করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতিতে মানুষকে আর্থিক সুরাহা দেওয়ার পাশাপাশি মূলধন খাতে যোগান অব্যাহত রাখতে মার্চের শেষে এক প্রস্ত ঘোষণা করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যে হারে তারা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা দেয়, সেই রেপো রেট এক ধাক্কায় ঐতিহাসিক ভাবে কমিয়ে দিয়েছিল। শুক্রবার আর এক প্রস্ত ঘোষণা করল দেশের এই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। যার মাধ্যমে বাজারে আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণের যোগানের চেষ্টা করা হল। তা ছাড়া ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে আরও বেশি ঋণ দেয় সে জন্য রিজার্ভ রেপো রেটও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৩.৭৫ শতাংশ করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলি এর ফলে উপকৃত হবে। একে তাদের জন্য প্যাকেজ বলে বিবেচনা করলে অবশ্য ভুল হবে। বরং বলা যেতে পারে, তাদের ব্যবসার খাতে অর্থের যোগানের যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
প্রসঙ্গত, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক গুলি থেকে টাকা নেয় তাকে রিজার্ভ রেপো রেট বলা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই তা কমে গেলে ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কে টাকা না রেখে তা বাজারে ঋণ দেওয়ার কাছে ব্যবহার করবে। বাজারে সেই অর্থের যোগান বাড়লে ঘরোয়া অর্থনীতির চাকা এই সংকটের পরিস্থিতিতেও ঘোরানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যদিও সেই চাকা কী গতিতে ঘুরবে তা নিয়ে সংশয়ের মেঘ রয়েছে। বিশ্ব অর্থ ভাণ্ডার জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার টেনেটুনে হতে পারে ১.৯ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস শুক্রবার বলেন, এই নেতিবাচক পরিস্থিতি সত্ত্বেও আশার কথা হল, জি২০ গোষ্ঠী ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে হাতে গোণা যে কটি দেশ বৃদ্ধির পথে থাকার আশা রয়েছে তার মধ্যে ভারত অন্যতম।
শক্তিকান্ত দাস এদিন আরও বলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই যে সব পদক্ষেপ করেছে তাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল বাজারে ঢালতে শুরু করেছে। তাতে নগদের যোগান বেড়েছে। তা আরও বাড়ানোর জন্যই রিভার্স রেপো রেট কমানো হয়েছে।
তাঁর কথায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ঘরোয়া অর্থনীতিতে প্রতি মুহূর্তেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। রিজার্ভ সে দিকে সর্বদাই নজর রেখে চলেছে। পরিস্থিতি যেমন এগোবে সেই অনুযায়ী আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজারে ঋণের যোগান বাড়ানোর ব্যাপারে এর পরই এদিন উল্লেখযোগ্য ঘোষণাটি করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। তিনি জানান, জাতীয় কৃষি ব্যাঙ্ক, নাবার্ড, সিডবি এবং জাতীয় হাউজিং ব্যাঙ্ককে রেপো অপারেশনসের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২৫ হাজার কোটি টাকা পাবে নাবার্ড, ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে সিডবিকে এবং বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্ককে।
পাশাপাশি এলসিআর তথা লিক্যুইডিটি কভারেজ রেশিও আরও শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তা ১০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ শতাংশ করা হয়েছে। এদিন শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন, আগামী বছর এপ্রিলের মধ্যে তা ধাপে ধাপে ফের ১০০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে।