হাতি মৃত্যু ঠাণ্ডা মাথায় খুন, বললেন রতন টাটা

0
860

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ঈশ্বরের আপন দেশ’-এ মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা হাতির। ঠাণ্ডা মাথায়, পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে মা হতে চলা হাতিটিকে, নির্মম এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন রতন টাটা। সঠিক বিচার এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিও করেছেন তিনি।

টুইটারে পোস্ট করে রতন টাটা লিখেছেন, “আমি মর্মাহত, স্তম্ভিত। একটি অবোলা, গর্ভবতী হাতিকে কীভাবে বিস্ফোরক ভর্তি আনারস খাওয়াতে পারে মানুষ! কতটা নিষ্ঠুর হতে পারলে এই কাজ করা যায়।” এমন অপরাধের কোনও ক্ষমা নেই। নিরীহ প্রাণীদের প্রতি এমন অপরাধমূলক আচরণ ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুনেরই মতো, বলেছেন প্রবীণ শিল্পপতি। এই অপরাধের যথাযোগ্য বিচারের দাবিও করেছেন তিনি।

কেরলের মল্লপুরমের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল গর্ভবতী হাতিটি। ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। বনবিভাগের কর্মীরা জানিয়েছেন, সম্ভবত খিদের জ্বালাতেই লোকালয়ে চলে এসেছিল হাতিটি। মানুষের কাছে খাবার পাবে এই বিশ্বাসই ছিল তার। এমন ভরসার জায়গা থেকেই বিপদ ঘনালো। বিস্ফোরক ঠাসা আনারস খেয়ে ফেলে মর্মান্তিক মৃত্যু হল মা হতে চলা হাতিটির।

রক্তাক্ত শুঁড়, ভাঙা চোয়াল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়িয়ে শেষে নদীর ঠাণ্ডা জলেই হয়তো আরাম খুঁজে পেয়েছিল। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত অবধি নদীর জলেই শুঁড় ডুবিয়ে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল তাকে। নদীর জলেই যন্ত্রণা ধুয়ে ফেলতে চেয়েছিল, মানুষের সংস্পর্শে আর আসেনি।

হাতি মৃত্যুর এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে দেশে। ধিক্কার আর নিন্দায় ভরে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল। এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের খুঁজে বার করার আশ্বাস দিয়েছে কেরল সরকার। ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

ঘটনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলছেন, এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় সরকার। টুইট করে তিনি বলেছেন, বাজি বা বিস্ফোরক খাইয়ে প্রাণী হত্যা ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে না। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে, প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে দেখা হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে অপরাধীরা।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, হাতিটি বিস্ফোরক ঠাসা আনারস খেয়েছিল মল্লপুরমে, কিন্তু তার মৃত্যু হয় পালাক্কাড়ে। রক্তাক্ত শুঁড়, ক্ষতবিক্ষত মুখ নিয়ে হাতিটি কয়েকদিন ছুটে বেড়িয়েছিল। শেষে পালাক্কাড়ের একটি নদীতে নেমে ঠায় দাঁড়িয়েছিল।

কেরলের বনকর্তারা বলছেন, জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে বুনো শুয়োর বা ওই জাতীয় বন্যপ্রাণীর উৎপাত কমাতে গ্রামের সীমানায় বিস্ফোরক বা বাজি ফর্তি ফল বা আনাজ রেখে টোপ দেয় গ্রামবাসীরা। এমন বোমা বা বিস্ফোরক তারা নিজেরাই তৈরি করে। এই ঘটনার মাস কয়েক আগেও একটি স্ত্রী হাতিকে রক্তাক্ত শুঁড়, ক্ষতবিক্ষত মুখে গ্রামের সীমানায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ওই হাতিটিরও চোয়াল ভাঙা ছিল। যার থেকে অনুমান করা যায়, সেই হাতিটিও এমন বিস্ফোরক ভর্তি কোনও ফল বা আনাজ খেয়ে ফেলেছিল।

ফরেস্ট অফিসার মোহন কৃষ্ণণ বলেছেন, মানুষের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে জলসমাধির পথ বেছে নিয়েছিল হাতিটি। তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেও গ্রামের একটি বাড়িরও ক্ষতি করেনি, একজন মানুষকেও জখম করেনি। এই ঘটনার কিনারা হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।

Previous articleঅন্তঃসত্ত্বা হাতি মৃত্যু তদন্তে নতুন মোড়
Next articleঅন্তঃসত্ত্বা হস্তিনী-মৃত্যুর ঘটনায় আটক স্থানীয় কৃষক,চলছে জেরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here