বাংলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬১, মৃত ৩, নবান্নে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

0
941

“রাজ্যের উপদেষ্টা পর্ষদের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি”

দেশের সময়ওয়েবডেস্ক: রাজ্যের উপদেষ্টা পর্ষদের (‌গ্লোবাল অ্যাডভাইজরি বোর্ড)‌ নেতৃত্বে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি। করোনা মোকাবিলায় এই বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর।
শনিবার এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের আলোচনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কথা বলেছেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক। করোনা পরিস্থিতির সমস্যার মূলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছেন অভিজিৎ বিনায়ক, অমর্ত্য সেন সহ আরও দুই অর্থনীতিবিদ।

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রোগমুক্তির সঙ্গে যে পরিস্থির মোকাবিলা করা প্রয়োজন তা হল অনাহার। ‘‌যদি গোটা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত সফল করতেই হয়, তা হলে গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দিতে হবে। নাহলে মানুষ শুধু খাবারের খোঁজেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে!‌’‌ বলেছেন অভিজিৎ বিনায়ক।

এরাজ্যে সেবিষয়ে পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা মোকাবিলায় রাজ্যে তৈরি হল অ্যাডভাইজরি বোর্ড ফর কোভিড রেসপন্স পলিসি। আর তার নেতৃত্ব দিলেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জিকে।

রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যসচিব। জানিয়েছিলেন, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯। মাঝে রবিবার সরকারের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন রাজ্যে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬১। এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন তিন জন।


মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অভিযোগ করেছেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য করতে গড়িমসি করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে ৬১ জন করোনায় আক্রান্ত। যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৫৫ জন ৭টি পরিবারের বলে জানান তিনি। কালিম্পঙে মৃত এক মহিলা-সহ ওই পরিবারের মোট ১১ জন করোনায় আক্রান্ত। আলিপুর কমান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক-সহ ওই পরিবারের মোট ৫ জন করোনা পজিটিভ। এছাড়া, হলদিয়ায় একই পরিবারের ২ জন, এগরার ১২ জন, তেহট্টের ৫ জন এবং হাওড়ার ৮ জন করোনায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘হয় আত্মীয়, নয়তো ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে মেলামেশা করেছেন।’’ তিনি আরও জানান, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশি যোগ রয়েছে। এ দিন মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যে মোট ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আশার কথা, ১৩ জন সুস্থও হয়ে উঠেছেন।’’

রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়েই, নাম না করে একটি রাজনৈতিক দলের আইটি সেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘কিছু রাজনৈতিক দলের আইটি সেল স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিন বলে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে, সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।’’ এ নিয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এর পরই মমতা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই), এন-৯৫ মাস্ক ও নমুনা কিট নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পরিসংখ্যান তুলে ধরে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যা পাওয়া উচিত ছিল, কেন্দ্রের থেকে তা পাইনি।’’ টাকা দিয়েও সরঞ্জাম মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘পরিসংখ্যান পাওয়ার পর আশা করি আর কেউ রাজনীতি করার চেষ্টা করবেন না।’’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিন দশেক আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা হয়েছে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরে জাতীয় স্তরের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ভারতের জনবিন্যাস, আর্থসামাজিক কাঠামো, মানুষের বসবাসের এলাকার ধরন ব্যাখা করেন নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ ও তাঁর স্ত্রী এস্থার ডুফলো। তিনিও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।

ওই প্রতিবেদনে তাঁরা লিখেছিলেন, ভারত বিপুল জনসংখ্যার দেশ। সেখানে সংক্রমণ ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করতে পারে। এত গ্রামাঞ্চল, এত বস্তি, এত ঘিঞ্জি বসতি এলাকা রয়েছে যে, সেখানে মৃত্যুর বিস্ফোরণ ঘটতে বেশি সময় লাগবে না। একে রুখতে গেলে ব্যাপক সচেতনতা ও প্রচার ছাড়া আর বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। লকডাউন কেন বলবৎ হয়েছে, সেকথা আরও বেশি করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ন’দফা পদক্ষেপের নিদান দেন তাঁরা।

১. প্রত্যেকটি পরিবারকে করোনার অভিঘাত নিয়ে সচেতন করতে হবে। এই কাজ করতে হবে ধারাবাহিক ভাবে। যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন কোভিড-১৯ কতটা ভয়াবহ।

২. প্রতিটি সংক্রমণের ঘটনা সঠিক ভাবে যাতে রিপোর্ট হয় তার জন্য চাই সার্বিক উদ্যোগ। অর্থাৎ কেউ যেন রোগের কথা গোপন না করেন। এটাই সংক্রমণ রোখার চাবিকাঠি।

৩. প্রশাসনের কাছে যাতে সঠিক রিপোর্ট পৌঁছয় তার জন্য একাধিক পন্থা নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, অঙ্গনওয়াড়ি-আশা কর্মীদের এ ব্যাপারে যুক্ত করার কথা।

৪. গ্রামাঞ্চলে যে সব স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন বা চিকিৎসকরা কাজ করছেন, তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে উপসর্গ দেখলেই তাঁরা স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে তখনই রিপোর্ট করতে পারেন।

৫. রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ করতে হবে সময়মতো। একটু দেরি হলেই যে সমূহ বিপদ তাও উল্লেখ করেছেন অভিজিৎ-এস্থার। এই কাজ করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। এও বলেছেন, সব কটি রাজ্যের মধ্যে এ ব্যাপারে যেন সমন্বয় থাকে।

৬. প্রতিটি রাজ্যে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে মোবাইল টিম গড়া দরকার। করোনা পরীক্ষার কিট রাখতে হবে তাঁদের কাছে। কারও শরীরের সন্দেহজনক উপসর্গের খোঁজ পেলেই তাঁরা যাতে সেখানে পৌঁছে যেতে পারেন।

৭. যাঁরা সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন তাঁদের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যাতে কোনও অভাব না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে।

৮. অর্থনৈতিক ভাবে যাতে সাধারণ মানুষ একটা নিশ্চয়তা পায় তার গ্যারান্টি সরকারকে দিতে হবে। নাহলে লকডাউনের উদ্দেশ্য বিফলে যাবে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার এক লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে ওই প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন নোবেলজয়ী দম্পতি। এই আর্থিক প্যাকেজকে ‘স্মল পটেটো’ বলে উল্লেখ করেছেন অভিজিৎ-এস্থার।

৯. যতদিন না ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে ততদিন সরকারকে এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি জারি রাখতে হবে। এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে গড়ে তুলতে হবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।

তাঁদের এই মতামত ও নির্দেশ মান্য করে রাজ্যের তরফে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করা হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।

Previous articleলকডাউন ওঠা নিয়ে তৈরি হল ধোঁয়াশা, রাজ্য ভিত্তিক খতিয়ান দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক
Next articleধাপে ধাপে উঠবে লকডাউন ইঙ্গিত মোদীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here