১৯৪০ সাল। শহর কলকাতায় তখন প্রধান গণ পরিবহণ বলতে ট্রাম। গোটা তিলোত্তমা জুড়ে পাতা ট্রাম লাইন। প্রায় সর্বক্ষণই ঘণ্টার আওয়াজ শোনা যেত কান পাতলেই। শনিবার ছিল সেই কলকাতা ট্রামেরই ১৫১তম জন্মদিন। আর এই বিশেষ দিনে মহানগরে ফিরে এল ১৯৪৮ সালের ট্রাম। কাঠের তৈরি সেই ট্রাম ফের রাস্তায় চলতে দেখে নস্টালজিক হয়ে পড়লেন শহরের প্রবীণরা। কলকাতায় ট্রামের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এদিন ছোট্ট এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে। গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপো থেকে ধর্মতলা ট্রাম ডিপো পর্যন্ত চালানো হয় ১৯৪৮ সালের ট্রামটিকে।
জানা গেল, গোটা কলকাতা জুড়ে যে ট্রামলাইন পাতা তা বানানো হয়েছিল পুরনো দিনের কাঠের ট্রামের কথা ভেবেই। ফলে, বর্তমান যুগের তৈরি ট্রামগুলোতে উঠলে সচরাচর কানে যে আওয়াজ আসে কাঠের ট্রামে উঠলে তার একফোঁটাও কানে আসবে না। এদিন ১৯৪৮ সালের এই ট্রামটির পাশাপাশি রাস্তায় নামানো হয়েছিল ১৯৮৬ সালের আরও একটি ট্রামকে যার নাম মুঘল এক্সপ্রেস। উদ্যোক্তারা জানালেন, ট্রামটি তৈরি করা হয়েছিল অনেকটা মুঘল সাম্রাজ্যের প্রাসাদগুলির কথা মাথায় রেখে।
যাদবপুরের বাসিন্দা চিএশিল্পী মোহিনী বিশ্বাস জানালেন, ‘ ১৯৯৭ সালে গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় এসেছিলেন । তখন প্রতি রবিার বালিগঞ্জ থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত ট্রামে চড়তেন। এখনও সুযোগ পেলেই ট্রামে ঘুরে বেড়ান শহর কলকাতায় ।
ট্রামের ১৫১তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে গড়িয়াহাট ডিপোতে কেক কাটা হয় শনিবার সকালে। উপস্থিত ছিলেন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মহাদের শী, পরিচালক গৌতম ঘোষ, পরিচালক অনীক দত্ত, সঙ্গীতশিল্পী সুরজিৎ চ্যাটার্জি, নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং আরও অনেকে। মহাদেববাবু জানান, ‘লোকে বলে ট্রামের জন্য কলকাতার রাস্তায় যানজট বাড়ছে। আসলে ঘটনাটা ঠিক উল্টো। কলকাতায় এখন ২৫০টা ট্রাম রয়েছে। তার মধ্যে চলে বড়জোর ১২টা।
অন্যদিকে, গাড়ি চলে ২২ লক্ষ। ট্রাম নিজের লাইন দিয়ে নিজের মত চলে। এটা যানজটের কারণই নয়’। উপস্থিত অতিথিরা মজে গেলেন নস্টালজিয়ায়। শিল্পী সুরজিৎ চ্যাটার্জি জানান, ‘আমি ট্রাম চড়েছি ২০ পয়সা, ২৫ পয়সায়। সেই ভাড়া এখন গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ টাকাতে। অন্যান্য পরিবহণের তুলনায় সেটা যথেষ্টই কম।” রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, ‘১৫১ বছর আগে কলকাতায় যে ট্রামের যাত্রা শুরু হয়েছিল আজও তা সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। বাঙালির কাছে এই দিনটা অত্যন্ত গর্বের’।