দেশের সময়: আজ পঁচিশে বৈশাখ জোড়াসাঁকোর দরজা বন্ধ। গত বছরও এদিনটিতে ভোর থেকে হাজার মানুষ লাইন দিয়ে রবীন্দ্রনাথের ঘরে ঢুকে তাঁর ছবিতে মালা দিয়ে প্রণাম করে শ্রদ্ধা জানান। জোড়াসাঁকো প্রাঙ্গণ মুখর থাকে রবীন্দ্রনাথের গানে, কবিতায়। বিশিষ্ট শিল্পীরা তাঁর গান করেন, কবিতা আবৃত্তি করেন। নাচে অংশ নেন রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষার্থীরা। মেতে ওঠে রবীন্দ্রসদন। স্কুলে স্কুলে সকাল থেকে সাজ সাজ রব। সারা বাংলা মেতে ওঠে। সরকারি, বেসরকারি অনুষ্ঠানও থাকে।
আর এবার পঁচিশে বৈশাখের ছবিটা লকডাউনে একেবারে অন্য রকম। জোড়াসাঁকো, রবীন্দ্রসদন–সহ বিভিন্ন স্কুল বা সংগঠন, ক্লাবপ্রাঙ্গণ আজ স্তব্ধ। অন্তরে সারা বছরই রবীন্দ্রনাথ কোনও না কোনোভাবে বাঙালির সঙ্গে থাকেন, আজও থাকবেন। সকালে রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন ক্যাথিড্রাল রোডে মূল মঞ্চে কবিকে শ্রদ্ধা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে থাকবেন না কোনও শিল্পী। কলকাতার ১০–১২ জন বিশিষ্ট শিল্পীকে নিয়ে অনুষ্ঠান সাজিয়েছে তথ্য–সংস্কৃতি দপ্তর। এই অনুষ্ঠান বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সারাদিন দেখান হবে।
অন্যদিকে, গুটিকয় লোকজন নিয়ে আজ সকালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কবিমূর্তিতে মালা দেবেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। হচ্ছে না রীতি মেনে কোনও অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বি টি রোড ক্যাম্পাসের মরকতকুঞ্জে কবিকে শ্রদ্ধা জানাবেন রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক সংসদের সভাপতি জয়ন্ত রায়। সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই কবিকে শ্রদ্ধা জানাবেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদুৎ চক্রবর্তী। উপাসনা মন্দিরে শ্রদ্ধা জানাবার পর যাবেন উত্তরায়নে। সেখানে ১০ জন গানে গানে স্মরণ করবেন কবিকে। ছাতিম তলায় সঙ্গীত ভবনের কয়েকজন অধ্যাপক ও ছাত্র ছাত্রীও গানে শ্রদ্ধা জানাবেন কবিকে। অন্যদিকে এস এফ আই বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের অন লাইনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
তবে রবীন্দ্রনাথ আজ সবথেকে বেশি থাকবেন অন্তর্জালে— ইউটিউবে, ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী–শিক্ষক অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, জোড়াসাঁকোয় কোনও উৎসব সম্ভব নয়। আমরা কেউ যেতে পারব না। এমন পরিস্থিতি যে কখনও আসতে পারে, জীবনে ভাবিনি। আমাদের ভরসা তাই ইন্টারনেট। ছাত্রছাত্রীদের সহায়তায় অগ্নিভ ভিডিও তুলে পাঠাচ্ছেন। লাইভ ফেসবুকে দেখানো হবে। স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্ত কিংবা শ্রীকান্ত আচার্যর মতো শিল্পীদেরও ফেসবুকে পাওয়া যাবে। সারা বাংলার শিল্পীরাই এই উদ্যোগে সামিল।
বেশ বড়সর আয়োজন হয়েছে ‘সূর্যাবর্ত’ আর ‘আবৃত্তিলোক’–এর উদ্যোগে। প্রণতি ঠাকুর ও সৌমিত্র মিত্রের পরিকল্পনায় সকাল ৯টা থেকে বিশিষ্ট শিল্পীরা গান শোনাবেন, আবৃত্তি করবেন ফেস বুক লাইভে। থাকবে শ্রমিক অফ সাইলেন্স–এর অনুষ্ঠান।
রবীন্দ্র অনুরাগীরা অনেকে এবার অনলাইনে রবি ঠাকুরকে নিয়ে দিনটা কাটাবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। সেই মতো প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। বাড়ির ছাদে, ঘরে, বারান্দায় চলছে মোবাইল রেকর্ডিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকাল থেকে সে সব তুলে দেওয়া হবে বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।
বনগাঁর সাহিত্য পত্রিকা ‘কবিতা আশ্রম’ অনলাইনে কবিগুরুকে স্মরণ করছে। কবি বিভাস রায় চৌধুরী জানান কবিরা রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেছেন। সেগুলি ভিডিয়ো করা হয়েছে। আটটি পর্বে সারাদিন প্রকাশ করা হবে। রইল লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/1010769932305271/posts/2915661028482809/
এছাড়াও বনগাঁ জয়পুরে “সুরাঙ্গন” এর উদ্যোগেও অনলাইনে চলছে কবি প্রণাম।
https://www.facebook.com/1010769932305271/posts/2915396561842589/