দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নতুন মোটর ভেহিকেলস আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে যখন গোটা দেশ জুড়ে হই হই পড়ে গিয়েছে তখন, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিলেন, বাংলায় তা লাগু হবে না।
কেন?
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব সরকারি অফিসারদের মতে, এটা কার্যকর করলে মানুষের উপর বোঝা চাপানো হয়ে যাবে”। তাঁর কথায়, অনেক গরিব লোক রয়েছে। তারা এতো টাকা জরিমানা দেবে কোথা থেকে? সব সময় জরিমানা করে সমস্যার সমাধান হয় না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন এ-ও অভিযোগ করেন, কেন্দ্র এক তরফা ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি।
পুরনো মোটর ভেহিকেলস আইন সংশোধন করে সংসদে পাশ করানোর পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা গোটা দেশে কার্যকর হওয়া শুরু হয়েছে। তার পর রাজ্যে রাজ্যে যেন জরিমানা আদায়ের প্রতিযোগিতা চলছে। ওড়িশার অটোচালককে সাড়ে ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হলে, উত্তরপ্রদেশের ট্রাক চালককে দিতে হচ্ছে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা। গত কাল রাজস্থানের এক ট্রাক মালিকের থেকে ওভারলোডিংয়ের জন্য ১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন স্পষ্ট বলেন, বাংলায় তা হবে না।
মোটর ভেহিকেলস আইন হল কেন্দ্রীয় আইন। প্রশ্ন হল, রাজ্য সরকার কি বলতে পারে তা একেবারেই মানব না?
অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় তা বলা যায় না। আইনের কিছু ধারা রাজ্য সরকারকে মানতেই হবে। তবে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য যে জরিমানার প্রস্তাব রয়েছে তা রাজ্য সরকার চাইলে কমাতে পারে। যেমন গুজরাত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা কমাবে। হেলমেট না পরে বাইক চালালে আইনে প্রস্তাবিত এক হাজার টাকার পরিবর্তে পাঁচশ টাকা জরিমানা ধার্য করবে। বহু ক্ষেত্রে জরিমানার হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে গুজরাত। তাতে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারই অস্বস্তিতে পড়েছে।
কিন্তু এর পরেও কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি বুধবার বলেন, “রাজ্য মানতে না চাইলে আমাদের কিছু করার নেই। বেশি টাকা জরিমানা ধার্য করে রাজস্ব আদায় বাড়ানো সরকারের উদ্দেশ্য নয়। সরকারের উদ্দেশ্য হল দুর্ঘটনা কমানো। প্রতি বছর দেড় লক্ষ মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। এত মানুষের মৃত্যুর দায় তো শুধু কেন্দ্র নেবে না। মানুষ তো আইনকে ভয় পাচ্ছেন। তাতে যদি তাঁরা সতর্ক হন, সেটাই উদ্দেশ্য।”
এ দিকে নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের অন্য আপত্তিও রয়েছে নতুন মোটর ভেহিকেলস আইন নিয়ে। তা হল, ফিটনেস সার্টিফিকেটের ব্যাপারে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থা ফিটনেস সার্টিফিকেট দেবে। কিন্তু এই প্রস্তাব নবান্ন সম্মত নয়। সেই সঙ্গে চড়া হারে জরিমানার বিষয়টি তো রয়েছেই।
তৃণমূলের এক নেতা বলেন, কেন্দ্রের আইন হলে কী হবে জরিমানা তো আদায় করবে বাংলার পুলিশ। মানুষ অত বোঝে না। মনে করবে তৃণমূল সরকার বেশি হারে জরিমানা আদায় করছে। এই নীতি দিদি মানবেন কেন?