দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার ভয় থাকলেও ভারত সফর বাতিল করবেন না বলেই মনস্থ করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতের প্রধান অতিথি হয়ে আসবেন, এই ইচ্ছাই ছিল তাঁর। কিন্তু করোনার নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শেষে বরিসের ভারত সফর বাতিল করা হয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী শুধু নন প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির আসনে দেখা যাবে না কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতাকেই।
সশরীরে হাজির হতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। বরিস বলেছেন, “ভারত বৃহত্তম সার্বভৌম গণতন্ত্রের দেশ। আমার খুবই ইচ্ছা ছিল বন্ধু নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে প্রধান অতিথি হয়ে যাওয়ার। কিন্তু দেশে করোনা লড়াইয়ে এখন আমাকে থাকতে হবে। আফসোস, তাই পারলাম না।”
একনজরে আজকের অনুষ্ঠানসূচি:
সকাল ৯টা থেকে শুরু অনুষ্ঠান শুরু
- সাড়ে ৯টায় সময়ে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে আসবেন প্রধানমন্ত্রী
- ৯টা ৫২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মহড়ার জায়গায় আসবেন
- ৯টা ৫৫ মিনিটে আসবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ
- সকাল ১০টার সময়ে জাতীয় পতাকা পতাকা উত্তোলন
- ১০ টার সময়ে প্যারেড শুরু হবে
- ১১.২৫ মিনিটে শুরু হবে ফ্লাই পাস্ট
৭২তম গণতন্ত্র দিবসের জন্য সকল দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী:
देशवासियों को गणतंत्र दिवस की ढेरों शुभकामनाएं। जय हिंद!
— Narendra Modi (@narendramodi) January 26, 2021
Wishing all the people of India a Happy #RepublicDay. Jai Hind!
৭২ তম গণতন্ত্র দিবসে ট্যুইট করে শুভেচ্ছা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ:
‘गणतंत्र दिवस’ भारत की बहुरंगी विविधता और समृद्ध सांस्कृतिक विरासत का प्रतीक है।
— Amit Shah (@AmitShah) January 26, 2021
मैं उन सभी महान विभूतियों का स्मरण करता हूँ, जिनके संघर्ष से 1950 में आज के दिन हमारा संविधान लागू हुआ और साथ ही उन सभी वीरों को नमन करता हूँ जिन्होंने अपने शौर्य से भारतीय गणतंत्र की रक्षा की है। pic.twitter.com/OxlWA7kmUY
৭২ তম গণতন্ত্র দিবসে টুইট করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, এদিন কলকাতার প্যারেড উৎসর্গ করা হবে নেতাজির সুভাষচন্দ্র বসুর নামে।
‘Justice, Liberty, Equality, Fraternity’
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) January 26, 2021
We must forever strive to protect, preserve & follow all the ideals of the Constitution.
Warm greetings to every Indian on Republic Day!
Today’s parade in Kolkata has been dedicated to Deshnayak Netaji Subhas Chandra Bose.
