একটি নির্মম তামাশা…

0
922
অশোক মজুমদার

করোনার দুঃসময়ে মানুষের দুঃখ, কষ্ট নিয়ে এক নির্মম তামাশা শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদি। গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমে মোদি ও তার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ দেশের মানুষের কাছে ২০লক্ষ কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়ার এক আজব গল্প ফেঁদেছেন। একদিকে তার অযোগ্য প্রশাসন পরিযায়ী শ্রমিকদের রেলের চাকায় প্রাণ দিতে বাধ্য করছে, অন্যদিকে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়া আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে মোদি নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করছেন আত্মনির্ভর ভারতের প্যাকেজ। টিভিতে তার নাটকীয় ভাষণ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ হলেও অভিনেতা হিসেবে তিনি সম্পূর্ণ সফল। যে টাকা সাধারণ মানুষ পাবে না, চোখেও দেখবে না দীর্ঘ ভাষণে তিনি তারই এক চমৎকার বিজ্ঞাপন দিলেন। গরিব মানুষদের নিয়ে এত নির্মম পরিহাস সাম্প্রতিক সময়ে আর কেউ করেনি।

সঙ্গত কারণেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এটা একটা চরম ভাঁওতা। কারণ মানুষের কাছে এ টাকা পৌঁছবে না, টাকা আসবে না রাজ্যের হাতেও। যেভাবে এই প্যাকেজ কার্যকর করার কথা প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। সেখানে পিএম টু ডিএম টাকা পাঠানোর কোন সিদ্ধান্তই আইনসঙ্গত নয়। কর্মসংস্থান, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি, কোন কিছুই এখানে গুরুত্ব পায়নি। নেই রাজ্যের জন্য যে ১০লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ চাওয়া হয়েছিল তার কোন উল্লেখ। সত্যি বলতে কী এই প্যাকেজে দেশের মানুষের উৎসাহিত হওয়ার মত কোন ব্যাপারই নেই।

কেউ উৎসাহিত হচ্ছেনও না। অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যেই এই প্যাকেজ নিয়ে বহু প্রশ্ন তুলেছেন। মোদি বলেছেন, ২০লক্ষ কোটি মানে দেশের জিডিপির ১০শতাংশ। কিন্তু হিসেব যা দাঁড়াচ্ছে তাতে এই প্যাকেজে জিডিপির ২শতাংশের বেশি পাওয়া যাবেনা। এটা কোন নতুন প্যাকেজও না। আরবিআই এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্যাকেজেও মোদির ঘোষণাগুলির অনেক কিছুই আগে ঢুকে পড়েছে। ইতিমধ্যেই ৯.৭৪লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগেই ঘোষণা করে দিয়েছে। এই প্যাকেজের মধ্যেই ঢুকে গেছে জন ধন যোজনা, উজ্জলা গ্যাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার টাকা। সম্ভবত আগে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা করা ১.৭লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজও এর মধ্যে থাকবে। এটা একটা বুজরুকি। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। আমেরিকা যখন ২২৫লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে তখন তারমধ্যে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ মানে তাদের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলির টাকা থাকে না।

অর্থনীতিবিদদের মতে এতে সাধারণ মানুষের কোন উপকার হবে না, সুবিধে হবে হাউস লোন, কার লোন নেওয়া লোকেদের। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা এলেই সচল হয় অর্থনীতি। অথচ মোদিরা করছেন ঠিক উল্টোটা। তারা বলছেন, মানুষের হাতে টাকা দেওয়া নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেওয়ার কথা। যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে এর ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কিন্তু আমাদের দেশে আইন দুর্বল, আমলাদের একাংশ দুর্নীতিগ্রস্থ। কর্পোরেট ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতির হাল ফেরানোর রাস্তায় আমাদের লাভ নেই। মাঝখান থেকে কিছু আজেবাজে সংস্থা টাকা নিয়ে কেটে পড়বে। বরং ভরসা করা উচিৎ সাধারণ মানুষদের ওপর। মানুষের হাতে টাকা এলেই সে খরচ করবে, ব্যবসা বাড়বে। মোদিদের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই মানুষ ব্যাপারটাই অনুপস্থিত। এই অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি যে তাদের জনভিত্তিতে ধ্বস নামিয়েছে তা মোদি আগামি নির্বাচনেই বুঝতে পারবেন।

মোদি বলছেন, আত্মনির্ভর ভারতের কথা। কিন্তু সাধারণ মানুষকে আত্মনির্ভর করার কথা ভাবছেন না। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না। করোনা এই অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে। কারণ বিজেপি নামক দলটির কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ কর্পোরেটদের পদলেহন ছাড়া কোন অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই নেই। এটাই সমস্যা আরও গভীর করেছে। মোদি বলেছেন, ভাইরাসকে আমাদের কন্ট্রোল করতে দেবো না। তবে মোদিকে দেশের অর্থনীতি কন্ট্রোল করতে দিলে যে দেশ ডুববে এতে কোন সন্দেহ নেই। ২০লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের বুজরুকিই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

Previous articleকৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর,তৃতীয় কিস্তিতে ১ লক্ষ কোটির প্যাকেজ ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
Next articleচিনকে টপকে বিশ্বে ১১নম্বরে গেল ভারত, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here