দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হাবড়ায় বৃদ্ধ দম্পতি খুনের ঘটনায় অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে মৃত দম্পতির মেয়ে নিবেদিতা সাধুখাঁ। পুলিশ সূত্রে খবর, মা-বাবার কাছে টাকা চেয়ে সেটা না পাওয়াতেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল মেয়ে-জামাই। গোটা ঘটনার মূলচক্রী ছিল দম্পতির মেয়ে নিবেদিতা। আজ শনিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজই তাকে বারাসাত আদালতে তোলা হয়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাবড়ার টুনিঘাটা এলাকার লন্ডন পাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন এক বৃদ্ধ দম্পতি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃতেরা হলেন প্রাক্তন সেনাকর্মী রামকৃষ্ণ মণ্ডল (৫৮) এবং তাঁর স্ত্রী লীলারানি মণ্ডল (৫২)। গভীর রাতে বাড়ির সামনেই গুলি করে খুন করা স্বামী-স্ত্রীকে। এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মৃত দম্পতির জামাই বান্টি সাধুখাঁ এবং তার গাড়িচালক বন্ধু অজয় দাসকে গ্রেফতার করেছিল হাবড়া থানার পুলিশ। অজয়ের বাড়িতে তার খাটের তলা থেকে একটি বন্দুকও উদ্ধার করা হয়।
প্রথমে এই জোড়া খুনের তদন্তে নেমে পরিবারের লোকেদের অভিযোগ অনুসারে পুলিশ কাশিপুর কলতলা এলাকার বাসিন্দা এক যুবককে গ্রেফতার করেন। ধৃত যুবকের নাম তন্ময় বর। আদালতে তোলা হলে অভিযুক্তের ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু পুলিশি জেরায় খুনের ঘটনার কথা একবারের জন্যও স্বীকার করেননি তন্ময়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ক্রমশ বুঝতে পারে তন্ময় নিরপরাধ। এরপরেই পুলিশের নজর ঘুরে যায় পরিবারের অন্যদের দিকে।
ওই যুবককে গ্রেফতার করা হলেও মণ্ডল পরিবারের অন্যান্যদের প্রতি কড়া নজর ছিল পুলিশের। শেষমেশ তাতেই এসেছিল সাফল্য। ঘটনার আট দিন পর খুনের অভিযোগে মৃত দম্পতির জামাই ও তার এক বন্ধুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
উল্লেখ্য, পুলিশ সূত্রে সেই সময় জানা গিয়েছিল যে, পেশায় গাড়িচালক অজয়ের সঙ্গে প্রায় বছর তিনেক ধরে পরিচয় ছিল বান্টির। হালফিলে তারা একসঙ্গে ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করত। তদন্তকারী অফিসারেরা খোঁজখবর চালিয়ে জানতে পারেন বাজারে কয়েক লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল বান্টির। সেই টাকা শোধ করার জন্য শ্বশুর- শাশুড়ির উপর জমি বিক্রির চাপ সৃষ্টি করছিল সে। জমি বিক্রি করে বা অন্যভাবে জামাইকে টাকা দিতে রাজি না হওয়াতেই প্রৌঢ় শ্বশুর শাশুড়িকে খুন করার ছক কষে সে। এই কাজে বন্ধু অজয়কে সহযোগী হিসেবে নেয় সে। কাজ হাসিল হলে অজয়কে মোটা টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল বান্টি।
অজয় এবং বান্টিকে গ্রেফতারের পর তদন্তের আরও গভীরে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে আদতে গোটা পরিকল্পনাই করেছে নিবেদিতা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অজয় দাসের ফোন থেকে ৪৭ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ডিং পাওয়া গিয়েছে। সেখানেই শোনা গিয়েছে মা-বাবাকে খুনের পরিকল্পনা করছে নিবেদিতা। এই অডিও রেকর্ডিং-ও খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। তার পরই গ্রেফতার করা হয় নিবেদিতাকে।