দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার সারা রাত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কেবিনেই ছিলেন স্ত্রী ডোনা। বেরিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ভাল আছেন মহারাজ। কথাবার্তা বলছেন স্বাভাবিক।
তারপর সকাল ১০ টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন। তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা হয় সৌরভের। মোদী তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে একাধিকবার ফোনে খবর নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন সরাসরি বিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটি নির্ধারণ করবেন ডাঃ দেবী শেঠি। এই বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সোমবার সকালে ভারতের নামী প্রাক্তন অধিনায়ককে দেখতে যেতে পারেন। ডাঃ শেঠী এই বিষয়ে উডল্যান্ডস হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এমনই জানা গিয়েছে সৌরভের পরিবার সূত্রে।
রবিবার উডল্যান্ডস হাসপাতালের পক্ষ থেকে সৌরভের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত দুইবার মেডিকেল বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। একবার সকাল আটটা নাগাদ, অন্যবার দুপুর একটা নাগাদ। তাঁর শরীর এখন ভালই রয়েছে, তাঁর সব রিপোর্ট মোটের ওপর ভালই, তাও দেখা গিয়েছে।
তবুও সৌরভের বাকি দুটি স্ট্রেন্ট বসাতো হবে কিনা, সেটি দেবী শেঠী পরীক্ষা করে জানাবেন। সৌরভকে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ডে রয়েছেন তিন চিকিৎসক ডাঃ সরোজ মন্ডল, ডাঃ সৌতিক পান্ডা ও ডাঃ সপ্তর্ষি বসু। পাশাপাশি রয়েছেন হাসপাতালের সিইএ রুপালি বসু।
গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে এখন অনেকটাই ভাল আছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তাঁকে দেখতে ভিআইপি-র ভিড় লেগেই রয়েছে হাসপাতালে। আর তার মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় এল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন। সৌরভের এক পারিবারিক বন্ধু জানিয়েছেন, মোদী ফোন করে মহারাজের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন। একই সঙ্গে সৌরভের চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে কোনও রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে দিল্লি বা অন্য দেশে যাওয়ার দরকার হলে সেটা করতেও কেন্দ্র সহায়তা করবে বলে সৌরভকে মোদী আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷
শনিবার সকালে শরীরচর্চা করার সময় আচমকাই বুকে এবং পিঠে ব্যথা অনুভব করেন সৌরভ। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা যায়, হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী তিনটি ধমনীতে ‘ব্লকেজ’ রয়েছে সৌরভের। হাসপাতাল সূত্রে যা জানা গিয়েছে তাতে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাইপাস সার্জারি করা হবে না। শনিবার একটি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। আরও দুটো স্টেন্ট বসানো হবে। যে ধমনীতে বেশি ব্লকেজ ছিল তা এখন পুরোপুরি মুক্ত। চিকিৎসকদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন তিনি। গল্পও করছেন সৌরভ।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বিসিসিআই সভাপতি সৌরভের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শনিবার থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেও হাসপাতালে ফোন করে খোঁজ খবর নেন। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় শনিবার জানান, ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সৌরভের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত। দরকার হলে সৌরভকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দিল্লি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, সৌরভের জন্য যথাসম্ভব ভাল চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে। দিল্লির কোনও চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা করা হবে।’’
রাজ্য বিজেপির নেতাদের অনেকে হাসপাতালে যাওয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভের আরোগ্য কামনা করেন। পাশাপাশি সক্রিয় ছিল তৃণমূলও। শনিবার দুপুরে সৌরভ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই তাঁর ‘মৃদু’ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় হাসপাতালে যান সৌরভকে দেখতে। তিনি হাসপাতালেই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সৌরভ আমার সঙ্গে কথা বলেছে। ওকে দেখে, কথা বলে খুব ভাল লাগল। সেখানে ডোনা এবং ওর মেয়ে সানাও ছিল। চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানাই।’’ মমতা ছাড়াও শনিবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, লক্ষ্মীরতন শুক্ল৷
রবিবার সকালেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা এবং শিলিগুড়ির পুরপ্রশাসক অশোক ভট্টাচার্য। যান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যও। সন্ধ্যায় যান বাংলা সফরে থাকা উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে সৌরভের নাম নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। এরই মধ্যে তাঁর অসুস্থতা নিয়েও সব রাজনৈতিক শিবিরই তৎপর। শনিবার অমিত শাহর পাশাপাশি তাঁর পুত্র তথা বিসিসিআই-এর সচিব জয় শাহ সৌরভকে দিল্লি বা মুম্বইতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা যায়। এ বার সেই একই প্রস্তাব এল প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।