দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লাদাখে চিনা সেনার হামলায় শহিদ জওয়ান কর্নেল বাবুর পরিবারের জন্য ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করলেন তেলেঙ্গানবার মুখ্যমন্ত্রি কে চন্দ্রশেখর রাও। এছাড়া তাঁর স্ত্রীর জন্য চাকরি ও জমির ঘোষণাও করেছেন তিনি।
শুক্রবার এই ঘোষণা করেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী। কে চন্দ্রশেখর রাও বলেন, “সন্তোষ বাবু শুধু তেলেঙ্গানার নয়, গোটা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তিনি আমাদের গর্ব। তাঁর এই মহান আত্মবলিদানের জন্য তাঁর পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল। এছাড়া তাঁর স্ত্রীকে গ্রুপ ১ সরকারি চাকরি ও একটি রেসিডেন্সিয়াল প্লট দেওয়া হবে।”
শুধুমাত্র সন্তোষ বাবুর জন্য নয়, লাদাখে শহিদ অন্য ১৯ জওয়ানের প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে তেলেঙ্গানা সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সীমান্তে যে সেনা জওয়ানরা দেশকে পাহাড়া দেন, তাঁদের জন্য গোটা দেশের এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের উচিত এই শহিদ জওয়ানদের পরিবারকে সাহায্য করা। তাই বাকি ১৯ শহিদ জওয়ানের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মাধ্যমে এই টাকা তাঁদের কাছে পৌঁছে যাবে।”
গত সোমবার রাতে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার আচমকা হামলায় শহিদ হন ভারতীয় সেনার ২০ জওয়ান। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ জওয়ানই ছিলেন ১৬ বিহার রেজিমেন্টের। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল বিকামুল্লা সন্তোষ বাবু। তিনিও শহিদ হন ওই হামলায়। লোহার রড, কাঁটা লাগানো ব্যাট নিয়ে হামলা করে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। প্রস্তুত ছিলেন না ভারতীয় সেনারা। তাঁরা পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪ থেকে চিনা তাঁবু সরানো হয়েছে কিনা তা দেখতে গিয়েছিলেন। তখনই এই হামলা হয়।
প্রথমে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও জবাব দেয় ভারতীয় সেনা। চিন স্বীকার না করলেও বেতারে আড়ি পেতে জানা গিয়েছে চিনের অন্তত ৪৫ সেনা হতাহত হয়েছে। এই ঘটনার পরে অবশ্য আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় চাপে পড়ে গিয়েছে চিন। আমেরিকা- সহ বিশ্বের বড় দেশগুলি ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে। আমেরিকা তো স্পষ্ট অভিযোগ করেছে, ভারতের এলাকা দখলের জন্যই এই হামলা চালিয়েছিল চিন।
সন্তোষ বাবুর মৃত্যুর খবর মঙ্গলবার সকালেই এসে পৌঁছয় বাড়িতে। কয়েক দিন পরেই নিজের জন্মদিনে বাড়ি ফেরার কথা ছিল সন্তোষ বাবুর। তা আর হল না। শেষ ফেরা ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে। শোকের আবহে ঢেকে যায় চারদিক। কিন্তু তার সঙ্গেই ছিল গর্ব। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া তো আর কম মহৎ কাজ নয়। মুহুর্তের মধ্যে সন্তোষ বাবুর খবর ছড়িয়ে পড়ে তেলেঙ্গানার সূর্যপেট শহরের আনাচে কানাচে। আর তারপরেই শহরের বীর সন্তানকে বরণ করে নিতে তৈরি হয় শহরটা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ হয় কর্নেলের শেষকৃত্য। হাজির ছিলেন পরিবারের সকলে। মুখে মাস্ক পরে চার বছরের ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে হাজির ছিলেন সন্তোষ বাবুর স্ত্রী। ছেলের মুখেও ছিল মাস্ক। মুখাগ্নি করেন সন্তোষ বাবুর বাবা। স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় সন্তোষ বাবুর সেনার পোশাক। ২১ তোপের সেলামি দেন জওয়ানরা।
সেদিন যেন কোথাও গিয়ে এক হয়ে গিয়েছিল গোটা শহরটা। সকাল থেকেই দোকান বন্ধ। শহরটাও যেন শোকে পাথর। তেরঙায় মোড়া সন্তোষ বাবুর কফিনটা যখন জওয়ানরা ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, আশেপাশের বাড়ি থেকে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছিল। মাস্ক পরে শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁরা কেউই হয়তো ব্যক্তিগতভাবে কর্নেলকে চিনতেন না। কিন্তু সবাই স্যালুট জানান ভারত মাতার এই বীর সন্তানকে। আকাশ, বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম, সন্তোষ বাবু অমর রহে ধ্বনিতে।