দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রায় ৭০ দিনবন্ধ থাকার পর বনগাঁর পেট্রাপোল স্থল বন্দরে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য ফের শুরু হতে চলেছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই সীমান্ত বাণিজ্য স্থগিত রাখা হয়েছিল। প্রসঙ্গত মে মাসের প্রথমেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সীমান্ত বাণিজ্য চালু করার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরেও বন্ধই ছিল পেট্রোপোল সীমান্তের আমদানি-রফতানির কাজ।
পেট্রাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানাগিয়েছে, গত ২৩ মার্চ বিকাল থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় সীমান্ত বাণিজ্য। পেট্রাপোলে আটকে পড়েছে মাল বোঝাই প্রায় ২ হাজার ট্রাক।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সীমান্ত বাণিজ্য চালু করার নির্দেশ দেওয়ার পর ২৯ এপ্রিল ফের কাজ শুরুর চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়।’’ পেট্রাপোল সীমান্তের জয়ন্তীপুর এবং হরিদাসপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় প্রশাসনের কাছে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করার আর্জি জানান এবং পাশাপাশি যশোর রোড এবং শুল্ক দফতরের সামনে লাগাতার বিক্ষোভ ও অবরোধ করতে থাকেন এর ফলে ফের বন্ধ হয়ে যায় সীমান্ত বাণিজ্য।
এরই মধ্যে বনগাঁ শহর সহ পেট্রাপোল এলাকা কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ফলে সীমান্ত বাণিজ্য চালু হওয়ার কোনও পরিস্থিতি ছিল না বললেই চলে।
নবান্ন সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে সীমান্ত বাণিজ্যে ছাড় দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। বাংলাদেশে রফতানির ক্ষেত্রে পেট্রাপোল এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার আমদানি রফতানি হয় এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে। সরাসরি প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এবং পরোক্ষ ভাবে ৩০ হাজার,সব মিলিয়ে ৫৫ হাজার মানুষ নির্ভরশীল এই স্থলবন্দরের উপর।
সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসন ‘জিরো’ পয়েন্টে কাজ শুরু করার অনুমতি দিতে চলেছে। জিরো পয়েন্ট অর্থাৎ দুই দেশের সীমান্তে ঢোকা-বেরনোর গেটের মাঝখানের একটি নিদিষ্ট জায়গা। সেখানে এ দেশের লরি যাবে। অন্য দিকে থেকে বাংলাদেশের লরি আসবে। ভারতের লরি থেকে মালপত্র নামাবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা। যদিও এই নতুন পদ্ধতিতে খুশি নন অধিকাংশ ব্যাবসায়ীই। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘সীমান্তে ওই পদ্ধতিতে কাজ করলে দিনে ৭-৮টির বেশি ট্রাক খালি হবে না।” তাই ব্যবসায়ীরা চান আগের পদ্ধতিতেই ভারতের ট্রাক বাংলাদেশের বন্দরে ঢুকে যাক।
প্রয়োজনে এপার থেকেই চালককে খাবার জল এবং করোনা সংক্রমণের সুরক্ষার প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করা হবে। চালক গাড়ি থেকে নামবেন না। বাংলাদেশের শ্রমিকরা মাল খালাস করে দেবেন। চালক ফিরলে ফের তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হবে এবং গাড়ি স্যানিটাইজ করা হবে। তবে সেই প্রস্তাব সরকার আদৌ মানবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যাবসায়ীর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাণিজ্য ফের চালু করার আবেদন জানিয়ে দরবার করেন।
গত ৩০ মে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য চালু করার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ক্লিয়ারিং এজেন্ট এবং শ্রমিকরা, স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং মহকুমা প্রশাসনও ঐকমত্য হয়েছেন দ্রুত সীমান্ত বাণিজ্য চালু করার ব্যাপারে। গোপালবাবু স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন, সমস্ত ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে তবেই এই সীমান্ত দিয়ে কাজ চালু করা হবে।
