দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, মাথা পিছু ৪ টাকা ৩১ পয়সা বরাদ্দে ডিম খাওয়ানো যায় না। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই নোটিস জারি করল স্কুল শিক্ষা দফতর। জানিয়ে দেওয়া হলো রাজ্যের সব স্কুলে মিড ডে মিলে ডিম-মাছ খাওয়ানো যাবে না। বরাদ্দ টাকার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব স্কুলকে এই গাইডলাইন মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুল শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় স্কুলে মিড ডে মিলের মেনু পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ধরণের কোনও নির্দেশিকা স্কুল শিক্ষা দফতর দেয়নি, কারণ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় খাদ্যাভ্যাস আলাদা আলাদা।
মিড ডে মিল-এর গাইডলাইন অনুযায়ী, রাজ্যের সব স্কুলে বরাদ্দ অনুসারে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাই সব স্কুলকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের মিড ডে মিল সংক্রান্ত গাইডলাইন মেনেই সব স্কুলে পড়ুয়াদের মিড ডে মিল দিতে হবে। এই নির্দেশিকার যাতে কোনও রকম খেলাপ না হয়, তা দেখার দায়িত্ব স্কুলগুলির।
এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বলেন, “এই যে সংবাদমাধ্যমে সব লিখে দিচ্ছে মিড ডে মিলে নাকি সাত দিনে সাত রকম পদ খাওয়ানো হবে? এগুলো কি ঠিক? আমি নিজেই জানি না আর ওরা লিখে দিচ্ছে?” মুখ্য সচিব মলয় দে-কে পাশে নিয়ে তিনি আরও বলেন, “মিড ডে মিলে আমরা ছাত্রছাত্রী পিছু ৪ টাকা ৩১ পয়সা পাই। তাই দিয়ে ডিম খাওয়াব কোথা থেকে? একটা ডিমের দাম কত? ৬ টাকা? কত যেন?” তাঁর কথায়, “৪ টাকা ৩১ পয়সায় ভাল করে ভাত-ডালই হয় না তো ডিম! তাও আমরা চালটা বিনামূল্যে দিই বলে! আমি বলছি, মিড ডে মিলে ভাত-ডাল আরেকটা তরকারি পেট ভরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুন”।
আরও পড়ুন মমতার সাফ কথা, মিড ডে মিলে ডিম দেব কোথা থেকে?
মমতার এই বক্তব্যের পরেই সোমবার বিকেলে অনেক জেলার জেলাশাসক জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী যখন বারণ করেছেন, তখন মিড ডে মিলে আর ডিম দেওয়া হবে না।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিল নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক শুরু হয়েছিল হুগলির বাণী মন্দির প্রাথমিক স্কুল থেকে। স্থানীয় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় একদিন ওই স্কুলে গিয়ে দেখেন ছাত্রছাত্রীরা শুধু নুন দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। তার পরই বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হই হই পড়ে যায়।
দু’দিন বাদে দেখা যায় হুগলির জেলা শাসক রত্নাকর রাও একটি প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে ডিম দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। তার পর শনিবার নোটিফিকেশন জারি করে রত্নাকর জানিয়ে দেন, হুগলি জেলায় মিড ডে মিলে মেনু বদলে যাচ্ছে। তাতে গোটা গোটা শব্দে লেখা ছিল সোম থেকে শনিবারের মেনু। এও বলা হয়েছিল, বুধবার মিড ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের পাতে পড়বে মুরগির মাংস, বৃহস্পতিবার সেদ্ধ ডিম আর শনিবার ঝোলের ডিম।
ওই দিনই নোটিফিকেশন জারি করেছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলাও। জেলা শাসক পার্থ ঘোষের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতেও ৬ দিনের মেনু স্পষ্ট জানানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে পরিষ্কার করে লেখা ছিল, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার মিড ডে মিলে ডিম বা মাছ খাওয়ানো হবে ছাত্রছাত্রীদের।
কিন্তু তারপরে এ দিন স্কুল শিক্ষা দফতর জানিয়ে দিল, এই ধরণের কোনও নির্দেশিকায় নাকি জারি করা হয়নি। আগের নির্দেশিকা অনুসারেই খাওয়াতে হবে মিড ডে মিল।
সিএম যখন বলেছেন, তখন মিড ডে মিলে ডিম বন্ধ, বললেন ডিএম-রা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিয়েছেন, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিলে ডাল-ভাত-তরকারি দিলেই চলবে। ডিম দিতে হবে না। কারণ, মাথাপিছু ৪ টাকা ৩১ পয়সায় বরাদ্দে ডিম খাওয়ানো যায় না।
ফলে মিড ডে মিলের মেনু ঠিক করে ফেলেও পিছিয়ে এলেন অনেক জেলা শাসক। সোমবার বিকেলে তাঁরা জানিয়ে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী যখন বারণ করেছেন, তখন মিড ডে মিলে আর ডিম দেওয়া হবে না।
হুগলির বাণী মন্দির প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, ওই স্কুলে মিড ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের স্রেফ নুন ভাত দেওয়া হচ্ছে। তার পর অতি উৎসাহী হয়ে হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক নোটিশ জারি করে বলেছিলেন, তাঁদের জেলায় সব স্কুলের জন্য মিড ডে মিলের মেনু ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহে দু’দিন ডিম বা মাছ খাওয়ানোর কথা বলেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পার্থ ঘোষ।
তবে হুগলির জেলা শাসক রত্নাকর রাও আরও বেশি নজর কেড়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়া হবে মিড ডে মিলে। এক দিন দেওয়া হবে মুরগির মাংস।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী কার্যত তাঁদের বিপাকেই ফেলেছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে বলেছেন, মিড ডে মিলের মেনু পাল্টে ফেলা হচ্ছে, তিনি নিজেই জানেন না। সংবাদমাধ্যমে নাকি মনগড়া কথা লেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পার্থ ঘোষ এ দিন বিকেলে বলেন, “আমরা যে সপ্তাহে দু দিন ডিম ভাত দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলাম সেটা ছিল সরকারি সিদ্ধান্ত। ২০১৮ থেকে এই নিয়ম চলে আসছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন আমি শুনিনি। সরকারি ভাবে যদি নতুন নির্দেশিকা জারি হয়, তবে তা মেনেই চলব”।
অন্যদিকে হুগলির জেলা শাসক রত্নাকর রাও বলেন, মিড ডে মিলের গাইডলাইনে বলা রয়েছে যে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। কত গ্রাম প্রোটিন খাবার দিতে হবে তাও বলা হয়েছে। ডিম যদি না খাওয়ানো যায় তা হলে সয়াবিনের তরকারি খাওয়াতে হবে। কারণ, সয়াবিনে প্রোটিন রয়েছে। ছবি সংগৃহীত।