হিন্দু বোনের বিয়ের পাহারায় মুসলিম ভাইয়েরা,হিংসার মাঝেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চিত্র দিল্লিতে

0
1041

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ২৩ বছরের সাবিত্রী প্রসাদের। কিন্তু তার আগেই উত্তর-পূর্ব দিল্লির চাঁদবাগে শুরু হয় সংঘর্ষ। নাগরিকত্ব আইনের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ফলে বিয়ে হয়নি সেদিন। কিন্তু দু’দিন পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন সাবিত্রী। মুসলিম অধ্যুষিত চাঁদবাগে হিন্দু মেয়ের বিয়েতে একযোগ সাহায্য করলেন প্রতিবেশীরা। বাইরে পাহারা দিলেন মুসলিম ভাইয়েরা। ভিতরে বিয়ে করলেন সাবিত্রী। হিংসার মাঝেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন নজিরও দেখল দিল্লি।

জানা গিয়েছে, সোমবার মেহেন্দি অনুষ্ঠান ছিল সাবিত্রীর। কিন্তু তার আগেই দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে শুরু হয় হিংসা। সংবাদমাধ্যমের সামনে সাবিত্রী জানিয়েছেন, তিনি ভেবেছিলেন বিয়ের দিন হয়তো পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। তাই মেহেন্দি পরেন তিনি। কিন্তু হিংসা থামার বদলে বেড়ে যায়। ফলে মাধ্য হয়েই মঙ্গলবার বিয়ে বাতিল করতে হয়। বরপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয় এই পরিস্থিতিতে সেখানে না যেতে। বিয়ে বাতিল হওয়ায় মন খারাপ হয়ে যায় গোটা পরিবারের।

মুসলিম অধ্যুষিত চাঁদবাগে কয়েক ঘর হিন্দু থাকেন। কিন্তু কোনও দিন তাঁদের মধ্যে অশান্তি হয়নি বলেই জানিয়েছেন সাবিত্রীর বাবা ভোরে প্রসাদ। তিনি বলেছেন, “আমরা বাড়ির ছাদ থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখছিলাম। চারদিকে বোমার শব্দ, দোকান-গাড়ি জ্বলছে। এগুলো কে করছে? কই এতদিন তো এখানে কিছু হয়নি। আমরা হিন্দু-মুসলমানরা একসঙ্গে বাস করি এখানে। আমরা শান্তি চাই।”

ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন সাবিত্রীর প্রতিবেশীরা। সামিনা বেগম জানিয়েছেন, “মেহেন্দি হওয়ার পর যদি বিয়ে না হয়, তখন মেয়ের মনের কী অবস্থা হয় তা আমরা জানি। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল।” এই পরিস্থিতির মধ্যেই এগিয়ে আসেন সবাই। বৃহস্পতিবার ছোট করে বিয়ের আসর বসে। পুরো দায়িত্ব নিয়ে নেন মুসলিমরা। বরকে নিয়ে আসা থেকে বিয়ের পরে মেয়েকে বিদায় জানানো পর্যন্ত পুরোটা তাঁদের দায়িত্বেই হয়। দেখা যায়, ভিতরে যখন পাত্রের সঙ্গে সাত পাকে ঘুরছেন সাবিত্রী, বাইরে তখন বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন আমির, উসমানরা।


বিয়ে মিটে যাওয়ার পরে আমির সংবাদমাধ্যমের সামনে জানান, “ছোটবেলা থেকে আমরা একে অন্যের অনুষ্ঠানে সামিল হই। এই হিংসা কারা করছে জানি না। এতে ধর্মের রঙ লাগানো হচ্ছে। কিন্তু যারা হিংসা করছে তারা এখানকার নয়। তারা আমাদের কেউ নয়।” আর মেয়েকে বিদায় জানানোর পরে ভোরে প্রসাদ বলেন, “মেয়ের বিয়েতে আমার কোনও আত্মীয়রা আসতে পারেননি। তাতে কী হয়েছে। আমার প্রতিবেশীরা তো আমার আত্মীয়। তাঁরা তো ছিলেন। তাঁদের আশীর্বাদ পেল আমার মেয়েটা।”

Previous articleভারতে ভয়াবহ আকার নিতে পারে করোনভাইরাস, আশঙ্কা আমেরিকার,সংক্রমণ ঠেকাতে পেট্রাপোল সীমান্ত কতটা সুরক্ষিত?উঠছে প্রশ্ন!
Next articleভুবনেশ্বরের বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘বঞ্চনার কথা বলেছি’‘দিল্লিতে শান্তি ফেরানোর আর্জি জনিয়েছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here