দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিজেপিকে জয়ী করলে শাহিনবাগের মতো হাজার হাজার ঘটনা বন্ধ করা যাবে, দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে একথা বললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যাঁরা নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনের বিরোধিতা করছেন তার বিরুদ্ধে সরব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রচারে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, “৮ ফেব্রুয়ারি যখন ভোট দেবেন তখন এমন জোরে (ভোটযন্ত্রের) বোতাম টিপুন যাতে বাবরপুরে বোতাম টিপলে তার ধাক্কা গিয়ে লাগে শাহিনবাগে।” দিল্লির বাবরপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের প্রচারে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, “বিজেপি প্রার্থীকে আপনি ভোট দিলে তা দিল্লি তো বটেই পুরো দেশকে সুরক্ষিত করবে এবং শাহিনবাগের মতো শতশত ঘটনা প্রতিহত করবে।”
শাহিনবাগ নিয়ে শুক্রবারও একই মন্তব্য করেছিলেন অমিত শাহ। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ‘জিত কি গুঞ্জ’ নামে একটি প্রচারসভায় তিনি বলেছিলেন, “৮ ফেব্রুয়ারি যখন ভোট দেবেন তখন এমন জোরে (ভোটযন্ত্রের) বোতাম টিপুন যাতে তার অভিঘাতে শাহিনবাগের বিরোধীরা উঠে যেতে বাধ্য হন।”
তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেন, “যাঁরা গান্ধীজিকে অবজ্ঞা করেন তাঁরাই শাহিনবাগের আন্দোলন থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছেন।” তিনি শাহিনবাগের আন্দোলনকে গান্ধীজির অহিংসা ও সত্যাগ্রহের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
Home Minister seeks votes to ‘get rid of Shaheen Bagh’.
Only those who despise Gandhiji would want to get rid of Shaheen Bagh. Shaheen Bagh represents the essence of Mahatma Gandhi.
Getting rid of Shaheen Bagh amounts to getting rid of Ahimsa and Satyagraha.
— P. Chidambaram (@PChidambaram_IN) January 26, 2020
তবে রবিবার আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসকে একযোগে বেঁধেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, “আপনারা কি ওঁদের ভোটব্যাঙ্ক? কেন রাহুল বাবা ও কেজরিওয়াল ওই টুকরে টুকরে গ্যাংকে রক্ষা করতে চাইছে যারা দেশকে ভাঙতে চায়? ওরা এসব করছে ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে।”
দিল্লিতে বিধানসভা ভোট ৮ ফেব্রুয়ারি এবং ভোটের ফল প্রকাশ হবে ১১ ফেব্রুয়ারি। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি চাইছে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতে, উল্টোদিকে বিজেপি চাইছে দু’দশক পরে দিল্লির মসনদ ফিরে পেতে। ২০১৫ সালে ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আম আদমি পার্টি। ২০১৪ সালে প্রবল মোদী ঝড়ের মধ্যেও দিল্লি দখল করতে পারেনি বিজেপি।
চব্বিশঘণ্টা কাটল না। তার মধ্যেই অমিত শাহর পাল্টা দিলেন দিল্লির ভোটে আম আদমি পার্টির ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর।
সোমবার টুইট করে বাংলার শাসকদলের মেন্টর লেখেন, “৮ তারিখ দিল্লির ভোটে বোতাম টিপুন ভালবেসে। যাতে আমাদের ভাতৃত্ব ও সম্প্রীতি আরও জোরদার হয়।”
8 फ़रवरी को दिल्ली में EVM का बटन तो प्यार से ही दबेगा। ज़ोर का झटका धीरे से लगना चाहिए ताकि आपसी भाईचारा और सौहार्द ख़तरे में ना पड़े।
Justice, Liberty, Equality & Fraternity 🇮🇳
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) January 27, 2020
গতকাল হুঙ্কার দিয়েছিলেন শাহ। বোঝাতে চেয়েছিলেন, দিল্লির ভোটে বিজেপি জিতলেই শাহিনবাগ-সহ দেশের বিভিন্ন অংশে যে বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শাহিনবাগের আব্দোলন শুরু করেছেন সংখ্যালঘু মহিলারা। দিন-রাত এক করে চলছে অবস্থান। দেখা গিয়েছে কোলে দুধের শিশুকে নিয়ে মায়েরাও হাজির হয়েছেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে।
প্রশান্ত কিশোরের এই টুইট রাজনৈতিক ভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, তিনি শুধু ভোট স্ট্র্যাটেজিস্ট নন। সেইসঙ্গে তিনি বিহারে বিজেপির জোট শরিক তথা শাসকদল জনতা দল ইউনাইটেডের সহ-সভাপতি। এমনিতেই এই ইস্যুতে দলের প্রধান নীতীশ কুমারের সঙ্গে অন্য নেতাদের একটা মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। প্রশান্ত কিশোরও প্রথম থেকে সিএএ, এনআরসির তীব্র বিরোধিতা করছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দিল্লির ভোটের ফলাফলের উপর প্রশান্ত কিশোরের ইমেজ নির্ভর করছে। তাঁদের মতে রাজধানীর বিধানসভায় যদি আপ ফের ক্ষমতায় ফিরতে পারে তাহলে একুশের ভোটের আগে বাংলায় তৃণমূলের কর্মীদেরও বিশ্বাস অর্জন করা যাবে। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতা দখল করলে তৃণমূল কর্মীদের আত্মবিশ্বাস ধাক্কা খাবে। সেই সঙ্গে বাংলায় গেরুয়া শিবির বলতে শুরু করবে, প্রশান্ত কিশোর দিল্লিতে ফেল করে বাংলায় এসেছেন। অনেকের মতে, অনেকের মতে, অমিত শাহ যে মেরুকরণের পরিবেশ তীব্র করতে চাইছেন তা তাঁর কথা ও কৌশলেই পরিষ্কার। পাল্টা পিকেও সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে মোকাবিলার চেষ্টা করেছেন। ‘ভালবাসা’ দিয়ে জিততে চাইছেন ভোট!