রফতানিকারকরা বাণিজ্য পুনরায় চালু করার জন্য চাপ স্থানীয় প্রশাসন থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ দিতে শুরু করেন শীঘ্র সীমান্ত বাণিজ্য চালু করার জন্য৷
জেলা কর্তৃপক্ষের স্তরে আদেশের স্পষ্টতা না থাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে ট্রাক চলাচল প্রায় ৭০দিনেরও বেশি স্থগিত রয়েছে।
সূত্রের খবর , পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি পৃথক স্থলবন্দর জুড়ে কমপক্ষে ,,৫০০o ট্রাক আটকা পড়েরয়েছে।
তবে রেলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলছে।
বাংলার মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রাক চলাচল স্থগিত রয়েছে৷
সূত্রের খবর,এক হাজার টন পেঁয়াজ ট্রেনের মাধ্যমে গেদে (ভারত) থেকে দর্শনা (বাংলাদেশ) পাঠানো হয়েছে। একই ভাবে ট্রেনগুলি পেট্রাপোল-বেনাপোল রুটে চলাচল করছে। অন্যান্য অন্যান্য মালবাহী ট্রেনের রুটের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাবাদ-রোহনপুর এবং রাধিকাপুর।
“জেলা প্রশাসনের পর্যায়ে আদেশের স্পষ্টতা না থাকায় সড়ক পথে অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে,” একজন রফতানিকারী নাম প্রকাশ না করে দেশের সময়কে বলেন।
মুখ্যসচিব, রাজীব সিনহা এবং স্বরাষ্ট্রসচিব, আলাপান বন্দোপাধ্যায় কে বহুবার পেট্রাপোল সীমান্তের সড়ক পথের অচলাবস্থার কথা লিখিত ভাবে জানালেও কোনও মন্তব্য বা বার্তাগুলির কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল, যা ২৩ শে মার্চ থেকে আন্তঃসীমান্ত ব্যবসায়ের কোনও ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়নি। প্রায় ২ হাজার ট্রাক আংশিক সত্ত্বেও আটকা পড়েছে ২৮ শে এপ্রিল থেকে ৩ মে অবধি পুনরায় বাণিজ্য শুরু করার চেষ্টা করা হয়।
অন্যদিকে, মহাদীপুরে (মালদা জেলা) বাণিজ্য – এখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর, যেখানে আনুমানিক বার্ষিক ৭০০ মিলিয়ন ডলার বাণিজ্য রয়েছে – প্রায় ৪,৩ooট্রাক আটকা পড়েছে।
রাজ্যের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি, এবং আরও একটি বড় স্থলবন্দরটির বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য প্রায় ৩০০-৩৫০ মিলিয়ন ডলার (অনুমান অনুযায়ী) সীমান্তে ৪০০-এরকম ট্রাক আটকা পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যান্য স্থলবন্দরগুলির মতো চ্যাংড়াবান্ধায় (কোচবিহারে) প্রায় ৩oo ট্রাক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে; ফুলবাড়িতে (জলপাইগুড়িতে) এবং ঘোজাডাঙ্গা (উত্তর চব্বিশ পরগনায়) আটকা পড়ে থাকা ট্রাকের বিস্তারিত জানা যায়নি।
উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চৈতালি চক্রবর্তী বলেছিলেন যে পেট্রাপোলের “জিরো পয়েন্টে” বাণিজ্য অনুমোদিত ছিল। “এ বিষয়ে আর কোনও আদেশ নেই। দয়া করে রাজ্য সচিবালয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন, ”তিনি বলেছিলেন।
উত্তরবঙ্গের স্থলবন্দরগুলিতে শূন্য পয়েন্টে কখনও বাণিজ্য করার অনুমতি ছিল না। এই স্থলবন্দর জুড়ে রফতানিকারক সমিতিগুলি সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (মালদা) এর নির্বাহী সদস্য সমীর ঘোষ বলেছিলেন যে শুল্ক কর্মকর্তারা তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে “প্রয়োজনীয় সতর্কতা অনুসরণ করা হবে” যার মধ্যে মুখোশ এবং গ্লাভস পরানো, প্রতিরক্ষামূলক গিয়ার থাকা, যানবাহনের স্যানিটাইজিং ইত্যাদি রয়েছে।
“প্রায় ৯৫% লকডাউন রাজ্য জুড়ে শিথিল করা হয়েছে। যখন আন্তঃসীমান্ত ট্রাক চলাচল করার বিষয়টি আসে তখন কেন এই কঠোরতা বজায় রাখা হচ্ছে? জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা বলছেন যে তারা নবান্নের (রাজ্য সচিবালয়) আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। ”
সূত্রের খবর,দু’এক দিনের মধ্যেই চালু হতে চলেছে পেট্রাপোলে সীমান্ত বাণিজ্য, তেমনই ইঙ্গিত নবান্নের৷