আবাসিক-অভিযোগে বিশ্বভারতীর থেকে রাস্তা ফিরিয়ে নিল রাজ্য সরকার

0
648

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে অপমানের অভিযোগ তুলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আগেই তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যে অমর্ত্য সেনের পাশে রয়েছেন, তা-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন। শুক্রবার অমর্ত্যকে চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, ‘অসহিষ্ণুতা’ ও ‘সর্বগ্রাসী একনায়কতন্ত্রে’র বিরুদ্ধে অমর্ত্যের লড়াইয়ে তিনিও শরিক। আর এবার বিশ্বভারতীর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতেও গেল রাজ্য সরকার।

বিশ্বভারতীর থেকে রাস্তা ফেরত নিয়ে নিল রাজ্য সরকার। কাচ মন্দির থেকে কালিসায়র পর্যন্ত রাস্তার অধিকার বিশ্বভারতীকে দিয়েছিল পিডব্লিউডি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বোলপুরে যাওয়ার পরই ওই রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি। যদিও রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্বভারতীর আবাসিকদের অভিযোগের কারণেই ওই রাস্তা ফিরিয়ে নিল রাজ্য সরকার। এই রাস্তায় শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের সংযোগকারী রাস্তা। দীর্ঘদিন বিশ্বভারতীর দখলে থাকায় সেই রাস্তা প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল সাধারণ মানুষের জন্য। এদিনের সিদ্ধান্তের ফলে এলাকাবাসীও খুশি।

এদিন ফের মমতা বলেন, ‘বিশ্বভারতী এখন বহিরাগতদের দখলে চলে গিয়েছে। অমর্ত্য সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকলেই আমাদের বাংলার গর্ব। আর এখন সেই বাংলার সংস্কৃতিকেই বারবার টার্গেট করা হচ্ছে। আমাকে তো টার্গেট করছেই, অমর্ত্য সেনের মতো মানুষকেও নিশানা করা হচ্ছে। বাংলার সংস্কৃতির উপর আঘাত নেমে আসছে। আমি দেশের মানুষকে বহিরাগত বলছি না। কিন্তু বিজেপি এই সংস্কৃতি আমদানি করেছে। কিন্তু বারবার বলছি, বাংলার সংস্কৃতিকে টার্গেট করলে আমরা চুপচাপ থাকব না।’

যে ভাবে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে অমর্ত্যের পারিবারিক যোগসূত্রকে কোনও কোনও মহল থেকে কালিমালিপ্ত করা চেষ্টা চলেছে, তা নিয়েও আগেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে ‘শ্রদ্ধেয় অমর্ত্যদা’ বলে সম্বোধন করে তিনি লিখেছিলেন, ‘এই লড়াইতে আপনি আমাকে আপনার বোন ও বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির উত্তরে তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন অমর্ত্য সেন।

শান্তিনিকেতনে অর্মত্যের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সামনে হকার উচ্ছেদ নিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতাদের একাংশ অমর্ত্যের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগও এনেছেন।

এই গোটা বিষয়টিকে বাঙালির অপমান হিসেবেই দেখছেন মমতা। বড়দিনে খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদের শান্তিনিকেতনে শ্রীপল্লিতে প্রতীচীর ঠিকানায় লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সকলেই শান্তিনিকেতনের সঙ্গে আপনার পরিবারের গভীর ও সহজাত যোগসূত্রের কথা জানি। আপনার মাতামহ ও খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ক্ষিতিমোহন সেন শান্তিনিকেতনের প্রথম দিকের বাসিন্দাদের মধ্যে অন্যতম। আপনার বাবা আশুতোষ সেন ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও প্রশাসক। তিনিই প্রতীচীর বাড়ি প্রায় আশি বছর আগে তৈরি করেছিলেন। এক অর্থে, আপনার পরিবার শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে সম্পৃক্ত।’

গত বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, অমর্ত্য মতাদর্শগত ভাবে বিজেপি-বিরোধী বলেই তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখল, হকার বসানোর মতো অভিযোগ তোলা হচ্ছে। চিঠিতেও তিনি লিখেছেন, ‘এ দেশে সংখ্যাগুরুর গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা ও অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আপনার লড়াইয়ে আমি সংহতি জ্ঞাপন করি।

আপনার সেই সংগ্রামই আপনাকে অসত্য ও অশুভ শক্তির শত্রু বানিয়েছে। সে কারণেই বিশ্বভারতীতে কিছু অনাহুত হানাদার ইদানীং আপনাদের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে চরম ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা এই অসত্য অভিযোগের সামনে মাথা নোয়াবো না। আমরা জয় করব। উই শ্যাল ওভারকাম।’ বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেছিলেন, তাঁকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিরোধীরা, বিশেষ করে গেরুয়া শিবির মনীষীদেরও আক্রমণ করছে। অবমাননা করা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ-বিদ্যাসাগরের মতো বরেণ্যদেরও।

যদিও বিজেপি তাদের অবস্থানে অনড়। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, ‘বিশ্বভারতীর জমি মাফিয়াদের হাতে চলে যাচ্ছে, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ভুল?’ এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, ‘বিদ্যুৎ চক্রবর্তীরা যা করছেন, তাতে আদতে বাঙালিকে ছোট করা হয়। অমর্ত্য সেন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি বিশ্বভারতীর মেলার মাঠ ঘেরার বিরোধিতা করছেন। বিজেপি সরকারের নানা নীতির সমালোচকও। তাই তাঁকে চিহ্নিত করে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’

Previous article‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’, দুয়ারে সরকারের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা মমতার
Next articleদুই মন্ত্রীর সামনে ভাঙচুর-বিক্ষোভ নেতাজি ইনডোরে ধুন্ধুমার অসংগঠিত শ্রমিকদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here