাবেন না’,ক্ষমতায় এলে ২৫ লাখ বাড়ি, ২৫ হাজার কর্মসংস্থান, প্রতিশ্রুতি মমতার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here