দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সরকারিভাবে ঘোষণা আগে হয়নি। ভারতের মাটিতে পা দিয়ে সেই প্রতিরক্ষা চুক্তিরই ঘোষণা করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ, মঙ্গলবার আমেরিকার সঙ্গে ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
নৌবাহিনীর জন্য ২৪টি মাল্টি-রোল এমএইচ-৬০ রোমিও অ্যান্টি-সাবমেরিন হেলিকপ্টার ও অ্যাপাচে কপ্টার আমেরিকার থেকে কিনবে ভারত। পাশাপাশি আধুনিক সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারেও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প।
সূত্রের খবর, আমেরিকার কাছ থেকে ভারত যে ২৪টি এমএইচ-৬০ হেলিকপ্টার কিনছে, সেগুলি ব্যবহার করবে ভারতীয় নৌবাহিনী। জলসীমায় নজরদারি, ডুবোজাহাজের উপস্থিতি, তল্লাশি ও উদ্ধার কাজে অত্যন্ত দক্ষ এই কপ্টারগুলি। মোতেরার সর্দার বল্লভভাই পটেল স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়েই দুই দেশের বাণিজ্যিক ও সামরিক চুক্তিকে আগে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া হয় ভারত ও আমেরিকার মধ্যে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়াতে নিরন্তর চেষ্টা চলে দু’দেশের মধ্যে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অস্ত্র ভারতকে দিতে আগ্রহী আমেরিকা।
এম এইচ ৬০ রোমিও, এই হেলিকপ্টার বানায় মার্কিন সংস্থা লখিড মার্টিন। এম এইচ ৬০ রোমিও সংক্ষেপে রোমিও হেলিকপ্টারের গুণ অনেক। নির্ভুল নিশানায় এটি শত্রু সাবমেরিনকে ধ্বংস করতে পারে নিমেষেই। সমুদ্রে নজরদারি চালাতেও এর জুরি মেলা ভার। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যায় বিনাশকারী বা ডেস্ট্রয়ার হিসেবেও, পাশাপাশি ক্রুজার এবং বিমানবাহী রণতরী থেকেও এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারবে ভারতীয় নৌসেনা। জাহাজ তো দূর, এই হেলিকপ্টার থেকে টর্পেডো দেগে সমুদ্রের নীচে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা ডুবোজাহাজও গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। ডুবোজাহাজ যতই গভীরে থাক, ‘মাল্টি-রোল’ হেলিকপ্টার তার গন্ধ পাবেই।
ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী এই হেলিকপ্টার থেকে প্রয়োগ করা যাবে ১০ রকম হেলফায়ার মিসাইল, ৩৮ রকমের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রবাহী রকেট, এবং ৩০টি এমকে ৫৪ টর্পেডো। ভারত মহাসাগরে চিনের বাড়তে থাকা প্রতিপত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই চপার ভারতীয় নৌসেনার অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, মাল্টি-রোল হেলিকপ্টারের অর্থই হল যে, একই সঙ্গে সমুদ্রে নজরদারি এবং হামলা চালাবে তারা।
কিন্তু তার আসল কার্যকারিতা হল, সে ডুবোজাহাজ-শিকারি। জলের উপরে শত্রুপক্ষের জাহাজ বা বোটকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। অন্য কপ্টারের মোকাবিলায় মেশিনগানও থাকে।
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে বোঝাপড়া অনেক বেড়েছে। মার্কিন ডিফেন্স সিকিউরিটি কর্পোরেশন এজেন্সি (DSCA) বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘সামরিক ক্ষেত্রে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এই নতুন চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তুলবে। শুধু সামরিক ক্ষেত্রই নয়, রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা, অর্থনীতি, এবং ব্যবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়েও দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হবে।’’
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’দিনের ভারত সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগেই এই অস্ত্র-চুক্তি সেরে ফেলাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে একটি সম্মেলন চলাকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে এই হেলিকপ্টার কেনার ব্যাপারে প্রথম কথা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার পর থেকে একটু একটু করে গতি পেতে থাকে এই অস্ত্র-চুক্তি। ভারত মহাসাগরে চিনা প্রতিপত্তির বাড়বাড়ন্ত রুখতে জরুরি ভিত্তিতে রোমিও হেলিকপ্টার কেনা প্রয়োজন বলে ভারতের তরফে চিঠিও যায় আমেরিকায়।
মার্কিন নৌসেনার কাছেও এম এইচ ৬০ রোমিও চপার রয়েছে। অথচ ভারতের কাছে এমন কপ্টার বলতে এখন ব্রিটেনের তৈরি মাত্র এক স্কোয়াড্রন সি-কিং চপার। কিন্তু তা কেনা হয়েছিল প্রায় ৪০ বছর আগে। তার পরে তার আর আধুনিকীকরণ হয়নি।
নজরদারি ও যুদ্ধ করার জন্য সি-হ্যারিয়ার বিমান আগেই অবসর নিয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে শুধু পিএইট-আই বিমান। ভারত মহাসাগরে যেভাবে প্রতিপত্তি ফলাচ্ছে চিন তাতে, ভারতের হাতে এই হেলিকপ্টার থাকলে ভারত মহাসাগর এলাকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলেও ভারতের প্রতিপত্তি অনেকটাই বাড়বে।