অ্যান্টি ম্যালেরিয়া ড্রাগ ‘ক্লোরোকুইন’করোনা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহারে মৃত্যু বৃদ্ধের, আশঙ্কাজনক স্ত্রী

0
1601

দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীর আকার নিলেও এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের প্রতিষেধক বানিয়ে উঠতে পারেনি কোনও দেশ। বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই শোনা গিয়েছে অ্যান্টি ম্যালেরিয়া ড্রাগ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন ফসফেট ব্যবহারে শরীরে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স সবুজ সঙ্কেতও দিয়েছে এই ব্যাপারে। কিন্তু কিছু বিধিনিষেধও রয়েছে। আর এই ড্রাগ নিজে নিজে শরীরে প্রয়োগ করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক বৃদ্ধ। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তাঁর স্ত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার অ্যারিজোনা প্রদেশে। কয়েক দিন আগে হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে কোভিড ১৯-এর প্রতিষেধক বানানোর ক্ষেত্রে এই অ্যান্টি ম্যালেরিয়া ড্রাগ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন ফসফেটকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের কথা শোনার পরেই ইন্টারনেটে পড়াশোনা করে এই ড্রাগ নিতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন ওই বৃদ্ধ।

জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির দু’জনেরই বয়স ৬০-এর উপর। তাঁরা অ্যারিজোনার ম্যারিকোপা কাউন্টির বাসিন্দা। ফিনিক্স-এ ব্যানার হেলথ নামের একটি হাসপাতালে কাজ করতেন তাঁরা। এই ড্রাগ নেওয়ার পরেই তাঁদের বমি ও মাথা ঘোরা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হন তাঁরা। সেখানেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধর। তাঁর স্ত্রীও গুরুতর অসুস্থ।

কিন্তু চিকিৎসকেরা আশা করছেন, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আশ্চর্যের কথা, তাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্তই হননি। আগে থেকেই প্রতিষেধক নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
ব্যানার পয়জন অ্যান্ড ড্রাগ ইনফর্মেশন সেন্টারের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডক্টর ড্যানিয়েল ব্রুকস জানিয়েছেন, “আগে থেকেই প্রতিষেধক নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওই দম্পতি।

কিন্তু এটা খুবই বোকার মতো ও বিপজ্জনক কাজ। করোনা মোকাবিলায় এখনও কোনও ম্যাজিক পিল তৈরি হয়নি।” তিনি আরও জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে ক্লোরোকুইন ফসফেটের ব্যাপারে পড়াশোনা করেন ওই দম্পতি। কিন্তু নেটে এই বিষয়ে প্রচুর ভুল তথ্য দেওয়া রয়েছে যে এই ড্রাগের ব্যবহারের ব্যাপারে। সেই ভুল তথ্য দেখেই এই কাজ করেছেন তাঁরা।

ব্রুকস আরও জানিয়েছেন, “সত্যিই যদি করোনাভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক পাওয়া যায় তাহলে সবার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতো সংস্থা সে কথা জানাবে। আপনাদের উচিত বিজ্ঞানীদের কথা শোনা। এভাবে অযথা আতঙ্কিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়।”

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অবশ্য বারবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকেই আঙুল তুলেছেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর কথায়, “আমরা দেখেছি বারবার হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে এই ড্রাগের কথাই বলছিলেন ট্রাম্প। তারপরেই আমরা এই ড্রাগ ব্যবহারের কথা ভাবি। কিন্তু এর ফলে যে এই অবস্থা হবে তা বুঝতে পারিনি।”

যদিও বৃদ্ধার এই মন্তব্যের পরে হোয়াইট হাউসের তরফে কোনও জবাব দেওয়া হয়নি।
গত শুক্রবার ট্রাম্প বলেছিলেন, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা দুটো ড্রাগ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন ফসফেট করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এর পরীক্ষা এখনও চলছে। ওই একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের ডিরেক্টর ডক্টর অ্যান্থনি এস ফউসি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এই ড্রাগের ব্যবহারকে মান্যতা দেয়নি আমেরিকা।

অন্যদিকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ড্রাগ রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মী যাঁরা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করছেন, অথবা হোম-কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগী যাঁদের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ, এমন রোগীদের চিকিৎসা বা কাছ থেকে দেখাশোনা করছেন যাঁরা, শুধুমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যাবেহাইড্রক্সিক্লোরোকুইন।

এই ড্রাগ তাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে। তবে এখনও এইসবই রয়েছে গবেষণার স্তরে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কোনও ড্রাগ বা ভ্যাকসিনকেই সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়নি। ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে ছাড়পত্র দিলেও তার কিছু বিধিনিষেধ বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সব ক্ষেত্রে এবং সব রোগীর উপরে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করা যাবে না।
এই ব্যাপারে কার্ডিওলজিস্ট ডাক্তার নরেশ ট্রেহান বলেছেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন হল immune modulator অর্থাৎ ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন ভাঙতে থাকে, তখন এই ড্রাগ কার্যকরী হতে পারে। শরীরে প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করতে পারে।

তবে ক্লোরোকুইনের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। শরীরের অনেক প্রোটিনের কার্যকারিতা বন্ধ করে দিতে পারে, টক্সিকও হতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। তাই ক্লোরোকুইন কার শরীরে এবং কী পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে হবে তার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ দরকার।

Previous articleকরোনা আপডেট:এক নজরে ভারতে মোট আক্রান্ত ৪৯২, মৃত ৯, আতঙ্কের মধ্যেও সুস্থ ৩৭জন
Next articleএই মায়ের জন্য বাড়িতে থাকুন, বৃদ্ধার ভিডিও টুইট করে আবেদন মোদীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here