দেশেরসময়, বনগাঁ: মতুয়াদের যে এত মানুষ আছেন, কেউ জানতই না তাঁদের উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ শুরু করার আগে। তিনি বনগাঁ, বাগদা, ঠাকুরনগর, হাবড়া, অশোকনগর, স্বরূপনগরে বহুদিন ধরেই আসছেন। বুধবার, বনগাঁর প্রশাসনিক সভা থেকে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং সেই সঙ্গে ঘোষণা করলেন, এখন থেকে মতুয়াদের উৎসব ‘মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী’তে ছুটি ঘোষণা হবে রাজ্য সরকারের তরফে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি। এর কোনও নির্দিষ্ট দিন নেই। বাংলা মতে নেই, ইংরেজি মতেও নেই। যে দিন মতুয়াদের স্নান উতসব ও মেলা হয়, সেদিনই ওই তিথি নির্ধারিত হয়। সেই কারণে তাঁকে আগে থেকে এ তিথির তারিখ না জানালে তাঁর পক্ষে ছুটির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। কারণ সরকারি ছুটির ক্যালেন্ডার তৈরি হয় ৬ মাস আগে। তাই তিনি এদিন মঞ্চ থেকে বলেন, “আপনারা আমাকে ৬ মাস আগে থেকে জানাবেন এ তিথির তারিখ, তাহলে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করবে।”
তবে হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবিও দেখান সেই কাজের। তিনি আরও বলেন, “বাগদি ভাইবোনদের জন্য আমরা বোর্ড করেছি, বাউড়ি সম্প্রদায়ের জন্যও করেছি। মতুয়া ডেভেলপমেন্ট কমিটি করেছি। ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আপনারা নিজেরা বসে কমিটি ঠিক করে দিন। টাকা ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছি। এটা আপনাদের দাবি ছিল, মেনে নেওয়া হল।”
এসব উন্নয়নের খবরের মাঝে মতুয়াদের বিশেষ প্রাপ্তি এই মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীর ছুটিটাই। কী এই মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী?
জানা যায়, মতুয়াদের গুরু শ্রী শ্রী অদ্বৈতাচার্যের যখন ৭-৮ বছর বয়স, সে সময়ে একদিন অদ্বৈতাচার্যকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছিলে তাঁর মা। সেই রাতেই মা স্বপ্ন দেখেন, মহাদেব এবং শ্রীবিষ্ণুর মিলনরূপই তাঁর সন্তান, অদ্বৈতাচার্য। সকালে উঠে তিনি ছেলেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তার পা ধুইয়ে সে জলে স্নান করেন মা। অদ্বৈত তো অবাক! এর পরেই অদ্বৈত বলেন, “মা আমি সমস্ত তীর্থের জল তোমার জন্য একত্র করে দেব, তুমি তাতে স্নান কোরো।” এর পরেই ধ্যানযোগে সে অসম্ভবকে সম্ভব করেন অদ্বৈতাচার্য। এবং সেই সর্বতীর্থের জলে অদ্বৈতের মায়ের স্নান করার ঘটনাই মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীর স্নান নামে পরিচিত হয়।
পরবর্তী কালে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর বারুনি নামের এক পুষ্করিণী খনন করে সেখানেই এই পুণ্যস্নান করার প্রথা চালু করেন। তার পর থেকে হরিচাঁদের জন্মদিনেই মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথি নির্ধারিত হয়, এবং সেই ধারাই হয়ে আসছে এখনও।
এই সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষ ভিড় করতে শুরু করেন। ভক্তদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করেন এলাকার বাসিন্দারা। সর্বত্র খোলা হয় জলসত্র। ভক্তদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয় নানা জায়গায়। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তরফে কয়েকশো কুইন্ট্যাল চাল-ডালের ব্যবস্থা করা হয়।