দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃসোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে গোটা বাংলাতেই কার্যত লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। জরুরি পরিষেবা ভিন্ন কিছুই খোলা নেই। সন্ধ্যায় রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর্জি জানালেন, খুব জরুরি প্রয়োজন না থাকলে কেউ যেন বাড়ি বাইরে না বেরোন। এ ব্যাপারে সরকারের কথা যেন সবাই শুনে চলেন।
সোমবার নবান্নে সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে বিরোধী দলগুলির কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে মানুষ যাতে আপাতত বাড়িতেই থাকে, সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখে সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে সবার উদ্যোগী হওয়া উচিত বলেই জানিয়েছেন তিনি।
পরে সন্ধ্যায় এক টুইট বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলার মানুষকে নিরাপদে রাখতে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সরকার যথাসাধ্য করছে। তবে শুধু সরকারের চেষ্টাতেই এই লড়াই জেতা যাবে না। এই সংকটের সময়ে সাধারণ মানুষের সর্বৈব সহযোগিতা ও সমষ্টিগত প্রয়াস প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “আমরা এক সঙ্গে এর লড়াই করব। একমাত্র আমরাই পারি আমাদের আশপাশের সবাইকে নিরাপদে রাখতে”।
The West Bengal Government is leaving no stone unturned to ensure safety & precautions for its citizens in combating COVID-19 efficiently.
At this critical juncture, it is only collective efforts & public cooperation which can help fight this menace (1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 23, 2020
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সোমবার বাংলায় প্রথম কোনও রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দমদমের ওই ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসেননি। তবে মনে করা হচ্ছে, তাঁর পরিবারের কেউ সম্প্রতি বিদেশে গিয়েছিলেন, বা সেখান থেকে এসেছিলেন, তার থেকেই ওই প্রৌঢ়ের শরীর সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এবং এই ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সংক্রমণ এড়াতে কী ভাবে এই সংকটের প্রহরে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখতে হবে। বস্তুত লক ডাউনের উদ্দেশ্যও তাই। মুখ্যমন্ত্রী সেটাই পই পই করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
করোনা আক্রান্ত দমদমের মৃত ব্যক্তির পরিবারের ইতালি ভ্রমণের কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যু কলকাতায় তথা রাজ্যে। দমদমের বাসিন্দা তিনি। ওই ব্যক্তির কোনও বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড মেলেনি শুরুতে। ফলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কা দেখা দেয়। সেই আশঙ্কা দূর করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি ইতালি থেকে ফিরেছিলেন ওই ব্যক্তির পরিবার।
করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এই প্রথম কলকাতায় মৃত্যুর ঘটনা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সল্টলেকের একটি বেসররকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন দমদম থানার কাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি। সোমবারই দুপুরে সেখানেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই ব্যক্তি যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন জানা গিয়েছিল তিনি বিদেশযাত্রা করেননি।
বা কোনও বিদেশির সঙ্গে তার কোনও যোগসূত্র ছিল না। সোমবার বিকেলে করোনা সংক্রমণ রুখতে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। তখন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই ব্যক্তির পরিবার সম্প্রতি করোনা বিধ্বস্ত ইতালি থেকে ফিরেছিলেন।
যেদিন ওই ব্যক্তির শরীরে করোনার হদিশ মেলে, সেদিন থেকেই একথা ছড়িয়ে পড়েছিল যে তাঁর কোনও বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড নেই। ফলে আতঙ্ক ছড়ায়, তবে কি ওই ব্যক্তি ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’-এর শিকার? আর এই নিয়ে চর্চা হতেই আরও বেড়ে যায় আতঙ্ক।
দমদমের মৃত এই ব্যক্তির বিদেশ যাওয়া বা বিদেশ থেকে ফেরার অতীত রেকর্ড ছিল কিনা, তা নিয়ে গত কয়েকদিনে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, তা কাটল এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়।
দমদমের ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রথম দিকে জানা যায়, কোনও রকম বিদেশ যোগ নেই ওই ব্যক্তির সঙ্গে। এই কথা সামনে আসতেই শুরু হয় উঠকণ্ঠা।
সামনে আসে তা হলে কি ওই ব্যক্তি ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’-এর শিকার। এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় কাটল সেই ধোঁয়াশা।
ছবি এফ বি৷