১৯৯৩ সালে ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজর। এর প্রায় তিন দশক পরে ফের কোনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হয়ে আসতে চলেছিলেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বরিসের এটাই প্রথম ভারত সফর হত। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্রিটেনে করোনার নতুন স্ট্রেন প্রথম ধরা পড়ার পর থেকে বরিসের ভারত সফর নিয়ে দোলাচল তৈরি হয়েছিল। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছেন, নতুন স্ট্রেন ৭০ শতাংশ বেশি ছোঁয়াচে। লন্ডনে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। যা ঠেকাতে ব্রিটেনে ফের সম্পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণাও করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বরিস জনসনের ভারত সফর বাতিল করা হয়।
#RepublicDay: Spectators at Delhi's Rajpath seated following strict social distancing protocols due to COVID19 pic.twitter.com/et8LZmdFQE
— ANI (@ANI) January 26, 2021
তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতে এই মুহূর্তে না আসতে পারলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে দুই দেশই। বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। করোনা মহামারীর মোকাবিলায় ভারত ও ব্রিটেন হাত মিলিয়েই কাজ করছে। বরিস বলেছেন, করোনার ভ্যাকসিন তৈরি ও তার সরবরাহে দুই দেশের মধ্যে সেতু তৈরি হয়েছে। করোনার টিকা তৈরিতে ভারতের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ভারত গোটা বিশ্বের চাহিদার ৫০ শতাংশ টিকা ইতিমধ্যেই সরবরাহ করছে। ব্রিটেন এবং ভারত এই করোনা সঙ্কটে হাতে হাত মিলিয়ে কাজও করেছে।
জুন মাসে ব্রিটেনে হতে চলা জি সেভেন বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণও জানিয়েছে ব্রিটেন। ১১ থেকে ১৩ জুন ব্রিটেনের কর্নওয়ালে জি সেভেন গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে থাকবে ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং আমেরিকা। বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদেরও। সেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মোদীকে।
আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ৭২ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা-প্রজাতন্ত্র দিবস ঘিরে সেজে ওঠে দেশের সকল প্রান্ত। দেশবাসীকে প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ছিল স্বাধীনতা দিবস, হল প্রজাতন্ত্র দিবস-
এই দিনটিকে জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধী নাম দিয়েছিলেন, ‘স্বতন্ত্রতা সংকল্প দিবস’। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ১৯২৯ সালের বর্ষশেষে পূর্ণ স্বরাজ আনার শপথের পরই ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে, প্রায় দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসনের পরাধীনতা ঘুচিয়ে ভারত যখন ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা অর্জন করল, তখন সে দিনটিই স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা পেয়ে গেল।
এরফলে ২৬ জানুয়ারি তারিখের অভিধাও বদলে গেল। স্বাধীনতার প্রায় আড়াই বছর পর তৈরি হল দেশের সংবিধান। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি কার্যকর করা হল দেশের সংবিধান। সেই সূত্র ধরেই ২৬ জানুয়ারিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হল।
Indo Tibetan Border Police (ITBP) jawans celebrate the 72nd #RepublicDay at a high-altitude Border Outpost in Ladakh.
— ANI (@ANI) January 26, 2021
(Source: ITBP) pic.twitter.com/OzlY865SP2
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘কৃষকদের কঠিন সংগ্রাম করে দেশের মানুষের মুখে খাবার তুলে দেন। খাদ্য উৎপাদনের আমাদের দেশ যে আজ আত্মনির্ভর, তার কৃতিত্বও কৃষকদের। করোনার সময় সারা দেশ যখন গৃহবন্দি, তখনও নিজেদের কাজে কোনও খামতি রাখেননি কৃষকরা। প্রত্যেক দেশবাসীর তরফ থেকে তাঁদের প্রতি অনন্ত শ্রদ্ধা।’ যদিও সরকারের প্রশংসাও এদিন ধরা পড়েছে রাষ্ট্রপতির গলায়। তিনি বলেন, ‘যে কোনও সংস্কারের শুরুতেই কিছু ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই যে চাষিদের ভালোর জন্যই কাজ করছে সরকার।’ এমনকী কৃষি ও শ্রম ক্ষেত্রে যে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা সংস্কার হয়েছে, তাও উঠে আসে রাষ্ট্রপতির কথায়।
অন্যদিকে, করোনাকালে এই প্রথম ঐতিহ্যে বদল হল রেড রোডে। প্রজাতন্ত্র দিবসের কর্মসূচিতে বেশ কিছু কাঁটছাট করা হচ্ছে। এ বছর সেনা জওয়ানদের কুচকাওয়াজ দেখার অনুমতি নেই দর্শকদের। রেড রোড চত্বরে আমজনতার প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ অতিথি দর্শকের সংখ্যাও এবারে থাকছে হাতে গোনা।
ফি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে রেড রোড চত্বরে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। দর্শকদের প্রবেশের জন্য একাধিক গেট তৈরি করা হয়। গ্যালারিতে বসেও অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা থাকে। নজরদারির জন্য মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ। ওড়ানো হয় ড্রোন ক্যামেরা। এবারে তার বহর অনেকটাই কম। যদিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাটই থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছে প্রশাসন। থাকবে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা বলয় এবং ড্রোন ক্যামেরা। বাড়তি সতর্ক থাকছে রাজ্য প্রশাসন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া দর্শকদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আসনে বসতে হবে। ভিভিআইপিদের বসার জায়গায় নির্দিষ্ট দূরত্ব রাখা হচ্ছে।