দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাগৃহ থেকে ভার্চুয়ালি সারা রাজ্যের একাধিক দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন উত্তর ২৪পরগনা,হুগলি, পুরুলিয়া সহ ১২টি জেলার প্রায় ২০০টি পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধন শাঁখ বাজিয়েই করেন তিনি।মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে যখন পুজো উদ্বোন করেন ভার্চুয়ালি, তখন নবান্ন সভাগৃহের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বনগাঁ শিমুলতলা আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাব সহ ১১০টি পুজো কমিটির ছবি।
বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘর থেকে বিভিন্ন জেলায় ২০০টিরও বেশি পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বুধবার থেকে আমি ভার্চুয়াল উদ্বোধন শুরু করেছি। এই দু’দিনে বাংলার সমস্ত জেলায় পুজোর উদ্বোধন হয়েছে। দু’দিন মিলিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেল। এটা ঐতিহাসিক ব্যাপার।’ বিভিন্ন জেলার ক্লাবের সদস্যরা ঘণ্টা বাজান, ঢাক বাজান, শঙ্খধ্বনি দেন। মুখ্যমন্ত্রীও নবান্ন সভাঘর থেকে শাঁখ ও ঘণ্টা বাজান। প্রতিমার কাছে প্রার্থনা করে বলেন, ‘মা করোনা, অশান্তি, কুৎসা, অপপ্রচার ও দাঙ্গা থেকে মুক্তি দাও।’
এদিনই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছিলাম, আছি, থাকব। আপনারাই এই সরকার নির্বাচিত করেছেন। এটা জনগণের সরকার। আপনারা যে সমস্ত কাজ নবান্নে পাঠান, তা আমরা করে দিই। রাজ্যে প্রতিবছর পুজো হবে। এবার কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো করুন। এই উৎসবে সব ধর্মের মানুষ শামিল হোন। আগেও বলেছি, বাংলায় আমরা পুজো বন্ধ করব না।’
এদিনই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর শিমুলতলা আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন এর সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বনগাঁ খুব ঘিঞ্জি জায়গা। ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত। প্ল্যান করে বনগাঁ শহরটাকে সাজাতে হবে।’
বনগাঁ পুরসভার পুর প্রশাসক শঙ্কর আঢ্য জানান মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো এবছর বিধি মেনে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে, সমস্ত রকম ব্যাবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন, বনগাঁবাসী যাতে পুজোর দিন গুলিতে আনন্দে কাটাতে পারেন তার জন্য পুরসভা সর্বদা তাঁদের পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত ।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন,ডানকুনি থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া–সহ কয়েকটি জেলায় শিল্প করিডর হবে। ৫ জন হকারের হাতে এদিন ২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘গোটা বাংলায় প্রায় ১ লক্ষ হকার রয়েছেন। সকলকেই এই ভাতা দেওয়া হবে।’ উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রধান প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া জেলার পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগে জঙ্গলমহলে পুজো হত না। এখন কত সুন্দর পুজো হয়। ঝাড়গ্রামে কনকদুর্গা মন্দিরের জন্য ২ কোটি টাকা দিয়ে এসেছি। পুজোয় ধুতি–শাড়িও পাঠাব ওদের। বাংলায় সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে উৎসব করতে হবে। এই করোনার সময়ে আমরা বেশ কয়েকজনকে হারিয়েছি। করোনা কিন্তু এখনও আছে, তাই সতর্ক থাকতে হবে। এমন কিছু করবেন না, যাতে আপনার জন্য অন্য কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এনআরসি এবং এনপিআর–এর সময়ে আমরা কাঁসর–ঘণ্টা বাজিয়ে ছিলাম। উৎসবে এবার আপনাদের সঙ্গেও আমি শামিল হলাম। ১৭ অক্টোবর থেকে দেবীপক্ষ শুরু হচ্ছে। মঙ্গলঘট নিয়ে আমরা প্রার্থনা করব, যাতে করোনা ও দাঙ্গাকে আমরা পরাস্ত করতে পারি। ভুল–ত্রুটি হলে মা আমাদের মার্জনা করে দিও। কেউ অন্যায় করলে তাদের ক্ষমা করে দিও।’
বীরভূম জেলায় উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রামপুরহাট ছোটবেলায় যেতাম। এখন আর যাওয়া হয় না।’ এদিনও তিনি বারবার সতর্ক করে দেন, ‘জ্বর হলে ডাক্তার দেখাবেন।
এমন কাজ করবেন না যাতে করোনায় আক্রান্ত হতে হয়। সচেতনতা প্রসারের ব্যাপারে ক্লাবগুলোকে বিশেষ দায়িত্ব নিতে হবে। পুলিশ এ ব্যাপারে সাহায্য করবে। করোনা পরিস্থিতিতে এই সময় কেউ যেন না ভাবেন, তাঁদের পাশে আমরা নেই। ঝাড়গ্রামের মণ্ডপগুলো খুব সুন্দর হয়।’
মুখ্যমন্ত্রী জেলার কর্মকর্তাদের বলেন, ‘টিভিতে সব দেখে নেব।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলাকার বিধায়ক, সাংসদরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন তিনি। বলেন, ‘মানুষের কথা ভেবেই আমি ওখানে যাইনি। দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমা দর্শন করবেন। সতর্ক থাকতে হবে, এই রোগ যেন না ছড়ায়।’
নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী এদিন যান আদি বালিগঞ্জ, ২১–এর পল্লী, বোসপুকুর ও তালবাগান পুজো মণ্ডপে। প্রতিমার উদ্বোধন করেন। আদি বালিগঞ্জে আঁকার জন্য একটি ক্যানভাস রাখা হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিমার মুখ আঁকেন।