দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নির্বাচনের দিন ঘোষণা না হলেও প্রতিদিনই বাড়ছে ভোটের উত্তাপ। শাসক-বিরোধীদের মধ্যে আক্রমণের ঝাঁঝও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আর এই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে একদম প্রথম সারিতে রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু মেদিনীপুরের সভা থেকে অভিষেকের বিরুদ্ধে আক্রমণ করছেন, তো ডায়মন্ড হারবারের সভা থেকে তার জবাব দিচ্ছেন অভিষেক। এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির সভায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে নিশানা করলেন অভিষেক। তা করতে গিয়ে এদিন ‘তুই-তোকারি’তে নেমে আসেন অভিষেক।
সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি নেতাদের আক্রমণের কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে অমিত শাহ, সবার মুখেও ভাইপোকে কটাক্ষ। কুলতলিতে দাঁড়িয়ে সেই প্রসঙ্গে এনে অভিষেক বলেন, “আমি ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়িয়ে বলেছি, যদি আপনাদের বুকের পাটা থাকে তাহলে ভাববাচ্য কথা বলবেন না। আমার মা বাবা আমার নাম রেখেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম নিয়ে আপনি আক্রমণ করে দেখান। কার কত দম আছে, কড়ায় গণ্ডায় আমারও বুঝতে সময় লাগবে না। দু’মাস পেরিয়ে গেছে। এখনও কেউ নাম নিতে পারেনি।”
এরপরেই শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেন অভিষেক। বলেন, “একজন বড় বীর সাজতে গিয়ে আমার নাম নিয়ে নিয়েছে। আমি তাকে আইনি নোটিস ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছি। এদের স্মৃতিশক্তি খুব দুর্বল। তাই ওই যে নারদায় টাকা নিতে গিয়ে ধরা পড়েছিল সেই ছবিটাও আমি আইনি নোটিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। টিভির ক্যামেরায় টাকা নিতে তো তোমাকে দেখা গেছে। আর তোলাবাজ ভাইপো। ভাইপো তোলাবাজ, না ভাইপোর জন্য তোলাবাজিটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?”
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে কিছুদিন আগেই সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের লেখা একটি চিঠি প্রকাশ পেয়েছে। সেই চিঠি এদিনের মঞ্চ থেকে পড়েও শোনান ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক।
অভিষেক বলেন, “সারদার কর্নধার সুদীপ্ত সেন কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের চিফ মেট্রোপলিটন অফিসারকে লিখেছেন। এটা সুদীপ্ত সেনের হাতে লেখা। চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। করলে আমি চিঠিটা পাঠিয়ে দিতে পারি। ফরেন্সিক চাইলে করতে পার। কে, কবে, কেন লিখেছে প্রমাণ কর। আমি প্রস্তুত। এখানে চারটে পাতার পরে সুদীপ্ত সেন লিখছে, ‘আমি শুভেন্দু অধিকারীকে ৬ কোটি টাকা দিয়েছি।’ তাহলে তোলাবাজ কে? ঘুষখোর কে? দু নম্বরী কে? মীরজাফর কে? বিশ্বাসঘাতক কে? মানুষের সাথে বেইমানি করেছে কে? এই তো প্রমাণ দিচ্ছি। এই প্রমাণ তুই আমার বিরুদ্ধে দে, আমি ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করব। তুই মৃত্যুবরণ করবি। ক্ষমতা আছে। হবে লড়াই। জনতার দরবারে দাঁড়িয়ে তোকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। শুধু এই না, সুদীপ্ত সেন লিখেছে, ‘আমি যেদিন ফেরার হয়েছিলাম, তার আগের দিন রাতে এসেও শুভেন্দু অধিকারী পয়সা নিয়েছিল।’”
এদিনের মঞ্চ থেকেও ফের বিজেপির একাধিক নেতার নাম নিয়েও আক্রমণ ক্রতে শোনা যায় তৃণমূল সাংসদকে। তিনি বলেন, “আমি বলছি দিলীপ ঘোষ গুণ্ডা, অমিত শাহ বহিরাগত। আমি ভাববাচ্যে কথা বলি না। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বহিরাগত। ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে আমাকে জেলে ঢোকা। আজকে নাম নিয়ে বলছি, ঘুষখোর শুভেন্দু অধিকারী। তোর ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করিস যা।”
নির্বাচনে জিতে তৃণমূল সরকার ফের ক্ষমতায় এলে এবার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেন অভিষেক। তিনি বলেন, “আমি ২০১৬ সালে প্রতিবাদ করেছিলাম। বলেছিলাম, যারা পার্টির ভাবমূর্তি খারাপ করছে তাদের পিছনে সারিতে রাখা হোক। আমার কথায় যদি দল চলত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আমার কথা অনুয়ায়ী বিচার করে দলটা চালাতেন তাহলে আজ এদের জায়গা শ্রীঘরে হত। আমি বলে যাচ্ছি আগামী দিন ক্ষমতায় আসলে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা হবে। তৈরি থেকো। কড়ায় গণ্ডায় জবাব দেব।”