এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিশেষ দলটিই রওনা দিয়েছে উহানের উদ্দেশে
চিন প্রশাসনের তরফে উহান শহর ছাড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম বাইরের কোনও দেশের মধ্যে ভারতের অনুরোধ মেনে নিয়েছে চিনা প্রশাসন।
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, বিশেষ বিমানটিতে মাস্ক, গ্লাভস, স্ক্যানার সবই রয়েছে৷ বিমানকর্মীদের সঙ্গে বিমানে যাচ্ছে দু’জন চিকিৎসকও। বিমান থেকে না নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই চিকিৎসকদের। বিমানের প্রত্যেক আসনে জলের পাউচ আর খাবারের প্যাকেট রাখা থাকবে। সেই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের রক্তে করোনাভাইরাস নেই, শুধুমাত্র তাঁদেরই এই বিমানে জায়গা দেওয়া হবে। অর্থাৎ যথাযথ নিয়ম, সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করেই নিয়ে আসা হবে যাত্রীদের৷
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে হুবেই প্রদেশে ১২০০ ভারতীয় রয়েছে, যাঁদের মধ্যে ৬০০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সবার সঙ্গেই ধীরে ধীরে যোগাযোগ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করা হবে সকলকে।
এদিকে শুক্রবার চিনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১৩। সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সারা বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থার কথা ঘোষণা করেছে ইতিমধ্যেই।
শুধু চিন নয়, রোজই নতুন নতুন দেশে খোঁজ মিলছে করোনাভাইরাসের। ১৬টি দেশে ৬০ জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার জার্মানি ও শ্রীলঙ্কায় প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর মিলেছে। আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা, সিঙ্গাপুর, নেপাল, তাইল্যান্ড, জাপান-সহ অন্য দেশে এই ভাইরাসের খোঁজ মিলেছিল আগেই।
ভাইরাস সংক্রমণ ভয়ানক আকার ধারণ করায় মঙ্গলবার থেকে দেশের সমস্ত স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রেল পরিষেবা। হুবেই থেকে আসা মানুষদের ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার ব্যবস্থা করেছে বেজিং ও সাংহাই। হুবেই, উহান-সহ দেশের ১৮টি শহরকে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে।
আমেরিকা ইতিমধ্যেই নাগরিকদের চিনে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চিনা নাগরিকদের জন্য আপাতত ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং ফিলিপিন্স।
সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই চিন সরকার নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ আপাতত স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়েছে। অভিবাসন দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত পারাপারের বিষয়টির দিকেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে নিজেদের দেশের নাগরিকদের বিমানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।
উহানের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ২০৬ জন জাপানিকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে সে দেশের সরকার। চিনে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইৎজারল্যান্ডের বিমান সংস্থা। মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকাও। এদিকে চিনে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্য খুব দ্রুত ৪৩০ সিটের জাম্বো বোয়িং পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।
ইতিমধ্যে প্রথম ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলল ভারতেও। কেরলে চিন-ফেরত এক পড়ুয়ার রক্ত পরীক্ষা করে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাঁকে।
উহান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন ওই ছাত্র। দেশে ফেরার পরেই জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা জানান, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়েছেন ওই ছাত্র। যার কারণ নোভেল করোনাভাইরাস। এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আইসোলেশন ওয়ার্ডে ছাত্রের চিকিৎসা করছেন অভিজ্ঞ ডাক্তাররা। তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল।