দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অনেক দিন ধরেই বিদেশি সামগ্রী বিশেষ করে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে দেশে। সেই ডাক দিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিও। নানা মহল থেকে ভারতে চিনা অ্যাপের ব্যবহার বন্ধ করার জন্যও কেন্দ্রের উপরে চাপ তৈরি হচ্ছিল। এবার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে টিকটক, ইউসি ব্রাউজার-সহ মোট ৫৯টি অ্যাপ ব্লক করা হল।
পূর্ব লাদাখের গালোয়ানে এক কর্নেল সহ ২০ ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ তাতে সাড়া দিয়েই কেন্দ্রের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে দেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই সব অ্যাপ ব্লক করা হল দেশে।
এক নজরে- ব্লক হওয়া অ্যাপের তালিকা:
১. TikTok
২. Shareit
৩. Kwai
৪. UC Browser
৫. Baidu map
৬. Shein
৭. Clash of Kings
৮. DU battery saver
৯. Helo
১০. Likee
১১. YouCam makeup
১২. Mi Community
১৩. CM Browers
১৪. Virus Cleaner
১৫. APUS Browser
১৬. ROMWE
১৭. Club Factory
১৮. Newsdog
১৯. Beutry Plus
২০. WeChat
২১. UC News
২২. QQ Mail
২৩. Weibo
২৪. Xender
২৫. QQ Music
২৬. QQ Newsfeed
২৭. Bigo Live
২৮. SelfieCity
২৯. Mail Master
৩০. Parallel Space
৩১. Mi Video Call — Xiaomi
৩২. WeSync
৩৩. ES File Explorer
৩৪. Viva Video — QU Video Inc
৩৫. Meitu
৩৬. Vigo Video
৩৭. New Video Status
৩৮. DU Recorder
৩৯. Vault- Hide
৪০. Cache Cleaner DU App studio
৪১. DU Cleaner
৪২. DU Browser
৪৩. Hago Play With New Friends
৪৪. Cam Scanner
৪৫. Clean Master – Cheetah Mobile
৪৬. Wonder Camera
৪৭. Photo Wonder
৪৮. QQ Player
৪৯. We Meet
৫০. Sweet Selfie
৫১. Baidu Translate
৫২. Vmate
৫৩. QQ International
৫৪. QQ Security Center
৫৫. QQ Launcher
৫৬. U Video
৫৭. V fly Status Video
৫৮. Mobile Legends
৫৯. DU Privacy
ভারতে প্রথম চিনা অ্যাপ ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞার দাবি তোলেন সোনাম ওয়াংচুক। লাদাখ সীমান্তে যখন উত্তেজনার শুরু তখন থেকেই সরব সোনাম। গত মে মাসেই তিনি বলেন, “যুদ্ধে লড়তে হবে না, ভাতে মারুন চিনকে।” ‘থ্রি ইডিয়েটস’-ছবির বিখ্যাত চরিত্র ফুংসুক ওয়াংড়ু যাঁর উপর তৈরি হয়েছিল, সেই সোনাম দীর্ঘদিন ধরে লাদাখে কাজ করছেন। স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি থেকে শুরু করে অনেক কাজ করেছেন এই বিজ্ঞানী। তিনিই চিনকে চাপে ফেলার ওষুধ হিসেবে বয়কট করতে বলেন।
একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “চিনকে সেনা জবাব দেবে বুলেটের মাধ্যমে, আর সাধারণ মানুষ জবাব দেবে ওয়ালেটের মাধ্যমে।” মানে চিনকে হাতে না মেরে, ভাতে মারার পরামর্শ দিলেন তিনি। আর তখনই তিনি চিনা অ্যাপ ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞার দাবি তোলেন। এবার ফের সরব হলেন সোনাম।
পরে আরও ভিডিওতে তিনি বলেছেন, “চিনের সমস্ত সামাগ্রী ও প্রকল্পকে আমাদের ক্যানসার মনে করে বয়কট করতে হবে। প্রথম প্রথম কিছুদিন তাতে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে চিনা পণ্য ছাড়াই জীবনধারন অভ্যাস হয়ে যাবে। দু-তিন বছরের মধ্যেই আমাদের মুক্তি মিলবে।” ওয়াংচুকের দাবি, ভারতীয় পণ্যের উৎপাদন কমে আসা ও দেশবাসীর কাজ হারানোর জন্যে দায়ী চিনা পণ্যের উপরে নির্ভরতা। বিজেপির কয়েকজন নেতাও এইরকম দাবি তুলেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি উঠেছিল বহু সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেও।
শাওমি, ভিগো ভিডিও কল সহ ক্যাম স্ক্যানারও ভারতে চলবে না:
লাদাখ সংঘাতের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমআই তথা শাওমি স্টোরের বাইরে হোডিং লাগানো হয়েছে – ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’! কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল কি! সন্দেহের আতস কাচের তলায় চলে এলো শাওমিও।
সোমবার বিকেলে কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে যে, ভারতে ৫৯ টি চিনা অ্যাপের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা করা হয়েছে। সেই তালিকায় সবার আগে নাম রয়েছে টিকটকের। কিন্তু তালিকা ঘাটলে দেখা যাবে, সন্দেহের মেঘ ঘনিয়েছে শাওমিকে নিয়েও। এমআই কমিউনিটি এবং শাওমি ভিডিও কল ভারতে ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে ব্যান করা হয়েছে ভিগো ভিডিও-কে।
কেন এই পদক্ষেপ ?
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলি জানিয়েছে এই সব অ্যাপ ভারতীয়দের গোপনীয়তার শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তা নিয়ে আপস করছে। তা ছাড়া এই সব অ্যাপের মাধ্যমে স্পাইওয়ার ও ম্যালওয়ার ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কেন্দ্রের এই ঘোষণার পর মুহূর্তেই সরকারি টিকটক অ্যাকাউন্ট ডিসেবল করে দেওয়া হয়। সেখানে প্রায় ১১ লক্ষ ফলোয়ার ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, টিকটক নিয়ে উদ্বেগ তো রয়েছেই। কিন্তু আরও চিন্তা হল ইউসি ব্রাউজার বা ক্যাম স্ক্যানার নিয়ে। কারণ, বহু লক্ষ ভারতীয় সরকারি নথিপত্র বা ব্যক্তিগত প্রমাণপত্র মোবাইলে ক্যাম স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্যান করেছে। সেই সব নথির আর কোনও গোপনীয়তা রয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রবিবারই ‘মন কি বাত’ অনু্ষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ভারতের দিকে যারা চোখ তুলে দেখেছে তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। চিনের নাম না করেও তিনি যে ভাবে স্বদেশি দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহারের কথা বলেছেন তাতে বেজিং-কে বর্জণের বার্তাই ছিল পরিষ্কার।
তার পরই সোমবার বিকেলে সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, “ যে ধরনের কার্যকলাপ এরা করছিল তা দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে”।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার’-এর বিশদে পর্যালোচনা করে এই মর্মে সুপারিশ করেছিল। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুধু তা নয়, সরকারের বক্তব্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জন প্রতিনিধিদের তরফে সংসদের ভিতরে ও বাইরে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। তাই সবদিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকার ও কিছু রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই চিনা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি ভেঙে দিতে শুরু করেছে। ভারতীয় রেল চিনা সংস্থার সঙ্গে ৪৭১ কোটি টাকার একটি চুক্তি রাতারাতি ভেঙে দিয়েছে। চিনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ভেঙে দিয়েছে টেলিকম দফতরও। তা ছাড়া গতকাল বিহার সরকারও চিনা বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে একটি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।