দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্স করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর সাংবাদিক বৈঠক করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, এই সময়ে ভয় না পেয়ে সতর্ক থেকে লড়তে হবে।
এদিন মমতা বলেন, “আমি আমার ভাষায় বলেছি, ডরেঙ্গে নেহি, লড়েঙ্গে।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা সাতটা ল্যাবের কথা বলেছি। আমাদের কথা তিনি নোট করেছেন। তিনি যে কথা বলেছেন, সেটা আমরা অনেক আগেই করে নিয়েছি। আমি বৈঠকে বলেছি আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ করে দিন। সেটাই সব থেকে বড় সমস্যা। সবার আগে সেটা বন্ধ করতে হবে। মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানাও বিমান বন্ধ করতে বলেছে।”
দেশজুড়ে আগামী রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশে জনতা কারফিউ-এর ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেইসঙ্গে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য রবিবার বিকেলে পাঁচটায় হাততালি, থালা, কাঁসর বাজাতেও অনুরোধ করেছেন তিনি। কিন্তু তাতে কী করোনা প্রতিরোধ সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে এখনও কেন কলকাতায় আন্তর্জাতিক বিমান নামার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর কাছে ‘অভিযোগ’ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার বিকেলে মোদীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা হয় মমতার। সেখানেই তিনি সাহায্য চান বলে নিজেই পরে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সমস্ত নোট নিয়েছেন। কিন্তু কোনও আশ্বাস দেননি। রাজ্যের পরিস্থিতি জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের এখানে যে অনেককিছুই যথাযথ পরিমানে নেই, সেই বিষয়ে জানিয়েও কোনও আশ্বাস পাইনি।’
এদিন সকালেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস রুখতে যে কিট প্রয়োজন, তার জন্য কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় রাজ্যগুলিকে। কেন্দ্রই তা দিতে পারে। কিন্তু বারবার জানানো সত্ত্বেও তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগের সুর শোনা যায় তাঁর গলায়। রাজ্যে করোনা পরীক্ষার জন্য যে ল্যাবের সংখ্যাও নেহাতই কম, তাও প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন বলে জানান মমতা।
শুধু তাই নয়, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষরা যে এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়বেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই আগামী ছয় মাস রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭ লক্ষ ৮৫ হাজার মানুষকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে চাল দেওয়া হবে বলে শুক্রবার নবান্নে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন দু- টাকা কেজি দরে মাসে পাঁচ কেজি করে চাল পাওয়া যায় রেশন থেকে।
সেই চালটাই এবার বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। করোনার জেরে যাতে রাজ্যের মানুষকে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাতে না হয় তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ করে সরকারি কর্মচারী বাড়ি থেকে কাজ করবেন। অর্থাৎ ‘রোটেশন’ পদ্ধতিতে দফতরে যোগ দিতে হবে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের। বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও হাজিরা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন তিনি। কলকাতায় এখনও আন্তর্জাতিক বিমান নামা বন্ধ হোক বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই সময়ে যতটা সম্ভব মানুষকে বাইরে বেরোতে বারণ করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। ২২ মার্চ রবিবার, জনতা কার্ফু পালনের আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে প্রান্তিক মানুষ অর্থাৎ অসংগঠিতক্ষেত্রে কর্মরত মানুষদের জন্য যাতে কেন্দ্র পদক্ষেপ করে সে ব্যাপারেও নবান্নের তরফে দাবি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষের জন্য কিছু করতে বলেছি। আমরা যা করেছি সেই কথা আমরা জানিয়েছি। যেহেতু মানুষ বাইরে বেরোতে পারছেন না । তাই মানুষকে বাড়তি খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার বিষয়েও উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা ছাড়াও পাঞ্জাব এই কথা বলেছে।”
সতর্কতার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও একবার আবেদন জানিয়ে বলেন, “যদি আমার নিজের রোগ হয় তাহলে আমি নিজেকেও সরিয়ে রাখতাম। সেই ভাবে আমাদের সবাইকে সরিয়ে রাখতে হবে। সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলবো, দয়াকরে এক জায়গায় মিলিত হবেন না। এটা আমাদের রাজনৈতিক লড়াই না। এটা রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।”