লাদাখ সীমান্তে চিনের সঙ্গে ফের সংঘাত

0
379

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণে পাহাড়ি এলাকায় ফের ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘাতে জড়াল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। সূত্রের খবর, ২৯ জুলাই রাত থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল প্যাঙ্গং সো-তে। গতকাল রাতে প্যাঙ্গং হ্রদের তীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় চিনের সেনা ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলেই ভারতীয় জওয়ানদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।

ভারতীয় সেনার মুখপাত্র কর্ণেল আমান আনন্দ বলেছেন, প্যাঙ্গং লেকের উত্তরে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল লাল ফৌজ। প্যাঙ্গং হ্রদের জলে তাদের হাই-স্পিড ইন্টারসেপটর বোটও ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছিল। এবার দক্ষিণ অংশ দিয়ে ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে চিনের বাহিনী।

লাদাখ সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য চুসুল সীমান্ত লাগোয়া চিন-নিয়ন্ত্রিত মলডোতে দুই দেশের সেনা কম্যান্ডারের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিছুদিন আগেই ফের বৈঠক হয় ভারতীয় সেনার ১৪ নম্বর কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরেন্দ্র সিংহ এবং চিনের শিনজিয়াং মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট কমান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিনের। সূত্রের খবর, এই বৈঠকের পরেও পূর্ব লাদাখের বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর এলাকা থেকে সেনা সরাতে রাজি হয়নি চিন।

প্যাঙ্গং লেক সহ পূর্ব লাদাখের একাধিক এলাকা থেকে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের জন্য চিনের উপর চাপ বাড়িয়েছে ভারত। কিন্তু গালওয়ান নদী উপত্যকা, গোগরা, হট স্প্রিং সহ কিছু এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে সামান্য সেনা পিছনো (ডিসএনগেজমেন্ট) ছাড়া তেমন কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি চিনকে। গালওয়ানে সেনার সংখ্যা সামান্যই কমেছে, কিন্তু পরিবর্তে উত্তর লাদাখের দেপসাং ভ্যালিতে নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে চিন।

ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে (ডিসএনগেজমেন্ট) সেনা সরাতে শুরু করে দু’পক্ষই। কিন্তু ভারতীয় জওয়ানরা বলেছেন, প্যাঙ্গং সো-তে সামান্য পিছু হটলেও নিজেদের ছাউনি ও অস্ত্রশস্ত্র পুরোপুরি সরিয়ে নিয়ে যায়নি চিনের সেনা। প্ল্যানেট ল্যাবের উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট দেখা গেছে, প্যাঙ্গং লেকের জলে চিনা বাহিনীর অন্তত ১১টি হাই স্পিড ইন্টারসেপ্টর বোট এখনও ঘোরাফেরা করছে। 

কয়েকটি তাঁবু, কিছু বুলডোজার ও সামরিক সরঞ্জাম সরানো হয়েছে মাত্র। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪-এ এখনও চিনা সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। এমনকি সেনা সূত্র এও জানাচ্ছে, গালওয়ান নদী উপত্যকা বরাবর চিনা বাহিনীর সাঁজোয়া গাড়িও দাঁড়িয়ে রয়েছে এখনও। নদী উপত্যকায় তারা কংক্রিটের কালভার্ট তৈরি করেছিল। সেই পরিকাঠামো এখনও রয়েছে।

অন্যদিকে, প্যাঙ্গং লেকের উত্তরে সবুজে ঢাকা উপত্যকাতে নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছিল তারা। ৫০০০ মিটার বিস্তীর্ণ এই উপত্যকাকে বলে ‘গ্রিন টপ’ । গত ১৫ জুন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে এই উপত্যকাতেও ঢুকে আসে চিনের বাহিনী। এরপরে বহুবার দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে গ্রিন টপ থেকে সেনা সরাতে বলা হয় চিনকে। 

কিন্তু নানা টালবাহানা করে এড়িয়ে যায় চিন। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং লেকের ফিঙ্গার পয়েন্টগুলো তো বটেই সবুজে ঘেরা ওই উপত্যকাও নিজেদের দখলে রেখেছে চিনা বাহিনী। ফলে ওই এলাকায় পৌঁছতে পারছিল না ভারতীয় জওয়ানরা।

প্যাঙ্গং রেঞ্জের উত্তরে আট পাহাড়ি ফিঙ্গার পয়েন্টেও তৎপর চিনের সেনা। এতদিন ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এলাকায় ভারতীয় বাহিনী টহল দিত। কিন্তু ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ দিয়ে ঢুকে এসে ফিঙ্গার ৪ ও ফিঙ্গার ৫ এর মধ্যবর্তী এলাকায় তাঁবু খাটিয়ে বসে গেছে লাল ফৌজ। ফলে ফিঙ্গার ৪ অবধি পৌঁছতে পারছে না ভারতীয় বাহিনী।

১৫ জুন হট স্প্রিং লাগোয়া ১৫ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টে চিনের বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাত হয় ভারতীয় সেনা জওয়ানদের। ভারতীয় সেনার অন্তত ২১ জন শহিদ হন ওই সংঘাতে। অন্যদিকে, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ৪৩ জন সৈনিকের নিহত হওয়ার খবর মেলে। গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষই শুধু নয়, গত মে থেকে জুন মাসের মধ্যে একাধিকবার চিনের বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছে ভারতীয় সেনা। 

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর টহলদারির সময় লাদাখে আকছার চিনা সেনা নিয়্ন্ত্রণ রেখা টপকে ভারতের দিকে চলে আসে। তা সিকিম সেক্টরেও মাঝে মধ্যে হয়। কিন্তু প্রতিবারই দেখা যায়, দুই পক্ষের মিলিটারি কমান্ডার স্তরে বৈঠকের পর বিরোধ মীমাংসা স্থানীয় ভাবেই হয়ে যায়। তাতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু মে মাসের গোড়া থেকে শুধু সীমান্ত উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে না চিনের ফৌজ, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসার চেষ্টাও করছে। 

এর আগে গত ৫ মে লাদাখের প্যাঙ্গং লেকের কাছে প্রায় আড়াইশ জন ভারতীয় ও চিনের সেনা জওয়ান রীতিমতো লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে লড়াই করে। একে অপরের দিকে আধলা পাথরও ছোড়ে। তাতে আহত দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন। এরপরে ৯ মে সিকিম-চিন সীমান্তে নাকু লা-তে দু’দেশের প্রায় দেড়শ সেনা মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তাতে দু’পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, ১৫ জুন সংঘাতের পরে গালওয়ান নদীর উপরে কালভার্ট তৈরি করে অস্ত্রশস্ত্র বয়ে আনা শুরু করে চিনের বাহিনী। নদী উপত্যকার আশপাশে তৈরি করে সামরিক পরিকাঠামো। অন্যদিকে, পিপি ১০, পিপি ১১, পিপি ১২ ও পিপি ১৩ পয়েন্ট রয়েছে উত্তর লাদাখে, দেপসাং সমতলভূমি বরাবর। এই পয়েন্টগুলো ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে গালওয়ানের সংঘর্ষের পর থেকে এই দেপসাং ভূমিতেও ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে চিনা বাহিনী।

Previous articleহাবরায় ৯টি জলমগ্ন গ্রাম পরিদর্শন এর পর টিপির বাঁধ ও পার্ক ভেঙে এলাকার মানুষকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন খাদ্যমন্ত্রী
Next articleপ্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here