অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়: বৃহস্পতিবার বাঙালির পরম পরব জামাইষষ্ঠি৷ তবে এবার তা নিয়ে কোথাও কোনও উত্তাপ চোখে পড়ছে না। জামাইদের অফিস ছুটির আবেদন নেই।রাজ্য সরকারের অর্ধ-দিবস ছুটি ঘোষণা নেই। শ্বশুরদের ব্যাগ হাতে বাজারে ছোটাছুটি নেই। হোটেল, রেস্তোরাঁর স্পেশাল ডিশ নেই।
লকডাউন কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছুই । এবার পয়লা বৈশাখ পালন হয়েছে নমো নমো করে। অক্ষয় তৃতীয়াও তাই। ঘরেই সারতে হয়েছে ইদের আনন্দ। তবে বাঙালির পঁচিশে বৈশাখ হয়েছে ভার্চুয়াল। বাড়ির নির্দিষ্ট কোন ঘরে বা বারান্দায় ধুলো ঝেড়ে হারমোনিয়াম বেরিয়েছে লকডাউনের বাজারে। তাই বলে জামাইষষ্ঠী তো আর ভার্চুয়াল করা যায় না। মনে মনে প্রণাম আর ফোনে ফোনে আশীর্বাদ না হয় হল, কিন্তু কব্জি ডুবিয়ে পেট ঠেষে খেতে না পেলে সেটা আবার কেমন জামাইষষ্ঠী। বিয়ের পর থেকে একটিবারের জন্য এমন সুখের দিনে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ায় কামাই নেই এমন জামাইরাও এবার গৃহবন্দি।
ট্রেন, চলছে না, বাস চলছে হাতে গোনা তাও আবার নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক। দূরের জামাইরা তাই এবার দূরেই থাকবেন। চার চাকার গাড়িতে স্বপরিবারে চড়াও যাবে না। তাই মাছের মুড়োটি, কাঁসার বাটিতে আমের আঁটিটি আর এই বছরে জুটছে না অনেক জামাইদের কপালেই। তবে সাইকেল, বাইক, রিকশ দূরত্বের জামাইরা কিছুটা ছাড় পাবেন এবারের ষষ্ঠিতে। তাতেও বিধিনিষেধের বহর অনেক৷
কনটেনমেন্ট জোনের জামাইরা তো কোন কথা বলার সুযোগই পাচ্ছেন না, রেড জোনের জামাইরাও মন খারাপ করে বসে আছেন কারণ এবার নেমন্তন্ন পাননি তাঁরাও । তার উপরে রেড জোনেরও তো আবার কত ভাগ। ‘বি’ যেতে পারবে ‘সি’-এর কাছে কিন্তু ‘এ’ থাকবে একা। ‘সি’ আবার ‘বি’-এর কাছে গেলেও মাস্কে ঢেকে রাখতে হবে মুখ। সামাজিক দূরত্ব রেখে শ্বশুর, শাশুড়িকে প্রণামও না হয় করে নেওয়া যাবে কিন্তু শালিদের সঙ্গে রসিকতা করতে কাছা কাছি একদম যাওয়া যাবে না।
একটা প্রবাদ আছে ‘যম-জামাই-ভাগনা- কেউ নয় আপনা।’ তবু জামাই আদরের কোনও কমতি নেই বাঙালি জীবনে। সেটা চলে বারোমাস। আর জামাইষষ্ঠী মানে স্পেশাল– ‘জামাই ডে’। নতুন পাখার উপরে আমের পল্লব এবং আম-সহ পাঁচ রকমের ফল সাজিয়ে জামাই-এর মঙ্গল কামনায় শাশুড়ির দল ব্রত পালন করেন এই দিনটায়। ১০৮টি দুর্বার আঁটি দিয়ে উপকরণ সাজাতে হয়। করমচা-সহ পাঁচ থেকে সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার উপর সাজিয়ে রাখতে হয় শাশুড়িকে। সেই সঙ্গে নতুন পোশাক তো আছেই। বিনিময়ে অবশ্য শ্বশুর, শাশুড়িদেরও প্রাপ্তি ঘটে।
এবার সেসবের আয়োজন নেই বললেই চলে। বাজারের অবস্থাও করুন। আমপানের ধ্বাক্কায় আম নেই বললেই চলে। ঝড়ে ঝরে পড়া হিমসাগর ১৫০ টাকা কেজি, লিচুর কেজি ১২৫ টাকা, কাঁঠালের এখনও দেখা নেই। খাসির মাংস ৯০০ টাকা আর অরুচি ধরে যাওয়া মুরগিও ২৫০-এর আশপাশে। লকডাউনের বাজারে মিষ্টিওয়ালারাও এবার আর স্পেশাল ‘জামাইভোগ’ সন্দেশ তৈরী করেননি।
এই বাজারে এক মাত্র কপাল ভাল শুধু ঘরজামাইদের। অথবা ‘পাশের পাড়া বা ফ্ল্যাট’এ থাকা জামাইদের। তাঁরাই এবার বাঁচিয়ে রাখবেন বাঙালির ঐতিহ্যপূর্ণ শুভ লকডাউন জামাইষষ্ঠী৷