দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ শুক্রবার সন্ধ্যার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লিখেছেন, ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা বাংলার শ্রমিকরা ঘরে ফিরতে চাইছেন। তাঁদের সাহায্য করুক রাজ্য সরকার। নাহলে তাঁদের প্রতি ভীষণ রকম অবিচার করা হবে।
তারপরই টুইটারে তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেছেন, “হয় এই মিথ্যে অভিযোগ প্রমাণ করুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নয় মানুষের সামনে ক্ষমা চান।”
অভিষেক আরও লিখেছেন, “একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সংকটের সময়ে তাঁর দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কয়েক সপ্তাহের নীরবতা ভেঙে এখন তিনি বুলি আওড়াচ্ছেন। গুচ্ছ মিথ্যে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। অবাক করার মতো ব্যাপার হল, যাঁদের স্রেফ ভাগ্যের হাতে তাঁর সরকার ছেড়ে দিয়েছে, এখন তাঁদের হয়ে কথা বলছেন অমিত শাহ”।
A HM failing to discharge his duties during this crisis speaks after weeks of silence, only to mislead people with bundle of lies! Ironically he’s talking about the very ppl who’ve been literally left to fate by his own Govt. Mr @AmitShah, prove your fake allegations or apologise https://t.co/HeWYWFafZ5
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) May 9, 2020
গতকাল রাতেই জানা গিয়েছিল, আগামী ৯, ১০ এবং ১১ মে আরও কিছু শ্রমিককে ফেরাতে নবান্ন আটটি ট্রেনের ব্যবস্থা করছে। ওই সব স্পেশাল ট্রেনের একটি সূচি ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। নবান্নের ওই খসড়া থেকে জানা গিয়েছে, আটটি ট্রেন ছাড়বে যথাক্রমে চণ্ডীগড়, জলন্ধর, বেঙ্গালুরু, ভেলোর ও হায়দরাবাদ স্টেশন থেকে। তা ছাড়া এর আগে আজমেঢ় ও কেরল থেকে দুটি ট্রেনে ইতিমধ্যে আড়াই হাজার শ্রমিককে ফিরিয়ে বাংলার সরকার।
কিন্তু তা যেমন ঠিক, তেমনই এও ঠিক যে- গত প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করছিলেন, বাংলার শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যাপারে নবান্ন কোনও গা করছে না। অধীরবাবু এও বলেন, রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল তাঁকে জানিয়েছেন বাংলা ট্রেন চাওয়ার ব্যাপারে কোনও উৎসাহ দেখাচ্ছে না। তা ছাড়া ওড়িশা, কর্নাটক ও পাঞ্জাবের নোডাল অফিসারদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরা তাঁকে জানিয়েছেন যে বাংলার নোডাল অফিসার কোনও রেসপন্স করছেন না। এর পর অধীরবাবু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে কয়েক দফায় ফোন করেন। এমনকি এও দাবি করেন, যে খোদ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলার শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানোর ব্যাপারে সরকারি ভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন।
বিপরীতে নবান্ন কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা এখনও পষ্টাপষ্টি বলেনি। স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেছিলেন, পর্যায়ক্রমে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক, ছাত্রছাত্রী, পর্যটক, তীর্থযাত্রীদের ফেরানোর কাজ চলবে। কিন্তু কবে কোথা থেকে কোন স্টেশনে ট্রেন আসবে তা বলা হয়নি।
তবে বাংলার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের তরফে চাপ তৈরি যে হচ্ছিল তাও বোঝা যাচ্ছিল। এর পর আটটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে সরকার। তাও অবশ্য সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে তৃণমূলের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করে দেওয়া হয়। হ্যাশট্যাগ দিয়ে বলা হয়, দিদি আছেন চিন্তা নেই। প্রায় একই সময়ে আবার অমিত শাহর চিঠি এসে পৌঁছয় নবান্নে।
বিরোধীদের এখনও বক্তব্য, যত সংখ্যায় শ্রমিক বাইরে আটকে রয়েছেন সেই তুলনায় আট-দশটি ট্রেন নগণ্য। গত কয়েকদিন ধরে ঘাপটি মেরে বসে ছিল নবান্ন। কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। মানুষের চাপ তৈরি হতেই নড়েচড়ে বসেছে।
কিন্তু সরকারি ভাবে না বললেও নবান্নের কর্তারা সরকারের সীমাবদ্ধতার কথা জানাচ্ছেন। তাও একেবারে ফেলনা নয়। তাঁদের কথায়, এক সঙ্গে প্রচুর শ্রমিককে ফেরানো সম্ভব নয়। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে গেলে যে পরিকাঠামো প্রয়োজন তা নেই। তার জন্য যে খরচের বহর এই সংকটের পরিস্থিতিতে সেই অর্থের যোগানও নেই। বড় কথা হল, শ্রমিকদের স্ক্রিনিং করে, প্রয়োজনে পরীক্ষা করে বাড়ি ফেরাতে হবে। কারণ, বহু শ্রমিক রয়েছেন যাঁরা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া,ঝাড়গ্রাম, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মতো গ্রিন জোনের বাসিন্দা। সেখানে এখনও কোনও সংক্রমণ ছড়ায়নি।
খেয়াল রাখতে হবে যে এঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ না ছড়ায়। শুধু তা নয়, নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বহু শ্রমিক মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত ওই দুই জেলায় সংক্রামিতের সংখ্যা হাতেগোণা। বাইরে থেকে এসে কেউ সংক্রামণ ছড়ালে কি সেখানকার মানুষের জন্য ভাল হবে। যে শ্রমিকরা ফিরবেন তাঁদের কারও থেকে তাঁদের পরিবার বা পরিজনের কেউ আক্রান্ত হলে সেটাও কি ভাল হবে! মানুষের উচিত এটাও বিবেচনা করা।