দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে চিনের পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ চেংড়ু যুদ্ধবিমানের আনাগোনা দিনকয়েক ধরেই লক্ষ্য করেছিল ভারতীয় সেনা। বিশেষত, দক্ষিণ প্যাঙ্গংয়ে নতুন করে অশান্তি বাঁধাবার আগে পাহাড়ি এলাকার উপরে চক্কর কাটতে দেখা গিয়েছিল দুটি জে-২০ ফাইটার জেটকে। চিনের কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টের মোকাবিলায় ভারত তার আধুনিক প্রজন্মের মিরাজ, সুখোই, মিগ-২৯ আগেই তৈরি রেখেছে। ভূমি থেকে আকাশে লক্ষ্যভেদ করতে পারে এমন মিসাইল সিস্টেমও মোতায়েন করেছে ভারত। তাই সব দিক দেখে চিন এখন তাদের এইচ-৬ বোমারু বিমান উড়িয়েছে সীমান্তের কাছে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা তথা এলএসি বরাবর চিনের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার আকাশে বোমারু বিমান চক্কর দিচ্ছে এমন ছবি সামনে এনেছে ‘মিলিটারি ওয়াচ ম্যাগাজিন’। পিপলস লিবারেশন আর্মির সেন্ট্রাল থিয়েটার কম্যান্ড এইচ-৬ যুদ্ধবিমানের ছবি সামনে এনেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনে প্রায় ২৭০টি এমন এইচ-৬ বোমারু বিমান আছে। ক্রুজ মিসাইল ছোড়া যায় এই বিমান থেকে। লাদাখে ভারতের এয়ার ডিফেন্স দেখে এখন এইচ-৬ সামনে এনে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার চেষ্টা করছে চিন।
এই জাতীয় যুদ্ধবিমান সেই ১৯৫৮ সালেই তৈরি হয়েছিল চিনে। বানিয়েছিল জিয়ান এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন। দূরপাল্লা অবধি মিসাইল ছুড়তে পারে এই বিমান। মাঝ আকাশে তেল ভরতে পারে। আকাশসীমাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নজরদারিও চালাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচ-৬ বোমারু বিমান থেকে সিজে-২০ ক্রুজ মিসাইল ছোড়া যায়। এই মিসাইলের ওয়ার-হেড ৫০০ কিলোগ্রাম, পাল্লা প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। প্রচণ্ড গতিতে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে এই মিসাইল। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় এক সময় এই জাতীয় বোমারু বিমান মোতায়েন করেছিল চিন।
ভারতের আকাশসীমাকে সবরকমভাবে সুরক্ষিত রাখতে কমব্যাট ফাইটার জেট নামিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। টহল দিচ্ছে সুখোই-৩০, মিরাজ-২০০০ ফাইটার জেট ও মিগ-২৯ ফাইটার জেটের নয়া ভার্সন। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ডাবল ইঞ্জিন মাল্টিরোল এয়ার সুপিরিয়রিটি ফাইটার জেটগুলির অন্যতম হল এই সুখোই।
ডবল ইঞ্জিন মাল্টিরোল এয়ারক্রাফ্ট সুখোইয়ের নির্মাতা রাশিয়ার সুখোই কর্পোরেশন। ভারতে সুখোই-৩০ এমকেআই তৈরির লাইসেন্স আছে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হ্যাল) কাছে। ২০০২ সালে রাশিয়ার থেকে প্রথম সুখোই-৩০ এমকেআই ভ্যারিয়ান্ট আসে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে। ২০০৪ সাল থেকে পুরোদমে কাজ করতে শুরু করে সুখোই। চলতি বছর জানুয়ারি অবধি হিসেবে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে মোট ২৬০টি সুখোই-৩০ এমকেআই আছে।
রাশিয়ার সুখোইয়ের প্রযুক্তিতে বদল ঘটিয়ে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে এই যুদ্ধবিমান থেকে নোভাটর কে-১০০ মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তি যোগ করেছে ভারত। সুখোইয়ের নয়া ভ্যারিয়ান্ট ব্রাহ্মস ক্রুজ মিসাইল বয়ে নিয়ে যেতে পারে। সুখোই থেকে ব্রাহ্মস ছুড়ে আকাশ থেকে ভূমিতে টার্গেট করা যায়। অন্তত ৩০০ কিলোমিটার পাল্লায় কাজ করে এই মিসাইল। ২০১৬-১৭ সালে সুখোইয়ের সঙ্গে ব্রাহ্মস জুড়ে নাসিকে প্রথম টেস্ট ফ্লাইট করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। বিশ্বের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টগুলোর মধ্যে সুখোই সর্বাধুনিক ও শক্তিশালী।
শক্তিশালী অ্যাটাক হেলিকপ্টার অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই, সিএইচ-৪৭ এফ চিনুক মাল্টি-মিশন হেলিকপ্টারও নামিয়েছে বায়ুসেনা। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কমব্যাট এয়ার পেট্রলিং-এর জন্য নামানো হয়েছে চিনুক কার্গো হেলিকপ্টার, অ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার। রাতের বেলা পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্য অ্যাপাচে ও চিনুক কপ্টারকে কাজে লাগানো হয়েছে।
চুসুল এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে অ্যাপাচে, অন্যদিকে দৌলত বেগ ওল্ডিতে রাতের বেলা চক্কর কাটছে চিনুক। চিনুকের সঙ্গে চিনা সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখছে অ্যাপাচে কপ্টার। এএইচ অ্যাপাচে-৬৪ কপ্টারকে বলা হয় বোয়িং অ্যাপাচে অ্যাটাক কপ্টার। যুদ্ধাস্ত্র বয়ে নিয়ে যেতে পারে আবার নিশানায় আঘাতও করতে পারে।
আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে ফ্রান্স থেকে কেনা পাঁচ রাফাল ফাইটার জেট। হরিয়ানার আম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটির ১৭ নম্বর গোল্ডেন অ্যারো স্কোয়াড্রনে রয়েছে এই পাঁচ রাফাল। তবে খুব দ্রুত রাফালকে পাঠানো হবে লাদাখ সীমান্তে। এর আগে পাহাড়ি এলাকায় সেই প্রস্তুতিও চালিয়েছে রাফাল। চিনের বোমারু বিমান থেকে যদি ক্রুজ মিসাইল ছোড়া যায়, তাহলে রাফাল থেকে উন্নত প্রযুক্তির স্কাল্প ও মেটিওর মিসাইল হামলার প্রযুক্তি রয়েছে।
ডবল ইঞ্জিন মল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট রাফাল আকাশ থেকে ভূমিতে ও সমুদ্রেও নির্ভুল নিশানা লাগাতে পারে। অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকি পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের। মেটিওর হল বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল। ওজন ১৯০ কিলোগ্রাম। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁত টার্গেট করতে পারে। ‘স্কাল্প’ হল লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল। দৈর্ঘ্যে ৫.১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৩০০ কিলোগ্রাম। ৬০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে এই মিসাইল। আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া যায় এই মিসাইল।